ফের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ইরানে, ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগ দাবি

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমান ভুল গুলিতে বিধ্বস্ত করা হয়েছে বলে ইরানের সামরিক বাহিনী স্বীকার করার পর দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়েছে। ইরানি কর্তৃপক্ষের পদত্যাগের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো রোববার বিক্ষোভ করছেন দেশটির নাগরিকরা।

এর আগে ইরানের সামরিক বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার সময় ভুলেই গুলি চালিয়ে ইউক্রেনের ১৭৬ আরোহীবাহী একটি বিমান বিধ্বস্ত করা হয়েছে বলে স্বীকার করে। বিধ্বস্তের ঘটনায় বিমানটির সব আরোহী মারা যান। সামরিক বাহিনীর এই স্বীকারোক্তির পর দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বের ক্ষমতায় থাকার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পদত্যাগ দাবি করেছে বিক্ষোভকারীরা।

রোববার তেহরানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক শত শত বিক্ষোভকারী। এ সময় ইরানের ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টুইটারে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে বিক্ষোভকারীদের বলতে দেখা যায়, তারা মিথ্যাচার করেছে যে, আমেরিকা আমাদের শত্রু। কিন্তু আমাদের শত্রুরা দেশে।

একই দিনে দেশটির অন্যান্য শহরেও সরকারবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভের ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স। তবে গত বুধবার ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমান ভুলেই ভূপাতিত করা হয়েছে বলে ইরানের সামরিক বাহিনী দুঃখপ্রকাশ করার পর শনিবার দেশটিতে বিক্ষোভ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে এই বিক্ষোভের তথ্য দেয়া হয়েছে।

iran-protest

তেহরানের বাসিন্দারা রয়টার্সকে বলেছেন, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা সামরিক বাহিনী কয়েকদিন ধরে অস্বীকার করায় জনগণের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে দাবি করে আসছিল। এমন পরিস্থিতিতে রোববার তেহরানে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে বলপ্রয়োগ করেছে পুলিশ।

শনিবার তেহরানে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে হটিয়ে দিতে দেশটির দাঙ্গা পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। বিক্ষোভে অনেকেই ইরানের ক্ষমতাসীন নেতাদের স্বৈরশাসক অভিহিত করে তাদের মৃত্যু চেয়ে স্লোগান দেন। দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ইঙ্গিত করে ‘স্বৈরশাসকের মৃত্যু চাই’ স্লোগান দেন তারা।

ইরানের মধ্যপন্থী দৈনিক এতিমাদ ডেইলি রোববার ‘দুঃখপ্রকাশ এবং পদত্যাগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, বিমান সঙ্কট ভুলভাবে নিয়ন্ত্রণকারীদের জন্য জনগণ পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে।

গত নভেম্বরে দেশটিতে সরকারবিরোধী তীব্র বিক্ষোভ প্রতিবাদ শুরু হয়। রক্তাক্ত অভিযানের মাধ্যমে দেশটির নিরাপত্তাবাহিনী সরকারবিরোধী সেই বিক্ষোভ দমন করলেও নতুন করে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ কর্তৃপক্ষের জন্য আবারও চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

iran-protest

গত বুধবার তেহরান থেকে ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমানটি উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যে গুলি চালিয়ে ভূপাতিত করে ইরানের সামরিক বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আশঙ্কায় ইরানি সামরিক বাহিনী ভুলেই বিমানটি বিধ্বস্ত করা হয়েছে বলে তিনদিন পর স্বীকারোক্তি দিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে। বিমান বিধ্বস্তে নিহত ১৭৬ আরোহীর মধ্যে কানাডার ৫৭ জন নাগরিক ছিলেন। এছাড়া বাকিরা ইরান-ইউক্রেনের দ্বৈত নাগরিকত্বধারী।

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বিমান বিধ্বস্তের এই ঘটনা চরম ভুল স্বীকার করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তবে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর শীর্ষ এক কমান্ডার ওই দিনই ক্ষমতাসীন সরকারকে ভুলেই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা অবগত করেছেন বলে স্বীকার করায় জনগণের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। কমান্ডার হোসেইন সালামি বলেছেন, এ ঘটনায় অন্য যে কারও চেয়ে আমরা বেশি মুষড়ে পড়েছিলাম।

প্রতিশোধ

তবে সামরিক বাহিনীর এই দুর্ঘটনায় শত্রুরা ফায়দা লুটতে চায় বলে কুদস ফোর্সে নিয়োজিত দেশটির ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির এক প্রতিনিধি মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ইরানের শত্রুরা সামরিক বাহিনীর একটি ভুলের জন্য বিপ্লবী গার্ডের ওপর প্রতিশোধ নিতে চায়।

এদিকে, শনিবারের বিক্ষোভের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেছেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর আরেকটি গণহত্যা কিংবা ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। বিশ্ব দেখছে। শনিবার বিক্ষোভ থেকে তেহরানে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতকে কিছু সময়ের জন্য আটক করা হয়। বিক্ষোভ উসকে দেয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে ইরানের গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়।

iran-protest

রাষ্ট্রদূত গ্রেফতারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রব বলেছেন, চলমান পরিস্থিতিতে ইরান সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারে… অথবা উত্তেজনা প্রশমনে পদক্ষেপ এবং সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য কূটনৈতিক পথ বেছে নিতে পারে।

মানবতাবিরোধী অপরাধ

গত ৩ জানুয়ারি ইরাকের রাজধানী বাগদাদের বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন হামলা চালিয়ে ইরানের প্রখ্যাত সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করে মার্কিন সামরিক বাহিনী। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের আঞ্চলিক শক্তি বৃদ্ধির নেপথ্যের কারিগর ছিলেন দেশটির বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বিদেশি সশস্ত্র শাখা কুদস ফোর্সের এই প্রধান।

প্রতিশোধ হিসেবে ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। এতে ৮০ মার্কিন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে বলে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়। তবে ওয়াশিংটন বলছে, ইরানের হামলায় কোনও হতাহত হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা হামলার আশঙ্কায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে ছিল ইরানের সামরিক বাহিনী। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে তেহরানের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রীবাহী বিমানটি উড্ডয়নের পরপরই ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে ভূপাতিত করে ইরানের সামরিক বাহিনী। ইরানের ক্ষমতাচ্যুত শাহ রেজা পাহলভির ছেলে টুইটারে লিখেছেন, এটা মানবীয় কোনও ভুল নয়। এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ। খামেনি এবং তার পুরো শাসনব্যস্থার বিদায় নেয়া উচিত।