বরগুনায় চাঁদাবাজি ও হয়রানীর অভিযোগে ২ সাংবাদিক আটক

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

বরগুনায় নামসর্বস্ব গণমাধ্যমের সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদা দাবি ও হয়রানীর অভিযোগে আবুল হোসেন বেল্লাল ও নিয়ামুল হাসান নিয়াজ নামের দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। বেল্লাল সদর উপজেলার সাহেবের হাওলা গ্রামের মৃত খবির মুসুল্লীর এবং নিয়াজ আয়লা চান্দখালী এলকার আবদুল জব্বার হাওলাদের ছেলে।
বরগুনা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবদুল আলীম লিটন মে মাসের এই দু’জনের বিরুদ্ধে বরগুনা সদর থানায় চাঁদা দাবির একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার তাদের পুলিশ গ্রেফতার করে। আবদুল আলীম লিটনের অভিযোগ, বেল্লাল ও নিয়াজ চরম প্রতারক টাইপের লোক। দির্ঘদিন ধরে এরা বরগুন সদর উপজেলা ও বেতাগীর বিভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাঁদা দাবি করে আসছে।

গত ২মে বেল্লাল ও নিয়াজ তাঁর কাছে ১ লাখ টাকা দাবী করে। দাবিকৃত টাকা না দিলে নানা হয়রানি করা হবে বলে হুমকী দেয় এরা। পরে তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানিয়ে থানায় একটি অভিযোগ করেন। লিটন জানান, বেল্লাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপবৃত্তির তালিকা সংগ্রহ করে বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে হুমকী ধামকি দিয়ে চাঁদা দাবি করে। আর চাঁদা না দিলে তাদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা অপপ্রচার চালিয়ে হয়নারী করে। আমি শেষ পর্যন্ত থানা পুলিশের স্মরণাপন্ন হয়েছি। সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বেল্লাল নিজেকে ক্রাইম রিপোর্টার দাবি করে উপজেলা শিক্ষা অফিসে নুরিয়া সারকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপবৃত্তির তালিকা চায়। তালিকা না দেয়ায় তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে এবং ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তালিকা সরবরাহ করা হয়। এরপরই ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেনের কাছে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারি দু’জন শিক্ষা কর্মকর্তা , ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আপিল কমিশনে অভিযোগ দায়ের করে। একই প্রক্রিয়ায় তারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাঁদা দাবি ও হয়রানি শুরু করে।

এছাড়াও তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বনামধণ্য ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে অপপ্রচারেও অভিযোগ রয়েছে বেল্লাল ও নিয়াজের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক সভাপতির বিরুদ্ধে ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ও নারী শিশু সহায়তা নামের দুটি পেজ থেকে অপপ্রচার চালানো হয়। অনুসন্ধানের পর ফোন নম্বর বের করে নিয়াজের সাথে যোগাযোগ করেন ওই ছাত্রলীগ নেতা। পরে ভুল স্বীকার করে মুচলেকা দেয় নিয়াজ। অনলাইনের পত্রিকায় ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয়ে বেল্লাল ও নিয়াজ বিভিন্ন সময়ে সম্মানিত ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রনোদিত খবর রটিয়ে দেয়। এছাড়াও ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে বেল্লাল বিভিন্ন ব্যাক্তিবর্গের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। জেলা ছাত্রলীগের ওই সাবেক সভাপতি বলেন, এরা দির্ঘদিন ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সম্মানহানিকর লেখা পোষ্ট করে আসছে। এছাড়াও ফেসবুকে ভুয়া পেজ খুলে নিজেদের রিপোর্টার দাবি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ফন্দি ফিকির করেছে। আমাদের অজান্তে কত মানুষ হয়রাণির শিকার হয়েছে কে জানে। আমি চাই এদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হোক। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর বরগুনার সভাপতি আবদুর রব ফকির বলেন, বেল্লাল ও নিয়াজ সনাকের ইয়েস গ্রুপের সদস্য ছিল সে সুবাদের তারা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ’র সুযোগ পেয়ে সে সব তথ্য দিয়ে বিভিন্ন লোকজনকে হয়ারানি শুরু করে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ আসতে শুরু করায় আমরা বেল্লালকে বরখাস্ত করেছি। প্রতারকের শাস্তি আমাদের কাম্য। বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জেলা টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জাফর হোসেন বলেন, দির্ঘ দিন ধরে বেল্লাল নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করে আসছে আমাদের কাছে এমন অভিযোগ রয়েছে। আমরা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করবো, এদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হোক। আমরা অপঃপর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার আছি। বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক বিপিএম, পিপিএম বলেন, এদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও সাইবার অপরাধেও দু’জনের নাম আলোচিত। আমরা উভয় বিষয় খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবো।