বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজার রায়ের বিষয়ে তাদের মহাসচিব আগে থেকে জানলেন কীভাবে এমন প্রশ্ন রেখেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন, এই মামলায় আদালত বেগম জিয়াকে সাজা দেবেন এ রকম নিশ্চয়তা তাকে (মির্জা ফখরুল) কে দিল? এবং সেটা তিনি আগে ভাগে কী করে জানলেন? আদালত নির্দোষ করতে পারে, আবার সাজাও দিতে পারে। এখানে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। সরকার এ পর্যন্ত বিচার বিভাগে কোনো হস্তক্ষেপ করেনি।
বৃহস্পতিবার জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় রায় ঘোষণার দিন নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিচার হবে প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন তাই।’ এর কয়েক ঘণ্টা পর ফার্মগেট খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এর প্রতিক্রিয়া দেন ওবায়দুল কাদের। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরাতে সরকার সাজা দিতে চাচ্ছে বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এর প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, সুপ্রিম কোর্ট ষোড়শ সংশোধনীর রায় কী দিয়েছে এটা সবাই জানে। এটা কি সরকারের পক্ষে? তিনি বলেন, আর এখন এই মামলায় বারবার মির্জা ফখরুল বলার চেষ্টা করছেন যেন শেখ হাসিনা এই মামলায় বেগম জিয়াকে হেনস্তা করছে। তাদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। এটা একটা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বিএনপি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এই মামলাটি কখন ফাইল হয়েছে। দুদকের মামলা, তখন ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সরকার। মামলা তো এই সরকার দেয়নি। মামলা দিয়েছে বেগম জিয়া যাদের বসিয়েছিলেন, ফখরুদ্দিন সাহেব ও তাদের সৃষ্টি মইনুদ্দিন সাহেব। এরাও তাদের সৃষ্টি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন চলছিল তখন এই মামলা দুদক করে। এখন দুদকের মামলা সরকার কীভাবে হস্তক্ষেপ করে? বেগম জিয়া নির্দোষ হলে আমাদের তো কোনো অসুবিধা নেই।
তিনি বলেন, আর তিনি সাজা পেলে আমরা কীভাবে রক্ষা করব? শেখ হাসিনা সরকারের এখানে কী? তাহলে কি আদালত রায় দিতে পারবে না? আদালত এদেশে বিচার করতে পারবে না?
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা ফখরুল আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই সরকার বেগম জিয়াকে ভয় পায়। ভয় পায় বলেই তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়।
জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আদালতে বিচারের বিরুদ্ধে তারা বিক্ষোভ করবেন? বেগম জিয়াকে আমরা ভয় পাই না। আমরা ভয় পাই ২০১৩, ১৪ সালের পেট্রলবোমাকে। ভয় পায় দেশের মানুষ। তখন দেশে মানুষ তার (খালেদার) নির্দেশে কত যে মানুষের প্রাণের প্রদীপ নিভিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, রাস্তার হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলেছে? বিদ্যুৎকেন্দ্র জালিয়ে দিয়েছে। রাস্তা কেটে ফেলেছে। বেগম জিয়ার এই রাজনীতিকে আমরা ভয় পাই। তাদের নেতিবাচক রাজনীতিকে আমরা ভয় পাই, বেগম জিয়াাকে আমরা ভয় পাই না।
এ সময় কাদের বলেন, মনে নেই চট্টগ্রামের একজনকে কীভাবে নির্দেশ দিয়েছে সন্ত্রাস করার জন্য, পেট্রল নিক্ষেপের জন্য। আমরা এটাকে ভয় পাই। বেগম জিয়াকে আমরা ভয় পাই না। তিনি ইতিবাচক রাজনীতি করলে আমরা কি বাধা দেব?
আবার রাস্তায় নেমে আগুন সন্ত্রাস করলে প্রতিহত করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, নির্বাচন হবে, বিএনপি অংশ নেবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন নির্বাচন আমরা চাই না। বিএনপি আসুক, তারা একটা বড় দল, আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন চাই।
ওবায়দুল কাদের বলেন, কতগুলো স্কুল জ্বালিয়ে দিয়েছিল বলুন, এই নারকীয় তাণ্ডবকে আমরা ভয় পাই, বেগম জিয়াকে নয়। এখন আদালতের রায় মনমতো না হলে আবারও তারা সেই সন্ত্রাস শুরু করবেন কিনা? সেটা যদি করে আমি বলতে চাই বাংলাদেশের সচেতন জনগণ তা প্রতিহত করবে, প্রতিরোধ করবে।
প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ২০১৮ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাকসুদুল হাছান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মৎস ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর শওকত আলী বাদশা।