বক্সার এখন ডিফেন্ডার

:
: ৬ years ago

আশির দশকের কথা, বুয়েনাস আয়ার্সের ছোট্ট শহর এল তালারে তখন বক্সারদের দারুণ কদর। স্থানীয় পর্যায়ে প্রায় সময়ই আয়োজন হতো বক্সিং প্রতিযোগিতা। পাড়ার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্র এ নিয়ে বেশ আলোচনা। তাতে করে উঠতি বয়সের তরুণরা এটাকে সাদরে গ্রহণ করতেন। পরিবার থেকেও নাকি মিলে যেত ইতিবাচক সাড়া। কথিত ফুটবলের নগরীতে এমন দৃশ্য হয়তো এই সময় এসে কল্পনা করাও দুরূহ। কিন্তু আজ থেকে ত্রিশ বছর পেছনে তাকালে একেবারে অসম্ভব বলেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

এল তালারের কথায় আসি, আর্জেন্টিনার শান্ত স্নিগ্ধ শহরের একটি। মাত্র ৪৩ হাজারের মতো মানুষের বসবাস এখানটায়। সেখানেই ১৯৮৮ সালে জন্ম নেন আজকের আর্জেন্টাইন তারকা নিকোলাস ওটামেন্ডি। ছোটবেলা থেকেই মারপিটে পটু। বন্ধুরা মজা করেই তাকে ডাকতেন ‘দ্য জেনারেল’ বলে। গ্রামের প্রতিটি মহল্লায় দাপিয়ে বেড়াতেন সেই জেনারেল সাহেব। বাবা-মায়ের অতি আদরের হলে যা হয়, ছেলের অনেক কিছুই মুখ বুজে সহ্য করতেন তারা। দিন-রাত তাকে নিয়ে নালিশ আসত। তাতেও যেন কমত না বাবা-মার স্নেহ।

অবশ্য দুষ্টুমির মাঝেও ওটামেন্ডি ছিলেন খুবই বিচক্ষণ আর বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। যেহেতু গ্রামে তখন বক্সারদের নামডাক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ওটামেন্ডিও অন্য পথের যাত্রী হননি। উঠে পড়েন বক্সারদের ট্রেনে। শৈশবের প্রথম প্রহরটা বক্সিং দেখেই কাটান। তবে পাশাপাশি আরেকটা কাজ তিনি সহায়ক হিসেবে নিয়েছেন। সেটা হলো ফুটবল। সাতসকালেই বন্ধুদের নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। স্থানীয় একটি বক্সিং রিংয়ে বক্সারদের লড়াইটা দেখে ভীষণ মজা পেতেন। খেলা দেখে আসার পরও তার চোখেমুখে লেগে থাকত সেই ছায়া। বাড়িতে ফিরে কখনও মায়ের সঙ্গে আবার কখনও ভাইয়ের সঙ্গে চুটিয়ে গল্প করতেন।

 

আর সেই গল্পের আড়ালে নিজেকেও তাদের জায়গায় কল্পনা করতেন। ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা। তরুণ ওটামেন্ডিও বক্সার বিষয়ে আরও বেশি পেকে যান। আয়ত্ত করে ফেলেন নানা কৌশল আর প্রতিপক্ষ বধের তন্ত্রমন্ত্র। একবার ম্যাচ দেখতে গিয়ে এক বক্সারকে খুব কাছাকাছি পেয়ে যান ওটামেন্ডি। তার সঙ্গে ছবি তোলার পর কী যে খুশি! বোধ হয় আকাশের তারা হাতে পেয়েছেন। একটা সময় এলো, তালার শহরের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সেখানে নিজ গ্রামের হয়ে খেলতে যান ওটামেন্ডি।

প্রথমবারেই বাজিমাত। বয়সভিত্তিক ওই বক্সিংয়ে দ্বিতীয় স্থান লুফে নেন তিনি। এরপর থেকেই বক্সার হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে ওটামেন্ডির নাম। একটা সময় তিনি বক্সিং থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। ওই যে বক্সিংয়ের পাশাপাশি ফুটবলটা প্র্যাকটিস করতেন। সেটা শেষমেশ কাজে লাগে। আর্জেন্টিনার স্থানীয় ক্লাব ভেলেজে অনেক বলেকয়ে নাম লেখান। তাকে সুযোগও করে দেয় ক্লাবটি। হতাশ করেননি। দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে সবার নজর কাড়েন। ক্রমেই বাড়তে থাকে তার জনপ্রিয়তা। ওটামেন্ডিও নিজেকে উজাড় করে দেন।

চোখ পড়ে ২০০৮ সালে আর্জেন্টাইন জাতীয় দলের কোচের দায়িত্বে থাকা দিয়েগো ম্যারাডোনার। ওটামেন্ডিকে দলে টেনে নেন তিনি। আর পিছু তাকাতে হয়নি। ২০১০ সালে পর্তুগালের ক্লাব পোর্তো তাকে দলে ভেড়ায়। সেখানেও চলে ওটামেন্ডির ঝলক। এরপর ভ্যালেন্সিয়া হয়ে প্রিমিয়ার লীগের অন্যতম ফেভারিট ম্যানচেস্টার সিটির জার্সি জড়ান ওটামেন্ডি। খেলেন ২০১০ বিশ্বকাপ। এবারও রাশিয়ার মঞ্চে তাকে দেখতে পারেন আলবিসেলেস্তের সমর্থকরা।