রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শেষে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানের পর ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান!
গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ সিনেট ভবনে যৌথভাবে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে রাবি উপাচার্য ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান দেন বলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক শিক্ষক নিশ্চিত করেছেন। একজন স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে অন্য দেশের স্লোগান দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মণিষা দে। তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান স্যার তার বক্তব্যের শেষ দিকে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলার পর ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে অন্য একটি দেশের স্লোগান দেয়ার যৌক্তিকতা নেই। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে খাটো করে দেখা হয়। একটি দেশের অভ্যন্তরীণ একটি অনুষ্ঠানে অন্য একটি দেশের স্লোগান দেয়াকে রাষ্ট্র বিরুদ্ধাচরণ বলেও মনে করছেন তারা।
শিক্ষকরা জানান, গত বৃহস্পতিবার সকালে ইতিহাস বিভাগ ও জন-ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের যৌথ আয়োজনে ‘কালচার, পিস অ্যান্ড এডুকেশন; ফ্রম দ্যা পারস্পেকটিভ অভ পিপলস স্টিস্ট্রি’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার সঞ্জীব ভাট্টি, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। উপাচার্য তার বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলার পর ‘জয় হিন্দ’ বলেন।
অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইলিয়াস হোসেন বলেন, একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হয়ে তিনি কখনও এ ধরনের স্লোগান দিতে পারেন না। ‘জয় হিন্দ’ হচ্ছে অখণ্ড ভারতের একটি স্লোগান। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভোম রাষ্ট্র। সেদিক থেকে অখণ্ড ভারতের স্লোগান দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে খাটো করা হয় বলে দাবি করেন তিনি।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইতিহাস বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, একটি দেশের অভ্যন্তরীণ অনুষ্ঠানে অন্য একটি দেশের স্লোগান দেয়া রাষ্ট্রবিরোধী আচরণ। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে এ ধরনের স্লোগান দেয়ার মাধ্যমে ভারতের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা হয়, যা কোনোভাবে কাম্য নয়।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।