‘জুন মাসের মধ্যে সম্মেলনের প্রস্তুতির নির্দেশনা দিয়েছেন ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক শেখ হাসিনা’ এমন তথ্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ তথ্যের পক্ষে বিপক্ষে খোদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়েছেন। একপক্ষ এটিকে প্রমোট করছেন, অপরপক্ষ ভিন্ন তথ্য প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় মশগুল।
উভয়পক্ষের তথ্যের ভিত্তি হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের একটি ছবি। বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) গণভবনে দেখা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওই ছবি তুলেন তারা।
জানা গেছে, এদিন বেলা ২টার পর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা। দীর্ঘদিন পর নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে এসে বিকেল সাড়ে ৪টায় সংগঠনের সভাপতি তার ফেসবুকে তিনজনের ওই ছবি দেন। ক্যাপশনে লেখেন, ‘জয় বাংলা বলে আগে বাড়ো।’ আর এটিই মূলত ভাইরাল হয়। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়, অসমর্থিত সূত্রের সম্মেলন হওয়া-না হওয়ার ওই তথ্য।
আর এরই মাধ্যমে ফের আলোচনায় এসেছে ছাত্রলীগের সম্মেলনের বিষয়টি। ছাত্রলীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব ক’টি ইউনিটের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ। এই কমিটি (জয়-লেখক) তাদের দীর্ঘ সময়ে ১১১ ইউনিটের মধ্যে মাত্র ৫/৭টি ইউনিটের কমিটি দিয়েছেন। ঢাকায় সম্মেলন হয়ে থাকা ইউনিটগুলোরও কমিটি দিতে পারেননি। মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে, কিন্তু এখনো কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন হয়নি। দুই নেতার ইচ্ছে মাফিক চলছে সংগঠন। যার কারণেই এসব সত্য-অসত্য তথ্য ভাইরাল হয়। পক্ষে-বিপক্ষে লেখালেখি হয়।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের নির্দেশনা সংক্রান্ত ওই তথ্য ফেসবুকে লেখেন সংগঠনটির নেতা এস এম মামুন, সোহানুর রহমান, ইমদাদ হোসেন সোহাগসহ অনেকে। তারা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, ‘জুন মাসের মধ্যে সম্মেলনের প্রস্তুতির নির্দেশনা দিয়েছেন ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক শেখ হাসিনা।’
এদিকে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান পিকুল ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর জব্বার রাজসহ অনেক নেতাকে লিখতে দেখা গেছে, ‘আপা বলেছেন, তোমরা ভাল চালাচ্ছো। আমি কারো লেখালিখিতে বিশ্বাস করি না। তোমরা জয় বাংলা বলে আগে বাড়ো।’
এই পক্ষ বিপক্ষ কেন নিজেদের মধ্যেই- জানতে চাইলে সংগঠনটির সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘পরিশ্রমী ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করে যখন স্বজনপ্রীতি বেশি প্রাধান্য পায়, তখনই এ ধরনের পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়। আর ছাত্রলীগের সম্মেলন হবে কি, হবে না; বা কখন হবে, এ সিদ্ধান্ত দেবেন আমাদের নেত্রী (শেখ হাসিনা)। এখানে কারো কিছু বলার বা করার নেই।’
তবে এ বিষয়ে কথা বলে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন আমরা নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। সময় চেয়ে আজ ২টার পর সুযোগ পেয়েছি। আমরা নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে সাংগঠনিক নানা বিষয়ে পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা নিয়েছি। তিনি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা ইউনিটগুলোতে কমিটি করে দিতে। সেখানে যোগ্য নেতৃত্ব তুলে আনতেও বলেছেন তিনি। পাশাপাশি মুজিববর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের বিষয়ে আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচির বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছেন।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলনের নির্দেশনা সংক্রান্ত তথ্য-প্রচার হচ্ছে- এর সত্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে জয় বলেন, ‘এটি গুজব। এর কোনো সত্যতা নেই। আজকে যারা এটি প্রচার করছেন, জুন মাসে সম্মেলন না হলে বরং তারা লজ্জিত হবেন।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন হয়। এতে সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী দায়িত্ব পান। শোভন-রাব্বানী দায়িত্ব পাওয়ার এক বছর পর ২০১৯ সালের ১৩ মে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন। সংগঠনে পদায়নে স্বেচ্ছাচারিতা, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন শোভন-রাব্বানী। সেদিনই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান যথাক্রমে আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও তাদের হাত ধরে এখনো চলছে সংগঠনটি। ব্যর্থতার ঝুলি ভারি হলেও তাদের সফলতাও আছে ঢের। করোনা সংকটে মানুষে পাশে থেকে প্রশংসিত হয়েছে সংগঠনটি।