‘ফিরে এলে নির্ধারিত এলাকায় থাকতে হবে রোহিঙ্গাদের’

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হলাইং বলেছেন, বাংলাদেশে আাশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে এলে, তাদের জন্য তৈরি ‘আদর্শ গ্রামে’ থাকতে হবে। যতো দিন তারা সেখানে থাকবেন, তত দিন নিরাপদ থাকবে।

গত ৩০ এপ্রিল মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে দেশটিতে সফররত জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতকালে এসব কথা বলেন তিনি। শনিবার এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। সেনাপ্রধানের বক্তব্যে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া ও সেখানে স্থায়ী বসত নির্মাণ নিয়ে নতুন করে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

শনিবার মিন অং হলাইং তার ফেসবুক পেজে জানান, সফররত জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য নির্ধারিত এলাকার মধ্যে থাকলেই তাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা থাকবে না। পোস্টে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বলে মন্তব্য করেছেন মিয়ানমার সেনাপ্রধান। রাখাইনে দীর্ঘদিন বাস করলেও তারা কখনো মিয়ানমারের জাতিসত্তা ছিল না বলেও তার মত।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক গণহত্যা, গণধর্ষণ, আগুনে পোড়ানোর যে বর্ণনা দিয়েছেন- এসব অভিযোগে সন্দেহ প্রকাশ করে মিন অং হলাইং বলেছেন, এগুলো অতিরঞ্জিত। বাঙালিরা কখনোই বলবে না যে, তারা সেখানে স্বেচ্ছায় গেছে। নির্যাতনের কারণে তারা সেখানে গেছে— এমন কথা বলে সহানুভূতি আদায় করবে।

জাতিসংঘ বলছে, রোহিঙ্গাদের  মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। দেশটি রাখাইনে যে অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্প তৈরি করছে, তাতে এক লাখের মতো মানুষের জায়গা হবে। এছাড়া বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য খুব কমসংখ্যক নতুন বাড়ি তৈরি করেছে তারা।

কয়েক দশক ধরেই মিয়ানমারে সংখ্যালঘু হিসেবে বাস করছে রোহিঙ্গারা। সংখ্যালঘু এই সম্প্রদায়কে ‘রোহিঙ্গা’ বলতে নারাজ মিয়ানমার সেনাবাহিনী। মানবাধিকার সংস্থাগুলো একাধিকবার উল্লেখ করেছে যে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার পরিস্থিতি খুবই নাজুক।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাতে রাখাইনে কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়ি ও তল্লাশিচৌকিতে সন্ত্রাসী হামলা হয়। এর জের ধরে সেখানে নতুন করে সহিংস অভিযান ও দমন-পীড়ন চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। তারা নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর গণহত্যা, গণধর্ষণ চালায় ও তাদের ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়।

এমন পরিস্থিতিতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ একে জাতিগত নিধন বলে আখ্যা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতার এক পর্যায়ে গত বছরের শেষের দিকে মিয়ানমার রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে রাজি হয়। তবে নিরাপত্তা ও স্বাধীনভাবে চলাফেরার মতো মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা না পেলে রাখাইনে ফিরবে না বলে জানায় রোহিঙ্গারা।