প্রেস ক্লাবের সামনে নন-এমপিও শিক্ষকদের টানা ৯ দিন পার

:
: ৬ years ago

আগামী ২৩ জুনের মধ্যে এমপিওভুক্তির বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে সুষ্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত না হলে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা ‘অনশনসহ কঠোর আন্দোলনে’ যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। রাজধানীর জাতয়ী প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচির নবম দিনে সোমবার তারা এ কথা বলেন।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সোমবার সকালে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ‘নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন।’ জাতীয় প্রেস ক্লাবের উল্টো দিকের সড়কে তারা অবস্থান নেন। ১০ জুন থেকে টানা নবম দিনের মতো আন্দোলন করছেন তারা। শিক্ষকরা ‘লাগাতার’ কর্মসূচি বললেও পুলিশ তাদের সেখানে বেলা ২টার পর আর অবস্থান করতে দিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে শিক্ষকরা প্রতিদিন বেলা ১১টার মধ্যে এসে কর্মসূচি পালন করে ২টার দিকে চলে যান। তবে সোমবার থেকে দিনভর অবস্থান শুরু করেছেন তারা।

‘নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনে’র সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার  বলেন,’ঈদের ছুটির কারণে আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত সারাদেশের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ। এর মধ্যে যদি সরকার কোনো সিদ্ধান্তে না আসে, তাহলে আমরা বাধ্য হব অনশনসহ কঠিন কোনো কর্মসূচিতে যেতে।’ রোজা ও ঈদের সময়টাতে তারা আধাবেলা কর্মসূচি দিলেও সোমবার থেকে লাগাতার অবস্থানে গেছেন বলে জানান এই নেতা।

এর আগে একই দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন কর্মসূচিতে নামে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত অনশন করার পর প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে তারা অনশন ভঙ্গ করে ফিরে যান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা তখন তাদের দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন।

এবারের ২০১৮-১৯ বাজেটে এমপিওভুক্তির বিষয়ে সুষ্পষ্ট কিছু না থাকায় শিক্ষকরা আবার আন্দোলনে নামেন। এরপর ১১ জুন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে। বাজেটে উল্লেখ না থাকলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেটা থেকেই এমপিওভুক্ত করা হবে।

তবে আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে একাধিকবার আশার কথা শুনেছেন। কিন্তু তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় এখন মন্ত্রীর কোনো কথায় তারা আশ্বস্ত নন।

চাঁদপুর থেকে আসা শিক্ষক আবদুল লতিফ মজনু বলেন,’উনি বারবার আশা দেন। কিন্তু এখন আর ওনার ওপর ভরসা রাখতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার বাস্তবায়ন চাই।’

সংগঠনটির সভাপতি গোলাম মাহমুদন্নবী ডলার বলেন,’শিক্ষামন্ত্রী অন্তত ২৭ বার আমাদের আশা দিয়েছেন। এখন আর ওনার কথায় আশ্বস্ত হতে পারছি না। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ঘোষণা চাই।’

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ একজন নীতি নির্ধারকের সঙ্গে সোমবার কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন,’শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিবের আশ্বাস ও এমপিওভুক্ত করা হবে মর্মে সুষ্পষ্ট বক্তব্যের পরও শিক্ষকদের এমন আন্দোলন অব্যাহত রাখা রহস্যজনক। এর কোনো মানে নেই।’

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১২ জুন এমপিও ‘নীতিমালা-২০১৮’ ঘোষণা দেয়। এ নীতিমালা নিয়েও আন্দোলনরত শিক্ষকেরা আপত্তি জানিয়েছেন। আহমেদুল আশিক নাদিম নামের একজন শিক্ষক বলেন, যে নীতিমালা, সেটার বাস্তবায়ন করতে গেলে সারাদেশের ৫০০ স্কুলও এমপিওভুক্ত হবে না।

‘নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনে’র সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার  জানান, প্রস্তাবিত বাজেটে তাদের দাবির বিষয়টি সুষ্পষ্ট না হওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ। গত ১০ জুন থেকে আন্দোলনের মাঠে তারা নেমেছেন, সারাদেশের নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। তিনি বলেন, গত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসেও এমপিওভুক্তির দাবিতে ‘নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশন’-এর ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন। এখন প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তার একান্ত সচিব ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব। সেই আশ্বাসে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছিলেন।

সোমবার কর্মসূচি চলাকালে সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার আরও বলেন,’বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা ঢাকামুখী হচ্ছেন। সবার উপস্থিতিতে এ আন্দোলন জোরালো করে তোলা হবে।’

জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫ হাজার ২৪২টি। এসব প্রতিষ্ঠানে এক দশকেরও বেশি সময় থেকে বিনা বেতনে পাঠদান করছেন-এমন শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। ছয় বছর বন্ধ থাকার পর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সর্বশেষ ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ১ হাজার ৬২৪টি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজকে এমপিওভুক্ত করে।