ফেসবুকের ছবি পৌঁছে দিল স্বপ্নের দোরগোড়ায়

:
: ৬ years ago

নিরক্ষর স্বামী আর ছোট তিন সন্তান নিয়ে সংসার আফগানিস্তানের জাহানতাব আহমদির। এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট মেয়েটির বয়স মাত্র দুই মাস। তারপরও কলেজে পড়ার স্বপ্ন ছাড়েননি জাহানতাব। এটা অসম্ভব কোনো স্বপ্নও ছিল না যদি দেশটার নাম আফগানিস্তান না হতো। যেখানে নারী অধিকার প্রতি পদে পদ লঙ্ঘিত হয়। কিন্তু আফগানিস্তানের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে হলেও জাহানতাবের সব সময়ই স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষার।

অদম্য ইচ্ছা আর আগ্রহের কারণে তিনি হাই স্কুল পর্যন্ত পড়াশোনা করেও ছিলেন। কিন্তু এরপরে তার আর পড়া হয়নি। গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করার জন্য তার হাই স্কুলের ডিগ্রীই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল আরও বেশি কিছুর।

স্বামীর সাহচর্যে তাই একদিন জাহানতাব তার ছোট্ট মেয়েটিকে কোলে নিয়ে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে যান নিলি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে। সেই পরীক্ষায় মোটামুটি ভালো ফলও করেন। তারপরও তার উচ্চশিক্ষা নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু ফেসবুকের কল্যাণে তার সেই স্বপ্ন আজ পূরণ হতে চলেছে।

ছোট্ট ঘুমন্ত মেয়েকে কোলে নিয়ে জাহানতাপ যখন পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন ঠিক তখনই একজন শিক্ষক তার ছবি তোলেন। তারপর সেটি পোস্ট করে দেন ফেসবুকে। আফগানিস্তানের মতো দেশে যেখানে মেয়েরা প্রতিনিয়তই তাদের মৌলিক অধিকারের জন্য যুদ্ধ করছে সেইখানে একজন নারীর শিক্ষা নিয়ে এমন উদ্যোগের বিষয়টি সবার দৃষ্টি কাড়ে। খুব দ্রুত ছবিটি ছড়িয়ে পড়ে নেট দুনিয়ায়।

অনেকের মতো ছবিটি চোখে পড়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জাহরা ইয়াগনারের। বিষয়টি নিয়ে তিনি দেখা করেন প্রেসিডেন্ট আসরফ ঘানির অন্যতম উপদেষ্টা ফারখুন্দা জাহরা নাদেরি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট সরওয়ার দানিশের সঙ্গে।সব শুনে তারা জাহানতাবকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন। এদের উদ্যোগেই কাবুলের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান জাহানতাব। সেখানে তার পড়াশোনার খরচ দিতে চেয়েছেন জোগাবেন নাদেরি ।অন্যদিকে জাহানতাবের পরিবারের কাবুলে থাকার খরচ বহন করার আশ্বাস দিয়েছেন স্বয়ং ভাইস প্রেসিডেন্ট।

তাদের ভাষায়,জাহানতাব হচ্ছে নারী শিক্ষার অনুপ্রেরণা।

এদিকে জাহানতাবের স্বামী মুসা মোহাম্মাদী স্ত্রী-র প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীর জন্য গর্ব অনুভব করছি’। তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই না আমার সন্তানেরা আমার মতো অশিক্ষিত থাকুক। আমি রাস্তায় কোনো চিহ্ন দেখলে পড়তে পারি না। ফার্মেসিতে ওষুধ আনতে যাই কিন্তু সেটার নাম পড়তে পারি না। এটা খুব কঠিন একটা পরিস্থিতি।’

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে পঁচিশ বছর বয়সী জাহানতাব বলেন,’ আমি লেখাপড়া শিখতে চাই যাতে আমি আমার গ্রামকে বদলাতে পারি। কিন্তু  তার আগে চাই আমার ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখুক।’

এত আশার মধ্যেও কিছু শঙ্কা তো রয়েছেই। এক দিকে তালেবান,অন্য দিকে কট্টর মৌলবিরা। দুই পক্ষই নারী স্বাধীনতার বিপক্ষে। জাহানতাব অবশ্য এ সব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। তিনি চাইছেন তার স্বপ্নপূরণ করতে।

সূত্র : এবিসিনিউজ