বরগুনায় নৌকা জাদুঘর শুভ উদ্বোধন কাল

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহর পরিকল্পনায় জেলা প্রশাসন ভবনসংলগ্ন উকিল বারের পূর্ব পাশে ৭৮ শতাংশ জমিতে ৮১ দিনে জাদুঘরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীর উপলক্ষে ১৬৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের নৌকার আদলে নৌকা জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। একশত নৌকার মডেল নিয়ে নৌকা জাদুঘরের পরিকল্পনা করা হলেও আপাতত ৭৫টি নৌকা নিয়ে আগামীকাল ৩১ ডিসেম্বর বিকেল তিনটায় নৌকা জাদুঘরের উদ্বোধন হবে। দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে একটি বড় নৌকা। এর মূল ভবনটি ৭৫ ফুট গলুই ও ২৫ ফুট করে নৌকার পেটের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের নৌকার মডেল। বড় ছোট খাল-নদী-সাগরে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন বিবেচনায় নৌকার প্রকরণ রয়েছে জাদুঘরে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানিয়েছেন, কালের বিবর্তনে নৌকা এখন খাল-নদী-সাগরে তেমন দেখা না গেলেও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পেক্ষাপটে এক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে নৌকা। অবদান রেখেছে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে। যুক্তফ্রন্ট থেকে স্বাধীনতা এবং বর্তমান রাজনীতিতে প্রতীক হিসেবে নৌকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বরগুনা বরিশালের অংশ হিসেবে হাজার নদী খাল এমনকি সংশ্লিষ্ট সাগরে এক সময় নৌকার আধিপত্য ছিল। যদিও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ও স্পিডবোট বের হয়েছে, যা ধীরগতির নৌকার দ্রুত গমন উপযোগী সংস্করণ। এক সময় নৌকা শুধু যানবাহনই নয়, মালামাল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আনা নেয়া, সুন্দরবন থেকে কাঠ সংগ্রহ, নদী সাগরে মৎস্য শিকারসহ বহুল কাজে ব্যবহার হতো। এখন পেশা হারিয়ে বেকার হয়েছে হাজার হাজার মাঝিমাল্লা। এখন তাদের কেউ খোঁজও নেয় না। এমনকি নৌকা নিয়ে গবেষণা বা এর সংরক্ষণে এ যাবতকাল কোথাও তেমন কোনও পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সে শুন্যতা পূরণে বরগুনার নৌকা জাদুঘর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে জেলা প্রশাসন।

নৌকা এবং নদী নিয়ে বাংলার মানুষের যে রূপকথা তা চিরন্তন। যদিও বাংলার সেই চিরন্তন ঐতিহ্য এখন আর নেই। খালগুলো গেছে শুকিয়ে গেছে, নদী গেছে ভরাট হয়ে। ধীরগতির নৌকার বদলে তৈরি হয়েছে দ্রুতগতির ট্রলার এবং ইঞ্জিনচালিত যানবাহন। নাইওর নিতে এখন আর পানসি বা একমালই কেরায়া নৌকা নদীর ঘাটে আসে না।

বরগুনা-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু জানিয়েছেন, পৃথিবীর আদিকালে জঙ্গলে পড়ে যাওয়া গাছ পেড়িয়ে খাল পাড় হওয়ার চিন্তা থেকে আসে সাঁকো তৈরির কথা। সাঁকো বা সেতুর পর ভাসমান কাঠ দেখে চিন্তা আসে ভেলা ও নৌকার। সাঁকো দিয়ে খাল পাড় হওয়া যায়, কিন্তু নৌকা দিয়ে নদী পথে যেদিক খুশি সেদিকে যাওয়া যায়। নৌকার আগে আসে ভেলার চিন্তা। নৌকা পৃথিবীর আদি যানবাহন হিসেবে মানবসভ্যতা বিকাশে সহায়তা করে। সুযোগ সুবিধা এবং ব্যবহারের উপযোগিতার কথা চিন্তা করে নৌকার প্রকরণ তৈরি হয়। সারা পৃথিবীতে শত প্রকারের নৌকা ছিল এক সময়। বাংলাদেশেও এক সময় বিভিন্ন প্রকারের নৌকা চলতো এলাকা ও নৌপথ ভেদে।

বরগুনা জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান বলেন, বরগুনা নামের সাথেও জড়িয়ে আছে নৌকা। বরগুনা নামের উৎপত্তি হয়েছে বরগুন বা অনুকূল প্রবাহকে নিয়ে। উত্তরাঞ্চল থেকে বাওয়ালীরা সুন্দরবনে কাঠ কাটতে আসা এবং ফিরে যাবার জন্য অনুক‚ল প্রবাহ বা বড় গোনের জন্য অপেক্ষা করত খাকদোন নদীর তীরে বিষখালীর মোহনার কাছে। বড়গোনের জন্য এই অপেক্ষার স্থানের নামই এক সময় বরগুনা হয়ে যায়। বড় নৌকা, বড় গোন, লগি, বৈঠা, পাল এলাকার মানুষের কাছে অতি পরিচিত উপকরণ ছিল।

গেলো ৮ অক্টোবর বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির পাশে পুরানো পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার ড. অমিতাভ সরকার। আগামীকাল বরগুনা-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর নৌকা জাদুঘরের উদ্বোধনের কথা রয়েছে।