দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ চিকিৎসা সেবাদান কেন্দ্র বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল। এ বিভাগের ৬ টি জেলার সরকারি হাসপাতালের মধ্যে একমাত্র এখানেই রয়েছে মরদেহ সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা। কিন্তু সেই ব্যবস্থাতেও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ফ্রিজিং ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। দুই মাস ধরে ব্যহত হচ্ছে মরদেহ সংরক্ষণ কার্যক্রম।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ বছর পূর্বে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে পৃথক দুটি মরচুয়ারী কুলার বা মরদেহ সংরক্ষণের ফ্রিজ আনা হয়। যার প্রত্যেকটিতে ৬টি করে আলাদা তাক রয়েছে, ফলে প্রত্যেকটিতে ৬টি করে ১২টি মরদেহ সংরক্ষণ করা যায়।
‘স্টার লিংক’ নামক কোম্পানির সরবরাহকরা ফ্রিজ দু’টি চালুর বছর খানেকের মধ্যেই নানান ত্রুটি দেখা দেয়। যান্ত্রিক ত্রুটির মধ্যেই জোড়াতালি দিয়ে মরদেহ সংরক্ষণ কার্যক্রম চলতো। প্রায় আড়াই বছর আগে বিকল হয়ে পড়ে ছয় কক্ষ বিশিষ্ট একটি ফ্রিজ। তখন তেমন কোন বেগ পেতে হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। অপর ফ্রিজটি দিয়েই মরদেহ সংরক্ষণ কার্যক্রম চলতো। কিন্তু গত আড়াইমাস ধরে সেটিও বিকল। ফলে মরদেহ সংরক্ষণ নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ ভুক্তভোগী পরিবারদের।
দুই মাস ধরে ব্যহত হচ্ছে মরদেহ সংরক্ষণ কার্যক্রম
এখন কোন মরদেহ স্বজনরা সংরক্ষণ করতে চাইলে তা রাখতে পারছেন না। আবার একইভাবে অজ্ঞাত পরিচয়ের মরদেহ সংরক্ষণে বেগ পেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
শেবাচিম হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিন মাস আগে একটি মরদেহ ফ্রিজে রাখে তাদের স্বজনরা। এর দুই দিন পরে গিয়ে দেখতে পাই মরদেহটিতে পঁচন ধরেছে। তখন বুঝতে পারা যায় যে সচল থাকা ফ্রিজটিও বিকল হয়ে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে জানানো হয়। বাকি ফ্রিজটি প্রায় আড়াই বছর ধরে নষ্ট।
সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হওয়া অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মরদেহ ফ্রিজের অভাবে বাইরে রাখতে হয়। যার পরিচয় মিলতে মিলতে মরদেহটি ফুলে ফেপে উঠে পঁচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
হাসপাতালের স্টোর কিপার সাইফুল ইসলাম জানান, প্রায় আড়াই বছর আগে বিকল হওয়া ফ্রিজটি গত অর্থ বছরেই সচল হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু অর্থ ব্যয়ের অনুমতি পেতে এক অর্থ বছর ছাড়িয়ে অন্য অর্থ বছর চলে আসে। তাই পূর্বের অর্থ বছরে আসা বরাদ্দ ফেরত পাঠাতে হয়েছে। যে কারণে পরবর্তীতে ওই ফ্রিজটি আর সচল করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, যে ফ্রিজটি সচল ছিলো সেটিও গত দুই থেকে আড়াই মাস ধরে বিকল। ফ্রিজ সরবরাহকারী স্টার লিংক কোম্পানিকে চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তারা এসে বিকল থাকা দুটি হিমাগার সার্ভে করে গেছেন।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন জানান, দুটি ফ্রিজই সচল করার চেষ্টা চলছে। আপতত ক্রয় চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সার্ভে করে আড়াই লাখ টাকার একটি চাহিদাপত্র দিয়ে গেছেন। সে অনুযায়ী কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। আশাকরি অল্প সময়ের মধ্যে ফ্রিজ মেরামতের মধ্য দিয়ে মরদেহ সংরক্ষণের কার্যক্রম শুরু হবে।