 
     সাগর ও নদীর মিতালী এবং সবুজে আচ্ছাদিত ম্যানগ্রোভ বনের দারুণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মেলবন্ধনে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরি-মুকরি হয়ে উঠছে দেশের পর্যটনের নতুন ‘হট স্পট’। প্রতিনিয়ত পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে এই এলাকা। সাগরের বিশাল বুকে ঢেউয়ের উন্মাদনা, সূর্যোদয়, সমুদ্র সৈকত, লাল কাঁকড়া, বনের হরিণ আর নানা প্রজাতির পশু-পাখির সমারোহ যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কম্বো প্যাকেজ’। দিন দিন ভ্রমণপিপাসুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা চর কুকরি-মুকরিকে বিশ্ব জীববৈচিত্র্যের নিরাপদ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন)।
সাগর ও নদীর মিতালী এবং সবুজে আচ্ছাদিত ম্যানগ্রোভ বনের দারুণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মেলবন্ধনে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরি-মুকরি হয়ে উঠছে দেশের পর্যটনের নতুন ‘হট স্পট’। প্রতিনিয়ত পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে এই এলাকা। সাগরের বিশাল বুকে ঢেউয়ের উন্মাদনা, সূর্যোদয়, সমুদ্র সৈকত, লাল কাঁকড়া, বনের হরিণ আর নানা প্রজাতির পশু-পাখির সমারোহ যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কম্বো প্যাকেজ’। দিন দিন ভ্রমণপিপাসুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা চর কুকরি-মুকরিকে বিশ্ব জীববৈচিত্র্যের নিরাপদ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন)।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, যে চর কুকরি-মুকরি এক সময়ে ছিল দুর্গম এলাকা, আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পিত উন্নয়নে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের ফলে এই এলাকা চলে এসেছে হাতের নাগালে। খুব সহজেহ দর্শনার্থীরা এখানে আসতে পারছেন। পর্যটকদের জন্য নতুন রূপে সাজানো হয়েছে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চর কুকরি-মুকরি। যুক্ত করা হয়েছে রেস্ট হাউজ, বনের মাঝে ঝুলন্ত সেতু, জিপ ট্রাকিং, রেস্টিং বেঞ্চসহ নানা প্রকল্প। এসব প্রকল্পে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো মানুষের। একপাশে সমুদ্র, আরেক পাশে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। দিগন্তবিস্তৃত অপরূপ এ দৃশ্য দেখা যায় ‘কুইন আইল্যান্ড অব বেঙ্গল’ নামে পরিচিত ভোলার চর কুকরি-মুকরিতে। নয়নাভিরাম নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে উপজীব্য করে এখানে গড়ে উঠতে পারে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম পর্যটন কেন্দ্র, যা থেকে সরকার আয় করতে পারে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। এর জন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। কেননা, এখানে রয়েছে কক্সবাজার ও কুয়াকাটার মতো দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত আর সুন্দরবনের গভীর অরণ্য, যা পর্যটক আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চার দশক আগেও দ্বীপটিতে তেমন জনবসতি ছিল না। এখন চরটিতে জনসংখ্যা প্রায় ২৬ হাজার। পর্যটকদের জন্য রয়েছে পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, আম্ব্রেলা শেড, আরসিসি বেঞ্চসহ বিভিন্ন স্থাপনা। সাবমেরনি ক্যাবলের মাধ্যমে চলছে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ। নিরাপত্তার জন্য রয়েছে একটি পুলিশ ক্যাম্প।
আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর এ দ্বীপের উন্নতি শুরু হয়, জানিয়ে স্থানীয় জেলে কুদ্দুস মিয়া বলেন, একসময় এখোনে কেউ আসত না। এখন দূর-দূরান্ত থেকে লোক আসে, এখানে থাকে। ইকো পার্ক তৈরি হয়েছে। কয়েক বছরে এই এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। অনেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। এখন তারা পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।
