বঙ্গবাজারে সিন্ডিকেটের প্রতিবাদ করায় দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা

লেখক:
প্রকাশ: ৩ মাস আগে

রাজধানীর বঙ্গবাজারে হামলার শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূইয়া ও জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক নাহিদ হাসান। তাদের দোকানে ডেকে নিয়ে কাউন্সিলর চামেলীর অনুসারীরা হাতুড়ি, রড, জিআই পাইপ দিয়ে হামলা চালায় অভিযোগ করেন তারা। হামলায় এক শিক্ষার্থীর আঙুল কেটে ফেলা হয়েছে এবং এক ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। গুরুতর অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবাজারের বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটের দোতলায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, শাহবাগ থানার ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোকসানা ইসলাম চামেলীর স্বামী আবুল হোসেন টেবু, বিএনপির পদপ্রত্যাশী নেতা রফিকুল ইসলাম স্বপন ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ ইউসুফ।

 

সাংবাদিক আল সাদী ভূইয়াকে কক্ষের মেঝেতে ফেলে মাথায় পিঠে, কোমরে, পায়ে উপর্যুপরি আঘাত করা হয়। তার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অন্যদিকে সাংবাদিক নাহিদকে দোতলায় মারধরের পর ছাদে তুলে পেটানো হয়। তিনি বাম পায়ে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। অন্যদিকে এক শিক্ষার্থীর ডানহাতের একটি আঙুলের অগ্রভাগ কেটে ফেলা হয়। মারধরের একপর্যায়ে আল সাদীর মোবাইল ছিনতাই করে আক্রমণকারীরা। অন্যদিলে নাহিদের মোবাইল, মানিব্যাগ, বাইকের চাবি, প্রেস আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

ঘটনার বর্ণানা দিয়ে সাংবাদিক আল সাদী ভুঁইয়া বলেন, আমি ও আমার সাবেক কলিগ নাহিদ ভাই বঙ্গবাজারে বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটে পোশাক কিনতে গিয়েছিলাম। তখন মার্কেটের মালিকপক্ষের কেউ আমাদের চিনতে পেরে বলে, সজল ভাই ওপরে আছেন। তখন আমরা ওপরে গিয়ে দেখি একটা পক্ষ দরজা ভাঙচুর করছে। তারা মার্কেটের অন্যপক্ষের লোক। তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন কাউন্সিলর চামেলীর ভাই স্বপন ও স্বামী টেবু।

তিনি বলেন, আমরা যখন সজল ভাইয়ের অফিসে যাই তখন টেবু ও স্বপনের নেতৃত্বে উপস্থিত আমাদের সবার ওপর হামলা করা হয়। আমরা সিন্ডিকেটের প্রতিবাদ করায় আমাদের ওপর তারা হামলা করে। এমনকি আমরা সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও আমাদের ওপর বেশি হামলা করে। বের হয়ে আমরা পুলিশ নিয়ে আসি। পুলিশের সামনেও তারা আমাদের মারার চেষ্টা করে কিন্তু পুলিশ আমাদের কোনো সাহায্য করেনি।

সাংবাদিক নাহিদ বলেন, আমাদের মার্কেটের গেট ভেঙে হামলা করেছে। সাংবাদিক পরিচয় দিয়েছিলাম তবুও ছাত্রলীগ বলে পিটিয়েছে আমাদের। আমার ফোন মানিব্যাগ এবং আইডি কার্ড সব নিয়ে গেছে তারা।

তিনি বলেন, পরে রুম থেকে বের করে এনে ছাদে নিয়ে গিয়ে দেশীয় অস্ত্র ও জিআই পাইপ দিয়ে আবার মেরেছে। একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। তাদের কাছে পানি চেয়েছি কিন্তু পানি পর্যন্ত দেয়নি তারা। তারা বলছিল, আমাকে পানি দিলে আমি নাকি আবার সুস্থ হয়ে যাবো- এই বলে সমস্ত শরীরে আঘাত করেছে।

নাহিদ বলেন, দুর্বৃত্তদের মধ্যে একজন বলছিল, এ জ্ঞান হারানোর অভিনয় করছে, একে আবার মারা হোক, এই বলে তৃতীয় ধাপে আবার মারপিট করছে। তারা আমার মানিব্যাগ, প্রেসের কার্ড, আইডি কার্ড নিয়ে যাওয়ার সময় বলছিল, এগুলো স্বপন ভাইয়ের কাছে জমা দেবো। স্বপন হলো বিএনপির নেতা।

মার্কেটের ব্যবসায়ী বাঁধন বলেন, এই মার্কেটে আমার দোকান আছে। আমি মালিকের (সজলের) সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম তখন মালিকের আরেক পক্ষ যারা আওয়ামী লীগ করতো তারা দরজা ভেঙে আমাদের ওপর হামলা করে। প্রাণ বাঁচাতে আমরা কয়েকজন বাথরুমে অবস্থান নিলে তারা দরজা ভেঙে হাতুড়ি, রড, জিআই পাইপ দিয়ে হামলা করে।

তিনি বলেন, টেবু আওয়ামী লীগ করে। তার শেল্টারে তার আপন ভাই ইউসুফ এতদিন ব্যবসা করে আসছে। সে বিএনপিতে নাম লিখিয়ে রাখছে যেন বিএনপি ক্ষমতায় একটা পজিশন তৈরি করতে পারে। তারা একজন আওয়ামী লীগ করে আরেকজন বিএনপি করে। তারা একে অপরকে রক্ষা করে।

ঘটনার একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। তারা সেখানে সাংবাদিকদের রক্ষা করতে পুলিশকে আহ্বান জানান।

 

সারজিস আলম বলেন, আমরা আজ সাংবাদিকসহ অন্যদের ওপর বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। এই সিন্ডিকেট যারা আজ সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা করেছে তাদের আমরা ছাড় দেবো না। আজকের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ ছাত্র-জনতা তাদের শক্তহাতে প্রতিহত করবে।