জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালি জাতিকে এনে দিয়েছেন রাজনৈতিক স্বাধীনতা। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন অর্থনৈতিক মুক্তি। আর তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশকে করেছেন ডিজিটাল বাংলাদেশ।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জারিকৃত জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ (ভিশন ৪১) এ ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরীর মাধ্যমে আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করে বাংলাদেশকে একটি তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে তাঁর সরকার।
সারা পৃথিবী যখন ডিজিটালাইজেশনের জোয়ারে ভাসছে, তখন পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের অন্যতম জেলা বরিশাল। বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানের চাহিদা অনেক অংশে কমিয়েছে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং। বাংলাদেশে একটা বড় কমিউনিটি আছে ফ্রিল্যান্সার। ফ্রিল্যান্সিং মূলত ইন্টারনেটভিত্তিক পেশা যেখানে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এটি সাধারণ চাকরির মতোই, কিন্তু ভিন্নতা হলো এখানে আপনি নিজে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন। দেখা গেলো আপনার এখন কাজ করতে ইচ্ছা করছে না; আপনি করবেন না। যখন ইচ্ছা করবে তখন আবার চাইলেই করতে পারবেন। তাই দেশের বর্তমান শিক্ষিত যুব সমাজের বৃহৎ একটা অংশ পরাধীনতার জীবন থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীনভাবে জীবন অতিবাহিত করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এর পথ বেছে নিয়েছেন।
ফ্রিল্যান্সিং করতে প্রথমত যে বিষয়টি আপনার প্রয়োজন, সেটি হলো ইচ্ছাশক্তি ও ধৈর্য। ফ্রিল্যান্সিং এর নির্দিষ্ট কোনো অফিস নেই। মূলত আপনার বাড়িই হচ্ছে আপনার অফিস। এখানে বসেই আপনি বিভিন্ন দেশের অসংখ্য কোম্পানির সাথে কাজ করতে পারবেন। ফটো এডিটিং থেকে শুরু করে ভিডিও বানানো, এডিট করাসহ গ্রাফিক্স ডিজাইনের সকল বিভাগই এর আওতাভুক্ত। এছাড়া ওয়েব ডিজাইন, কোডিং, এনিমেশন তৈরি, ব্লগিংসহ অনেক কাজ আপনি এখানে পেয়ে যাবেন।
আপনার যে বিষয়ে দক্ষতা রয়েছে আপনি সেই বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। ডিজিটাল বাংলাদেশে চাকরির পিছনে না ছুটে নিজের দক্ষতার পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তির সুযোগ নিয়ে হতে পারেন আপনি একজন ইন্টারন্যাশনাল মানের ফ্রিল্যান্সার। ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে খুব সহজেই সরকারি-বেসরকারি অনেক চাকরির থেকে বেশি বেতনে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বৈদেশিক রেমিট্যান্স একটা দেশের অর্থনীতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আমরা ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে পাচ্ছি।
বরিশালের এই দক্ষ যুবসমাজ ফ্রিল্যান্সিং এর বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে কাজ করে দেশে অবস্থান করেই বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাদের এই দক্ষতাগুলো কাজে লাগিয়ে দেশের মধ্যেই তারা বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি নির্ভর প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। বরিশালের যুবসমাজ ফ্রিল্যান্সিংয়ে খুবই পিছিয়ে ছিলো। বরিশালে ছিলো না তেমন কোন ভালো ট্রেইনিং দেয়ার মতো প্রতিষ্ঠান, না ছিল ফ্রিল্যান্সারদের জন্য অফিসিয়াল কোন প্ল্যাটফর্ম। এভাবেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে বরিশাল জেলাকে তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বরিশাল জেলার জেলা প্রশাসকের পরিকল্পনা ও পরামর্শে ডিজিটাল বাংলাদেশের ৪টি মূলস্তম্ভের
১ টি মূলস্তম্ভ – মানবসম্পদের উন্নয়নকে লক্ষ্য হিসেবে ধরে ফ্রিল্যান্সিং ক্লাব, বরিশাল প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
বর্তমান সরকারের আমলে বরিশাল জেলায় লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট এর আওতায় ত্রিশটি ব্যাচে প্রায় ৬ শতাধিক যুবক-যুবতীদের ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ের ওপরে দক্ষ প্রশিক্ষক দ্বারা প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ফলে উল্লেখযোগ্য হারে ফ্রিল্যান্সিরদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের এই সফলতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে বরিশাল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর, বরিশালের কর্মকর্তাগণ এবং বরিশাল জেলার দক্ষ কয়েকজন ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় ফ্রিল্যান্সিং ক্লাব, বরিশাল। এই ক্লাবের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪ হাজারের অধিক। এরা নিয়মিত ফ্রিল্যান্সিং এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গ্রুপভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।
ফ্রিল্যান্সিং ক্লাব এর উদ্দেশ্য:
১। বরিশাল জেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় ফ্রিল্যান্সারদের একটি অফিসিয়াল প্লাটফর্মে নিয়ে আসার মাধ্যমে বরিশালে ফ্রিল্যান্সিংকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া,
২। তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনবল গড়ে তোলা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা,
৩। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর নতুন উদ্ভাবন এবং দক্ষ উদ্যোক্তা তৈরিতে সকল ধরনের প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং পরামর্শ প্রদান করা,
৪। বরিশালের ফ্রিল্যান্সারদের বিভিন্ন ট্রেইনিং এবং সেমিনার এর ব্যবস্থা করা,
৫। নতুন ফ্রিল্যান্সার প্রস্তুত করা ও সাপোর্ট এর ব্যবস্থা করা,
৬। ঝরে পড়া ফ্রিল্যান্সারদের প্রয়োজনীয় সাপোর্ট প্রদান করে তাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া,
৭। নতুন এবং পুরাতন ফ্রিল্যান্সারদের যোগাযোগের একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা,
৮। বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং এ বরিশাল জেলাকে একটি রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করা।
আমাদের লক্ষ্য:
ফ্রিল্যান্সিং এ বরিশালের অবস্থান আরো উন্নত করার মাধ্যমে বরিশালে যোগ্য ফ্রিল্যান্সার বৃদ্ধি করা এবং বিশ্বের দরবারে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে বরিশালকে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া।
পরিশেষে একটি কথা বলবো, প্রত্যেকটা জিনিসেরই ভালো মন্দ উভয় দিক থাকে। এক্ষেত্রেও ভালো মন্দ উভয় দিক বিদ্যমান। তবে এখানে একটু নিয়ম মেনে চললে ফ্রিল্যান্সিং এর অসুবিধাগুলোকে খুব সহজেই এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে। এখন সময় এসেছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। আর ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিংই হতে পারে বেকার যুবকদের ক্যারিয়ার গড়ার অন্যতম গাইডলাইন।