বরগুনা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনের সড়কে এক ছাত্র মারধরের অভিযোগ উঠেছে ওই কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি পোস্ট করেছেন ওই কলেজেরই উচ্চমাধ্যমিকে অধ্যয়নরত কয়েকজন শিক্ষার্থী।
ভিডিওতে দেখা যায়, সরকারি কলেজের সামনে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এ সময় অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘কালকে ইউনিফর্ম পড়ে তারপর আসবা, এ সময় এক শিক্ষার্থী কিছু একটা বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, ‘কোনো কথা নাই, ইউনিফর্ম বলছি আমি ইউনিফর্ম। সব চলে যাও বাসায় যাও! আবার দাঁড়ায়ে আছ কেন? সোজা বাসায় যাবা।’
এ সময় এক শিক্ষার্থীর বলেন, ‘একদিনের মধ্যে সব জোগাড় করে ক্যামনে!’ তখন অধ্যক্ষ বলেন, ছয় মাস আগে আমি বলছি, যাও বাসায় যাও। শিক্ষার্থীরা বাসায় যাওয়া শুরু করলে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্যার এটা বাড়াবাড়ি হয়ে যায়।’
এ কথা শুনেই অধ্যক্ষ হঠাৎ দৌড়ে ওই শিক্ষার্থীকে পেছন থেকে শার্ট ধরেন। এরপর ওই শিক্ষার্থীকে তিনি ধাক্কা মারতে মারতে সামনের দিকে নিয়ে যান।
ভিডিও পোস্ট করা বরগুনা সরকারি কলেজের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রথমে অধ্যক্ষ আতাউল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থীকে ধাক্কা ও চড় থাপ্পড় দিয়ে লাঞ্ছিত করেন।
পরে বিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রকে মারধর করার সময় ভিডিও ধারণ করে। শুধু মারধরই না, পরে ওই ছাত্রকে তিনি তাঁর কক্ষে নিয়ে গিয়ে কলেজে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগ এনে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ আসার পর সহপাঠীদের অনুরোধে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ধারণকৃত ভিডিওতে মারধরের শিকার ওই শিক্ষার্থীর বিষয়ে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে কয়েকজন শিক্ষার্থী নিশ্চিত করেছেন, মারধরের শিকার ওই শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগে ২য় বর্ষে পড়েন।
বরগুনা সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির বাণিজ্য বিভাগের ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত এক শিক্ষার্থী ভিডিওটি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘বরগুনা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছে।
একজন কলেজের প্রিন্সিপাল কীভাবে পারে রাস্তায় বসে ছাত্র ছাত্রীদের সাথে এমন দুর্ব্যবহার করতে। এর সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার চাই আমরা। এভাবে ছাত্রসমাজ অপমানিত হতে থাকলে এক সময় ছাত্রসমাজ বলতে কিছুই থাকবে না। সুস্থভাবে বাঁচতে চাই আমরা একটু দুর্নীতি মুক্ত কলেজ চাই।’
ওই শিক্ষার্থী জানান, ‘আমাদের সবারই কলেজ নির্ধারিত কালারের শার্ট পরা ছিল। কিন্তু কয়েকজনের ইউনিফর্মের নির্ধারিত রঙের প্যান্ট ছিল না। মূলত প্রিন্সিপাল স্যার ইসলামিয়া বস্ত্রালয়কে ইউনিফর্ম তৈরির জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছিলেন।
ওখানে দাম বেশি তাই অনেকেই বাইরে থেকে কলেজ নির্ধারিত রঙের ইউনিফর্ম তৈরি করেছে। এতেই খেপেছেন তিনি। কারণ, ওই দোকান থেকে আমরা ইউনিফর্ম তৈরি করলে তিনি কমিশন পেতেন।’
শিক্ষার্থীরা জানান, প্রথমে অধ্যক্ষের মারধরের শিকার শিক্ষার্থীর নাম আতাউল্লা। তিনি উচ্চমাধ্যমিকে বাণিজ্য বিভাগে অধ্যয়নরত। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আতাউল্লাহ বলেন, ‘সহপাঠী ও বাইরের লোকজনের সামনে প্রিন্সিপাল স্যার আমার গায়ে হাত তুলেছেন। এমনকি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দিয়েও লাঞ্ছিত করিয়েছেন। আমি তার আচরণে ব্যথিত।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ইউনিফর্মের জন্য শার্ট, প্যান্ট ও জুতো এবং ব্যাগের জন্য দোকান নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন অধ্যক্ষ মতিউর রহমান।
কিন্তু শিক্ষার্থীরা অনেকেই অপেক্ষাকৃত কম দামে অন্য দোকান থেকে এসব কিনেছেন। যে কারণে কমিশন না পেয়ে তিনি ক্ষিপ্ত। শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হওয়ার এটাই মূল কারণ।
বরগুনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের সঙ্গে শনিবার রাত ৮টার দিকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘মূলত কলেজের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও ডিসিপ্লিন বজায় রাখার জন্য আজ আমরা কলেজ গেটে দাঁড়াই। বহিরাগতদের শনাক্ত করতে শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম ও আইডি কার্ডের বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নিতে গেলে কিছু শিক্ষার্থী উচ্ছৃঙ্খল হয়ে মিছিল দিলে তাদের বাধা দিতে গিয়ে এমনটা হয়েছে।
পুলিশ ডাকা প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীকে ইউনিফর্ম পরিপূর্ণভাবে পড়ে কলেজে আসতে বলার জন্য রুমে ডাকা হয়, পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’ নির্দিষ্ট দোকান থেকে শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম বানানো ও ব্যাগ জুতো কেনা বাধ্যতামূলক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এমন কোনো নির্দেশ আমি দেইনি।’