প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা ও জেল হত্যা মামলার অনেক কিছুই তদন্ত ও প্রসিকিউশনে উঠে আসেনি, অনেক ভুলও ছিল। বিষয়গুলো একদিন আমি লিখে সবকিছু প্রকাশ করে যাব।
তিনি বলেন, মামলা দুটির বিচার থেকে শুরু করে রিভিউ পর্যন্ত আমি ছিলাম। ওই দুই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র ক্যান্টনমেন্ট থেকেই হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ‘জুডিশিয়াল ইন্টারপ্রিটেশন’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, শোকের মাস চলছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে ব্যথিত হয়েছি। বাচ্চা ছেলে রাসেলকেও (শেখ রাসেল) নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটি পশুর থেকেও…
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্তেও প্রসিকিউশনে অনেক ত্রুটি ছিল। বিচারপতি হওয়ায় তা বলতে পারিনি। এ নিয়ে আমি ভবিষ্যতে কিছু লেখার চেষ্টা করছি। জেল হত্যা মামলা ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা নিয়ে লিখব। মামলা দুটিতে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ছিল। ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেই ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, এটা শোকের মাস, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারকে এই মাসে ১৫ আগস্ট কয়েকজন বিপথগামী লোক নৃসংশভাবে হত্যা করেছিল। আমি এই মামলার শেষ রায় এবং রিভিউ আমার হাতে নিষ্পত্তি করেছি। আমি যখন মামলার শুরু করি তখন এত কষ্ট লাগল। এই মামলাতে অনেক কিছু ছিল। একটা বাচ্চা ছেলে রাসেল তাকে কেন হত্যা করা হয়েছিল? এটা পশুর চেয়েও জঘন্য। কিন্তু এর নথি যখন পর্যালোচনা করলাম, যেহেতু এটা ফাইনাল কোর্ট, আমরা দেখলাম অনেক ত্রুটি ছিল এই মামলায়। যেরকম ইনভেস্টিগেশনের ত্রুটি ছিল, সেরকম প্রসিকিউশনের ত্রুটি ছিল।
তিনি আরও বলেন, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সঙ্গে জেলহত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতি ছিল। এ উভয় মামলায়ই বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট রায় তারা গ্রহণ না করে এ দুটি ঘটনাকে “ক্রিমিনাল কন্সপিরেসি” হিসেবে রায় দিয়েছেন। মামলায় মাত্র ১৫/১৬ জনের বিচার হয়েছে। দুই ঘটনায়ই অনেকেকে বিচারের আওতায় আনা যায়নি শুধুমাত্র মামলা সংক্রান্ত নানা দুর্বলতার কারণে।
তিনি আরও বলেন, ষড়যন্ত্রে যারা ছিল তারা সবাই দায়ী। তারা ওই রাতে ষড়যন্ত্র করেছে, মার্চ করেছে। আমি লিখে যাব। দেখিয়ে যাব কারা কারা ছিল (ষড়যন্ত্রকারী)। সেনাবাহিনীর অনেকেই ছিল, পরে সুযোগ নিয়ে চলে গেছে (দেশের বাইরে)। ওসব লিখে যাব।
ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনাদের কাছে আমার আবেদন, আমাকে মিসকোট (ভুল ব্যাখ্যা) করবেন না। এতে আমাকে বিব্রত হতে হয়।
‘আমার পক্ষে প্রেস কনফারেন্স করে কোনো কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে বিচারক হিসেবে কোনো মামলার শুনানির সময় আইনজীবীকে প্রশ্ন করতেই পারি। এটি আমার স্বাধীনতা। প্রশ্নটি কী কারণে এবং কোন উদ্দেশ্যে করা, সেটি না বুঝে এটি (উদ্ধৃতি) করায় অনেক সময় ভুলভ্রান্তি হয়। এটি একটু খেয়াল রাখবেন’- যোগ করেন প্রধান বিচারপতি।
আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা গরিব-অসহায় আইনপ্রত্যাশীদের কাছে আইনের ন্যায্য সুবিধা পৌঁছে দেবেন।
বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ছাত্র জীবনে অনেকেই অনেক ধরনের রাজনীতি করেছেন। কিন্তু বিচারপতি হওয়ার পর আপনারা অতীত ভুলে যাবেন। সঠিক বিচারের চেষ্টা করবেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ড. কামাল হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ অন্যান্য আইনজীবী।