বইমেলায় ‘নো মাস্ক, নো সেল’

:
: ২ years ago

অমর একুশে বইমেলা আগামীকাল মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে। প্রতিবছর পহেলা ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু হলেও মহামারি করোনার কারণে এবারের বইমেলা ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে। এদিন বিকেল ৩টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বইমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা চলবে।

এবারের বইমেলায় মাস্ক ছাড়া কোনো বই বিক্রি করা হবে না বলে জানিয়েছে মেলা কর্তৃপক্ষ। সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মেলা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সচিব মো. আবুল মনসুর, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা প্রমুখ।

এ সময় প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘করোনার কারণে এবারের বইমেলার সময় অর্ধেক করা হয়েছে। যদি করোনা পরিস্থিতি কমে, তাহলে বইমেলার সময় বাড়ানো হবে। আমরা বইমেলায় সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।’

সচিব মো. আবুল মনসুর বলেন, ‘১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা মেলা শুরু করতে যাচ্ছি। মেলার অবশিষ্ট কাজ কালকের মধ্যে সব শেষ বলে আশা করছি। করোনা পরিস্থিতি আমরা সবসময় মাথায় রাখব। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলা প্রাঙ্গণে আসতে হবে।’

স্বাস্থ্যবিধি মানতে মোবাইল কোর্ট থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বইমেলায় প্রতিদিন একটি মোবাইল কোর্ট থাকবে। ‘নো মাস্ক, নো সেল’ চালু থাকবে। মেলার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাই আসবে বলে প্রত্যাশা করছি।’

বইমেলার বিস্তারিত তথ্য

এবার বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিট; মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় ৩৫টি প্যাভিলিয়ন থাকবে।

এবার লিটল ম্যাগাজিন চতুর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এক্ষি থিয়েটারের পূর্বদিকে মেলার মূল প্রাঙ্গণে। সেখানে ১২৭টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে।

বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন, শিশু-কিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য ১টি এবং সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকার-এর ১টি স্টল থাকবে। এবারও শিশুচতুর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। তবে কোভিত পরিস্থিতির কারণে প্রথমদিকে ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে।

অমর একুশে বইমেলা ২০২২-এর প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমিতে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেনিতে ১টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২টি তথ্যকেন্দ্র থাকবে। সাংবাদিকদের অবাধ তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার্থে বইমেলায় মিডিয়া সেন্টার থাকবে তথ্যকেন্দ্রের উত্তর পাশে।

বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্তৃপক্ষ বইমেলায় তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, তথ্যকেন্দ্রের সর্বশেষ খবরাখবর এবং মেলার মূল মঞ্চের সেমিনার প্রচারের ব্যবস্থা করবে। মেলায় ওয়াই-ফাই সুবিধা থাকবে।

বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪টি প্রবেশপথ ও ৩টি বাহিরপথ থাকবে। বিশেষ দিনগুলোয় লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে। বইমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্তসংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‍্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য তিন শতাধিক ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী নিয়ে প্রতিদিন বিকেল ৪টায় সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে মান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিরেতন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০২২ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি’ পুরস্কার দেওয়া হবে।

এ ছাড়া ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান নানাভাই’ স্মৃতি পুরস্কার এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী মুক্তি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।

এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১০৭টি বই।