জানতে চাইলে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সালেক মূহিদ বলেন, এই এলাকার মানুষের পেশা মূলত মৎস আহরণ। ইকো পার্কের কারনে এখানকার মানুষের অন্য উপার্জনের সুযোগ হয়েছে। পর্যটন বিকাশে এই ইকো পার্ক বা এই অঞ্চলের সম্ভাবনা রয়েছে অনেক। পর্যটনের যে সম্ভাবনা এখানে রয়ছে, সেটি যদি কাজে লাগানো যায়, তাহলে এখানে মানুষের কর্মসংস্থানের আরেকটি উৎস তৈরি হবে এবং এলাকার অর্থনীতি গতিশীল হবে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে চর কুকরি-মুকরির অবস্থান। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে জেগে ওঠা এ চরকে স্থানীয়রা ‘দ্বীপকন্যা’ নামে ডাকেন। চর কুকরি-মুকরি ইউনিয়নটি বাবুগঞ্জ, নবীনগর, রসুলপুর, আমিনপুর, শাহবাজপুর, মুসলিমপাড়া, চর পাতিলা ও শরীফপাড়া নিয়ে গঠিত। এখানকার ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, বন্যপ্রাণী আর সমুদ্র সৈকত ঘিরে সৌন্দর্যের এক বর্ণিল উপস্থিতি প্রকৃতিপ্রেমী আর পর্যটকদের হাতছানি দেয়।
স্থানীয়রা জানান, চর কুকরি-মুকরির বনে রয়েছে ১৫ হাজারের বেশি হরিণ। এছাড়াও রয়েছে অতিথি পাখি, লাল কাঁকড়া, বুনো মহিষ, বানর, বনবিড়াল, উদবিড়াল, শেয়াল, বনমোরগসহ নানা প্রজাতির প্রাণী। রয়েছে প্রায় ২০৯ প্রজাতির পাখি। এখানকার ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা যেন আরেক সুন্দরবন। রয়েছে ২৭২ প্রজাতির গাছ। এর মধ্যে কেওড়া, ছৈলা, গাওয়া, গোলপাতা, সুন্দরী অন্যতম। কেওড়া গাছ সবচেয়ে বেশি। বালুকাময় প্রান্তরে বেসরকারি উদ্যোগে পর্যটকদের জন্য চেয়ার ও ছাতার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও বনের ভিতরে ঘোরার জন্য রয়েছে ছোট ছোট নৌকা। বন বিভাগের পক্ষ থেকে পাখি দেখার জন্য রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। বিশুদ্ধ পানির জন্য নলকূপ ও টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভোলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) আরিফুজ্জামান বলেন, ভোলা জেলার এই চর কুকরি-মুকরির পর্যটনের হট স্পট হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশে পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে যে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, তাতে ভোলা জেলায় পর্যটনের বিকাশে সহায়ক কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত আছে। আমরা চাই, ভোলা জেলায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা পর্যটনের উৎসগুলো আরো পরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নয়ন করে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে। দেশি-বিদেশি পর্যটক আসবেন এখানে। এটি করা হলে এই জেলার অর্থনীতি যেমন শক্তিশালী হবে, সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
স্থানীয় হাশেম জোয়ার্দার জানান, শীতকালে মোহনীয় হয়ে ওঠে চর কুকরি-মুকরি। এ মৌসুম এখানে আসার সবচেয়ে আদর্শ সময়। তখন অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত থাকে পুরো বন। তাদের আগমনে চরাঞ্চলগুলো যেন নতুন রূপ ধারণ করে। এ উপজেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আরো অনেক চর রয়েছে। যেসব চরে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা দেখছে এই অঞ্চলের মানুষ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শীত মৌসুমে বাংলাদেশে প্রায় ১৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ভোলায় অবস্থান করে। তখন স্বপ্নের দ্বীপ চর কুকরি-মুকরি অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চর কুকরি-মুকরিতে অবস্থান নিয়ে দেখা গেছে, চর কুকরি-মুকরিতে জোয়ার ভাটার খেলা হয়। জোয়ারের সময় বনের অনেক অংশ তলিয়ে যায়। আবার ভাটার সময়ে পানি নেমে যায়। পুরো বনের সঙ্গে সুন্দরবনের মিল পাওয়া যায়। এই বনও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। বনের ঠিক কাছেই আছে ওয়াচ টাওয়ার। এখান থেকে দাঁড়িয়ে সমুদ্র আর সবুজের মিতালী দেখা যায়।
ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে আমি এটা উপলব্ধি করেছি যে, পর্যটন শিল্পের বিকাশ একটি দেশকে এগিয়ে নিতে পারে। আমার স্বপ্ন ছিল—এই চরকে ফ্যাশন নগরী হিসেবে গড়ে তুলব। সেই ভাবনা থেকে ব্যতিক্রম কিছু কাজ করতে চেয়েছি, যা দেশ-বিদেশের মানুষকে আকৃষ্ট করবে। কারণ, পর্যটন শিল্পের বিকাশ ছাড়া সম্মান, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সম্ভব নয়। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে চরফ্যাশনের পর্যটন বিকাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কাজ করছি। নিকট ভবিষ্যতে এই জেলা হবে পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় স্থান। ভোলা-বরিশাল সেতু হলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com