এ কি চোখের ভুল, নাকি সত্যি-সত্যি থৈ থৈ পানি চোখের সামনে? জলজট কিংবা জলাবদ্ধতা ঢাকার রাস্তায় নতুন কিছু নয়। তাই বলে মাটি থেকে ৪০ ফুট উপরের ফ্লাইওভারে একহাঁটু জল! গল্পের গরু মগডালে ওঠে বটে মাঝেমধ্যে; কিন্তু সোয়া এক হাজার কোটি টাকায় বানানো ফ্লাইওভারে জলজট হবে, তা কে ভাবতে পারেন? ভাবনার সীমানায় না থাকলেও বৃহস্পতিবার বৃষ্টির পর সত্যিই একহাঁটু জল জমেছিল রাজধানীর মগবাজার ফ্লাইওভারে!
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৮২ মিলিমিটার। এ বছর গতকালই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। এমন বৃষ্টির পর ঢাকায় জলজট অবধারিত। দুর্ভোগ হবে মেনেই নগরবাসী ঘর ছেড়েছিলেন। মিরপুর, মগবাজার, ধানমণ্ডি, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুরসহ বিস্তীর্ণ এলাকার রাস্তাঘাট ছিল জলমগ্ন। বিকেল ৩টার দিকেও ডুবে ছিল ধানমণ্ডি ৭ নম্বর সড়ক।
তবে বৃহস্পতিবার ফ্লাইওভারের ওপর জলজট হওয়ায় শুধু ভোগান্তি নয়, বিশাল এ অবকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ফ্লাইওভারের মৌচাক থেকে বাংলামটরমুখী লেনে গতকাল দুপুরেও ছিল হাঁটু সমান ছুঁইছুঁই পানি। রামপুরা থেকে মৌচাকমুখী তিনতলা লেনেও ছিলও জলজট। মৌচাক থেকে মালিবাগমুখী অংশেও ছিল জলাবদ্ধতা।
তিন ভাগে বিভক্ত মগবাজার (সমন্বিত) ফ্লাইওভারের বাংলামটর-মৌচাক অংশ এবং রামপুরা-শান্তিনগর অংশের কাজ শেষ হয়েছে বছরখানেক আগে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফ্লাইওভার হস্তান্তর করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাছে। বৃষ্টির পানি নিস্কাশনে ফ্লাইওভারে ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলেও পাইপের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে বালি-কাদায়। তাই বর্ষার শুরু থেকেই কম-বেশি পানি জমছে ফ্লাইওভারের ওপর। অনেক অংশে পানি নিস্কাশনের পাইপ অকেজোও হয়ে গেছে।
ফেসবুকে ফ্লাইওভারে জলজটের ছবি শেয়ার করেছেন চাকরিজীবী জুলফিকার ইসলাম। তিনি জানান, বেলা ১১টার দিকে মোটরসাইকেলে শান্তিনগর থেকে বাংলামটরের দিকে যাচ্ছিলেন। মগবাজার ওয়্যারলেস গেট পার হওয়ার পর দেখতে পান ফ্লাইওভারের ওপর পানি। এ অবস্থায় যাবেন কি-না বুঝতে পারছিলেন না। পরে দেখেন প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনই যাচ্ছে জলজটের মধ্যে দিয়ে।
জুলফিকারও মোটরসাইকেলে পানি পার হন। প্রতিদিন চলাচলের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানান, ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে মাটি ও বালিবাহী ট্রাক চলাচল করে। আশপাশে বহুতল ভবনের কাজও চলছে। সেখান থেকেও বালি উড়ে আসে ফ্লাইওভারে। এভাবে বালি জমে নিস্কাশন পাইপের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে।
ফ্লাইওভারের ওপর জলাবদ্ধতার ছবিতে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা নাগাদ ফেসবুক ভাইরাল হয়। কিন্তু দুপুর ২টাতেও সিটি করপোরেশনের কেউ আসেননি জল নিস্কাশনের পাইপের মুখ পরিস্কার করতে। স্থানীয়রা জানান, ফ্লাইওভারের ওপর ঝাড়ূ দেওয়া হচ্ছে, এমন তারা কখনও দেখেননি।
ফ্লাইওভারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান জানান, নির্মাণ শেষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে এটি হস্তান্তর করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ফ্লাইওভার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের।
এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মগবাজার এলাকার (৩৫ নম্বর ওয়ার্ড) কাউন্সিলর মোক্তার সরদার বলেন, করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নিচের রাস্তা পরিস্কার করেন। ফ্লাইওভারে জলাবদ্ধতা সম্পর্কে কিছু জানা নেই তার। তবে পানি নিস্কাশনের পথ পরিস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ফ্লাইওভারের ভারবহনের ক্ষমতা নির্দিষ্ট। ভারবহন ক্ষমতার বেশি পানি জমলে ফ্লাইওভারের ক্ষতি হতে হবে।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com