ফের বাসচাপায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু: দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

গত রোববার রাজধানীর প্রগতি সরণিতে বেপরোয়া বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যুর শিকার হয়েছেন বেসরকারি নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী নাদিয়া আক্তার। নাদিয়ার মৃত্যুতে তার বাবা-মা ও স্বজনদের বুকভরা স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে, যা মেনে নেওয়া কষ্টকর। এর আগেও রাজধানীতে বাসের চাকায় প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। বস্তুত রাজধানীসহ সারা দেশের বিশৃঙ্খল সড়কে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো পথচারী বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছেন। অন্যদিকে মহাসড়কে অব্যাহতভাবে দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে, যেন এর কোনো প্রতিকার নেই! রোববার ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন তিনজন। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ট্রাকচাপায় একজন নিরাপত্তাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া দেশের অন্য সাত জেলায় প্রাণহানি ঘটেছে আরও আটজনের। পাশাপাশি আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। প্রশ্ন হলো, প্রতিদিন যদি আমাদের এমন বেদনাদায়ক মৃত্যুসংবাদের মুখোমুখি হতে হয়-নিরাপদ সড়কের দাবিতে এত আন্দোলন, এত সুপারিশ-পরামর্শ এবং নতুন প্রবর্তিত আইন তাহলে কোন কাজে লাগছে?

 

বস্তুত জনবহুল এ দেশে সড়ক ও পরিবহণব্যবস্থা যথেষ্ট উপযুক্ত না থাকার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। মূলত অশিক্ষিত চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, নাগরিকদের অসচেতনতা, যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত গতি, রাস্তা নির্মাণে ত্রুটি, বিরামহীনভাবে যানবাহন চালানো, আইন প্রয়োগের দুর্বলতা এবং এ ব্যাপারে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে ৮৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ চালকের বেপরোয়া গতি। এছাড়া ভুল ওভারটেকিংয়ের কারণে ঘটে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ দুর্ঘটনা। সব মিলে সড়ক দুর্ঘটনার ৯০ দশমিক ৬৯ ভাগের জন্যই দায়ী চালক। অর্থাৎ দুর্ঘটনা রোধে সবার আগে দৃষ্টি দেওয়া উচিত চালকদের দিকে। সড়কে দুর্ঘটনা হ্রাসে ইতঃপূর্বে পেশাদার চালকদের লাইসেন্স পেতে ও নবায়নের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা ছাড়াও পর্যাপ্ত বিশ্রামের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। দুঃখজনক হলো, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১১১টি সুপারিশ করা হলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।

আমরা মনে করি, যেভাবেই হোক, সড়ক-মহসড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। সচেতন হতে হবে পথচারীদেরও। একই সঙ্গে আইনের যথাযথ প্রয়োগ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ চালক এবং সড়কে চলাচল উপযোগী ভালো মানের যানবাহন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এসবের পাশাপাশি যে কোনো দুর্ঘটনায় স্বল্পতম সময়ের মধ্যে পুলিশ কর্তৃক চার্জশিট দাখিল এবং দ্রুত ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথ সুগম করা হলে তা সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সড়কে অত্যধিক দুর্ঘটনা ও নৈরাজ্যকর অবস্থার পরিবর্তন-অবসান ঘটাতে সমস্যাটিকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারের পাশাপাশি পরিবহণ মালিক ও শ্রমিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবাই সমন্বিত কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হবেন, এটাই প্রত্যাশা।