ফিলিস্তিনের অগ্নিযোদ্ধারা ইসরায়েলের জন্য অশনিসংকেত!

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

গত দু’সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল ও গাজা উপত্যকাকে পৃথক করা বাফার জোনে ঘাঁটি গেঁড়েছে সাত ফিলিস্তিনির একটি দল। তারা যে কোনও সাধারণ ভ্রমণকারী নন সেটা তাদের মাল-সামানা দেখলেই বোঝা যায়। দলটির সঙ্গে রয়েছে বেশ কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার, দাহ্য পদার্থের টুকরো, বেলুন ও পুরো মুখঢাকা মুখোশ।

এসব ফিলিস্তিনি নিজেদের বার্ক বা বজ্র ইউনিট বলে পরিচয় দেন। ইসরায়েলের দিকে আগুনে বেলুন ও ঘুড়ি ছোড়া দলগুলোর মধ্যে অন্যতম তারা। ছোটবড় ঝোপ অথবা জলপাই গাছের নিচে লুকিয়ে একগোছা বেলুনে হিলিয়াম গ্যাস ভরে সেগুলোর সঙ্গে ছোট ছোট দাহ্য পদার্থ জুড়ে দেয় এই দল। বাতাসের গতি একবার নিশানা বরাবর গেলেই ছেড়ে দেয়া হয় অগ্নি-বেলুনগুলো। নিশানা যে সীমান্তের ওপারে ইসরায়েলি স্থাপনাগুলো তা নিশ্চয় বলার অপেক্ষা রাখে না!

ইসরায়েল এ ঘটনাকে অগ্নি-হামলা বলে বর্ণনা করছে। এ ধরনের হামলায় তাদের বেশকিছু ফসলী জমিতে আগুন লেগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগুনে কেউ হতাহত না হলেও এর জবাবে টানা ১০ দিন গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামাসের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে হামলা হলেও এতে এখন পর্যন্ত কেউ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

 ফিলিস্তিনি অগ্নিযোদ্ধাদের বার্তা

বার্ক ইউনিটের মুখপাত্র আবু ইউসেফ বলেন, ‘আমরা ইসায়েয়েলি দখলদারদের অগ্নিবার্তা দিতে এখানে এসেছি। আমরা গাজা উপত্যকায় ১৩ বছর ধরে চলা অবরোধ আর সহ্য করতে পারছি না।’

২৪ বছর বয়সী এ যুবক বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, পরিবার ও প্রিয়জনদের সঙ্গে আমাদেরও সচ্ছল জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে।’

আবু ওবাইদা নামে পরিচয় দেয়া দলটির জ্যেষ্ঠতম সদস্য জানান, তারা বিপজ্জনক অগ্নিবেলুন হামলার পথ বেছে নিয়েছেন কারণ তারা মনে করছেন, কেউই গাজার দিকে খেয়াল করছে না। গাজার দুর্দশা দূর করতেই বাধ্য হয়ে এই ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নিয়েছেন তারা।

পাঁচ সন্তানের বাবা ওবাইদা বলেন, ‘ইহুদিদের সঙ্গে আমাদের কোনও শত্রুতা নেই। আমাদের লড়াই সেই সরকারের বিরুদ্ধে যারা ১৩ বছর ধরে আমাদের অবরোধ করে রেখেছে।’

jagonews24

গাজাবাসীর দুরবস্থা

গত সপ্তাহে গাজার প্রধান বাণিজ্যিক সংযোগকেন্দ্র কারাম আবু সালেম বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। ১৭ আগস্ট থেকে বন্ধ মৎস্য শিকার। পরেরদিনই ইসরায়েলি অবরোধে জ্বালানি সংকটে পড়ায় গাজার প্রধান বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। ফলে উপত্যকার বাসিন্দারা আগে দিনে আট থেকে ১২ ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ পেলেও এখন পাচ্ছেন মাত্র তিন-চার ঘণ্টার মতো।

জাতিসংঘের মতে, গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ ২০২০ সালের মধ্যেই শহরটিকে জনবসতিহীন করে দিতে পারে। অঞ্চলটিতে বিশুদ্ধ পানির মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে, সেখানে পানিদূষণের মাত্রা ৯৭ শতাংশে পৌঁছে গেছে।

বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, গাজার অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষেরই ত্রাণ নিতে হচ্ছে। শহরের প্রায় ৫৩ শতাংশ বাসিন্দা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছেন।

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ফিলিস্তিনিদের

বার্ক ইউনিটের সদস্যরা জানিয়েছেন, চরম অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাদের সবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি রয়েছে, তারপরও বেকার।

আবু ওবাইদা বলেন, ‘ইসরায়েল যেভাবে দাবি করে আমরা সেরকম সন্ত্রাসী নই। আমরা কিছু জ্বালাতে বা কাউকে আঘাত করতে চাই না। আমাদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং বিদ্যুৎ প্রাপ্য। আমার সন্তানেরাও টেবিলে খাবার পাওয়ার দাবিদার।’

jagonews24

দৃঢ়প্রতিজ্ঞ অগ্নিযোদ্ধারা

বার্ক ইউনিটের সদস্যরা স্বীকার করেছেন, তারা যা করছেন সেটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক। তারপরও ইসরায়েলি দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনও কিছুতেই পিছু হটবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

আবু ইউসেফ বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই বিপদের মুখোমুখি হচ্ছি। দখলদাররা আমাদের দিকে সরাসরি গুলি ছুঁড়ছে। মাথার ওপরের আকাশে সবসময় ড্রোন ওড়াউড়ি করে। আমাদের অবশ্যই ভয় লাগে, তবে গাজার অবস্থা আরও বেশি ভয়ঙ্কর।’

আবু ওবাইদা বলেন, ‘আমরা মহাজাগতিক কিছু চাই না, শুধু মৌলিক অধিকার চাই। ইসরায়েল আমাদের সাধারণ জীবনযাপনের বৈধ অধিকারে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত আমরা অগ্নিবেলুন ও ঘুড়ি ব্যবহার করতে থাকব।’

‘কেউ যদি মনে করে, গাজায় আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া এই বিবর্ণ জীবন মেনে নেব, সে বোকার স্বর্গে বাস করছে।’

সূত্র: আল জাজিরা