বন্দীর সংখ্যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ: বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে টাকায় মেলে হাসপাতালের সব সুবিধা!

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দী ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৬৩৩ জন। কিন্তু সেখানে বর্তমানে আটক আছেন এক হাজারেরও বেশি। ফলে কারাগারে মানবেতর দিন কাটছে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী এবং হাজতিদের।

জানা গেছে, ‘১৮২৯ সালে শহরের প্রাণকেন্দ্র সদর রোড, লাইন রোড, বাজার রোড এলাকা মিলিয়ে মোট ২১ একরেরও বেশি জমিতে স্থাপিত হয় বরিশাল জেলা কারাগার। এরমধ্যে ৯.৬ একর কারাগারের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে ১১ একরের কিছু বেশি। ১৯৯৭ সালের ৩ মার্চ এটিকে কেন্দ্রীয় কারাগার হিসেবে উন্নীত করে সরকার।

কারা কর্র্তৃপক্ষ জানিয়েছে ‘৬৩৩ জন বন্দী ধারণক্ষমতার বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে ৫৮ শয্যার একটি হাসপাতাল, পাঁচটি বন্দী ভবন, ১২টি সেল এবং একটি লাইব্রেরি রয়েছে। সবশেষ (২৭ ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী) কারাগারে এক হাজার ৯ জন বন্দী রয়েছেন। যার মধ্যে নারী ৩৩ এবং বাকী ৯৭৬ জন পুরুষ।

এদিকে, বন্দীর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় কারাগারের ভেতরে চলছে রমরমা বাণিজ্য। অভিযোগ রয়েছে, কারারক্ষীদের টাকা দিলে মেলে নানা সুযোগ-সুবিধা। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে রাতে ঘুমাতেও পারেন না অনেক বন্দী।

সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পাওয়া এক বন্দী বলেন, ‘কারাগারের ভেতরে নির্ধারিত কিছু ওয়ার্ডে হাজতিদের থাকতে হয়। এরমধ্যে চন্দ্রদীপ ১-৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৭০ জন ধারণ ক্ষমতার কক্ষে থাকতে হচ্ছে একশ জনের বেশী। কীর্তনখোলা ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডটি ৯০ জনের থাকার উপযোগী। কিন্তু সেখানে থাকতে হয় প্রায় দেড়শ জন। এছাড়া ধাঁনসিঁড়ি ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডে ৪০ জনের জয়গায় থাকতে হচ্ছে ৭০ জনেরও বেশি। পাশাপাশি রূপসী, আমদানি, কিশোর, ডিভিশন এবং মহিলা ওয়ার্ডগুলোর অবস্থাও একই রকম বলে জানান তিনি।

কারাগার থেকে জামিনে বের হওয়া হাজতিরা অভিযোগ করে বলেন, ‘বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে “রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ” এই নীতিবাক্য লেখা থাকলেও বাস্তবে ঘটছে উল্টো। সেখানে টাকার বিনিময় সবকিছুই মেলে। আর যার টাকা নেই তার দুর্ভাগের শেষ নেই।

তারা আরো জানান, কারাগারের ক্যান্টিনের ভয়াবহ দুর্নীতি সিনেমাকেও হার মানায়। তাছাড়া স্বজনরা কারাগারে খাবার এবং টাকা দিয়ে আসলেও সঠিক ভাবে হাজতিদের বুঝিয়ে দেয় না কারারক্ষীরা।

ভুক্তভোগীরা বলেন, কারাগারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা হাসপাতাল। টাকার বিনিময়ে কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে সেখানে আরামে দিন কাটান অনেকে। যে কারণে ৫৮ শয্যার হাসপাতালে বন্দী থাকে একশরও বেশি।

সদ্য জামিনে মুক্তি পাওয়া যুবদলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রাজনীতি করায় গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার কারাগারে থাকার অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। সেখানে চিকিৎসা, ঘুম, খাবারসহ সব কিছুতেই কষ্টে থাকতে হয় তাদের। এমনকি সৌচাগারের ব্যবস্থাও অপর্যাপ্ত। ব্যবহারের জন্য মোট ১২৪টি টয়লেট থাকলেও রাতে ৪৭টি টয়লেট ব্যবহার করতে দেয়া হয়। টাকা দিলে সব পাওয়া যায়।

তবে কারাগারে স্থান সংকটের কথা স্বীকার করলেও ভেতরে অনিয়মের অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার নুর-ই-আলম সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, দৈনিক কতজন নতুন বন্দী আসবে, তা নিশ্চিত বলা যায় না। দেশব্যাপি মৎস্য অভিযান কিংবা রাজনৈতিক সহিংসতা হলে বন্দীর সংখ্যা বেড়ে যায়।

এ বিষয়ে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায়ের সাথে কথা বলতে গেলে ব্যস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে যান তিনি।