বরফের তীর ছুড়ছে যেন! জাড়ে জরজর জনজীবন

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

খনার বচনে মেলে ‘উন বর্ষায় দুনো শীত’। যে বছর বৃষ্টি বেশি, সে বছর শীত কম। খনার বচন ধরেই মুরুব্বিরা দিনপুঞ্জিকার হিসাব মেলাতেন। আর সেই খনার বচনও যেন এবার উল্টে যায় যায়! ভারি বর্ষণে ডুবলো দেশ। স্মরণকালের বন্যায় এবার ভাসিয়েছিল গ্রাম-নগর। টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হলো জনজীবন।

অথচ এমন বৃষ্টিও থামাতে পারলো না শীতের তীব্রতা। বৃষ্টি যা ভুগিয়েছিল, তা দ্বিগুণ বাড়িয়েছে টানা শৈত্যপ্রবাহ। যেন বরফের তীর ছুড়ছে। ঠান্ডার ঝাপটা ‘শেল’ হয়ে বিদছে শরীরে। আর তাতেই হিম হয়ে যাচ্ছে জনজীবন।

আবহাওয়া দফতরের ভাষ্য তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ৫ ডিগ্রির নিচে নামলেই তা শৈত্যপ্রবাহে রূপ নেই। এবারে নামতে নামতে তাপমাত্রা ২-এর ঘরেও ঠেকলো। উত্তরের জেলাগুলোয় ৩, ৪ ডিগ্রি তো ছিলই। ঘনকুয়াশা তো ঠান্ডা, কুয়াশা না থাকলেও ঠান্ডা। ঠান্ডা পড়ে বাতাস না থাকলেও, আর বাতাস থাকলে তা বাড়িয়ে দেয়। কোনো হিসেবই মিলছে না এবারের শীতবেলায়।

হাওয়া অফিস বলেছিল, দু’দিন পরেই তাপমাত্রা কমবে। কমেনি। সপ্তাহ গড়িয়েছে, আবহাওয়াবিদদের সে পূর্বাভাসের কথা। বরং আজ রোববার তীব্রতা আরও বেড়েছে। উত্তরের হিমেল হাওয়া ঝাঁকুনি দিয়ে কাঁপাচ্ছে রাজধানীকেও। যন্ত্রনগরের উত্তাপ উবে গেছে দুই সপ্তাহ আগে। শৈত্যপ্রবাহের এতদিন পরেও আজ এমন তাপমাত্রার নিম্নগামীতা! তা যেন হিসেবেই ধরছে না।

jagonews24

উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে এবারে ৫০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে শৈত্যপ্রবাহ। সূর্যের অপেক্ষা তীব্র হলেও উত্তরে তার দেখা মিলছে না। আকাশে মেঘ নাই, তবুও সূর্যের লুকোচুরি। মধ্যদুপুরে খানিক উঁকি দিলেও সে সূর্যে উত্তাপ থাকছে না। হিমালয় থেকে নেমে আসা বরফগলা হাওয়া কাঁপিয়ে তুলেছে উত্তরবঙ্গের জনপদ। স্থবির হয়ে পড়ছে অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা। চলমান শৈত্যপ্রবাহ রীতিমত দুর্যোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে সেখানে।

পঞ্চগড় থেকে ঢাকা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম। কোথাও বিরাম নেই শৈত্যপ্রবাহের। টানা শীতে দুর্যোগ নেমে এসেছে ‘দিন আনে দিন খায়’ গোছের মানুষদের জীবনে। উপযুক্ত শীতবস্ত্র না থাকা আর স্বল্পতম কর্মঘণ্টা কারণে অনেকেটাই দিশেহারা দুস্থ, অসহায় মানুষেরা।

রাজধানীতে প্রায় ৩০ বছর ধরে বাস করছেন মুজিবুর রহমান। আগে একটি বেসরকারি ফার্মে কাজ করলেও এখন সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। রোববার সন্ধ্যায় একেবারে জবুথবু হয়ে একটি ভবনের কোনায় দাঁড়িয়ে পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করছিলেন। বলেন, এমন শীত আমার জীবনেও দেখিনি। অন্য বছর শীতের তীব্রতা থাকে, কিন্তু টানা দুই সপ্তাহ ভোগায়নি। জীবন যায় যায় অবস্থা! আজ ঠান্ডা বাতাসে কাঁপছি সন্ধ্যার পর থেকেই।

কথা হয় উত্তরের জেলা নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বাসিন্দা আওলাদের সঙ্গে। বলেন, এখানে মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। কুয়াশার সঙ্গে বাতাস! শরীরের তাপমাত্রা কোনোভাবেই সে ঠান্ডাকে সামাল দিতে পারছে না। যেন হিমালয় থেকে বরফ নেমে এসেছে।