বরগুনায় নিজের বিয়ে নিজেই বন্ধ করলো স্কুল ছাত্রী

:
: ৫ years ago

নিজের বিয়ে নিজেই বন্ধ করলো বরগুনার আমতলীর গুলিশাখালী ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্রী শিপ্রা। মেয়ের অমতে বাল্যবিয়ে দেয়ার প্রস্তুতির অপরাধে বাবা পুনিল চন্দ্র মিস্ত্রিকে তিন হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার। ঘটনা ঘটেছে সোমবার সকালে।

জানাগেছে, উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের গুলিশাখালী গ্রামের পুনিল চন্দ্র মিস্ত্রি কন্যা শিপ্রা গুলিশাখালী ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেনীতে অধ্যায়নরত। শিপ্রাকে না জানিয়ে গোপনে বাবা পুনিল চন্দ্র মিস্ত্রি মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতি নেয়। সোমবার বর পক্ষের লোকজন শিপ্রার বাড়ীতে আসার দিনক্ষন ঠিক হয়। শিপ্রা বাবার পছন্দের বিয়েতে রাজি হয়নি। গোপনে শিপ্রা নিজের বিয়ে বন্ধ করার জন্য আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সরোয়ার হোসেনকে খবর জানায়। খবর পেয়ে আমতলী ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার ঘটনাস্থলে যান। মেয়ের অমতে বাল্যবিয়ের প্রস্তুতির অপরাধে বাবা পুনিল চন্দ্র মিস্ত্রিকে তিন হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন।

পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাহসী শিপ্রাকে গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাড. নুরুল ইসলামের হেফাজতে রেখে আসেন। যতদিন পর্যন্ত শিপ্রার বিয়ের উপযুক্ত বয়স না হবে ততদিন পর্যন্ত চেয়ারম্যান তার দেখাশুনার দায়িত্ব নিয়েছেন।

সাহসী শিপ্রা বলেন, আমার এখন লেখাপড়া বয়স। এই বয়সে আমি আমার মূল্যবান জীবনটাতে অপাত্রে দান করতে পারবো না। বাবা আমার অমতে বিয়ের প্রস্তুতি নেয়। আমি জানতে পেরে বাবার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে বন্ধের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। তার গিয়ে আমার বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন।

বাবা পুনিল চন্দ্র মিস্ত্রি নিজের ভুলের কথা স্বীকার করে বলেন, আমার মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে উপযুক্ত পাত্রের কাছে বিয়ে দেব।

গুলিশাখালী ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, শিপ্রা আমার বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর মানবিক বিভাগের ছাত্রী। শিপ্রার সাহসীকতার জন্য আজ থেকে ওর লেখাপাড়ার যাবতীয় খরচ বিদ্যালয় বহন করবে।

গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাড. নুরুল ইসলাম শিক্ষার্থী শিপ্রার সাহসিকার প্রশংসা করে বলেন, যতদিন পর্যন্ত বিয়ের উপযুক্ত বয়স না হবে ততদিন পর্যন্ত আমার হেফাজতে রেখে ওর লেখাপড়া চালিয়ে নেব।

আমতলী ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার বলেন, শিপ্রা নিজের বিয়ে বন্ধের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে খবর দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিপ্রাকে বাল্যবিয়ে দেয়ার প্রস্তুতির অপরাধে বাবা পুনিল চন্দ্র মিস্ত্রিকে তিন হাজার টাকা জরিমান অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের নির্দেশ দিয়েছি।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সরোয়ার হোসেন বলেন, শিপ্রা নিজের বিয়ে বন্ধের জন্য আমার কাছে খবর দেয়। খবর পেয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পাঠিয়ে বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছি।