সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। স্ত্রী ফরিদা হকের কবরের পাশে সামহিত করা হয়েছে তাকে। দীর্ঘ ৬০ বছরেরও বেশি সময়ের কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতির সামনে শনিবার (২৪ অক্টোবর) দুপুর ২টায় জানাজা শেষে মরদেহ বনানী কবরস্থানে নেয়া হয়। পরে সেখানে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে ঢাকার আদ-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালে মারা যান ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। সকাল সাড়ে ১০টায় হাসপাতাল সংলগ্ন মসজিদে ব্যারিস্টার রফিকের প্রথম জানাজার পর মরদেহ পল্টনের বাড়িতে নেয়া হয়।
সেখান থেকে মরদেহে নেয়া হয় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। বাদ জোহর সেখানে দ্বিতীয় জানাজার পর মরদেহ নেয়া হয় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। সুপ্রিম কোর্টে তার তৃতীয় ও সর্বশেষ জানাজায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরুসহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, আইনজীবীরা অংশ নেন।
জানাজা শেষে রফিকুল ইসলামের কফিনে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয়া হয়। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতি, সুপ্রিম কোর্ট বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরম, আইনজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানায়। এরপর বনানী কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, ফুসফুসের সংক্রমণসহ নানা জটিলতায় গত ১৫ অক্টোবর ঢাকার আদ-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি হন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। এর মধ্যে তার স্ট্রোকও হয়েছিল। গত ১৭ অক্টোবর থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।
রফিক-উল হকের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে। বাবা মুমিন-উল হক পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। তার বাল্যকাল কেটেছে কলকাতায়। পড়াশোনা করেছেন চেতলা স্কুলে। ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন ১৯৫১ সালে। ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ১৯৫৭ সালে দর্শন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়ার পর ১৯৫৮ সালে এলএলবি করেন। এরপর ১৯৬০ সালে কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশায় যোগ দেন তিনি।
ইংল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে তৎকালীন পাকিস্তানের নাগরিক হয়ে চলে আসেন ঢাকায়। ১৯৬২ সালে ঢাকা হাইকোর্টে আইন পেশায় যুক্ত হন।
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৫ সালে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। এছাড়া রফিকুল হক ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল ও বার কাউন্সিল ইলেকশন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯০ সালে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল করা হয় তাকে। তখনই তিনি পদাধিকারবলে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হন। এ সময় তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও প্রতিনিধিত্ব করেন।
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অনেক রাজনীতিবিদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াই করে আলোচনায় ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক। ব্যারিস্টার রফিক বিভিন্ন সময় ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
সমাজ ও মানবতার সেবায় তিনি ছিলেন সবসময়ই উদারহস্ত। মসজিদ মাদরাসা ও হাসপাতাল যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সমাজ-মানবতার সেবায়। ১৯৯৫ সালে রফিক-উল হক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সুবর্ণ ক্লিনিক, ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা ছিল তার। আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ২৫টিরও বেশি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন তিনি।