হোটেল রুমে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ডা. জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকাকে। তার প্রেমিকই ঘটান এ নির্মম ঘটনা। অভিযুক্ত প্রেমিক রেজাউল করিম রেজা এ ঘটনার দায়ও স্বীকার করেছেন। মূলত প্রেমিকা জান্নাতুল প্রেমের সম্পর্কে দ্বিমত জানালে ক্ষোভ থেকে রেজা এ হত্যাকাণ্ড ঘটান। চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকাণ্ডের চার্জশিটে এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
সম্প্রতি রেজাউল করিম রেজাকে (৪২) একমাত্র আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ মাহফুজুল কবির চার্জশিটে এসব কথা উল্লেখ করেন।
২০২২ সালের ১০ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর পান্থপথের ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নামের আবাসিক হোটেল থেকে সদ্য এমবিবিএস পাস করা জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় তার বাবা শফিকুল আলম বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পরদিন চট্টগ্রাম থেকে অভিযুক্ত রেজাকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। রেজাউল আদালতে ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন।
জান্নাতুলের স্বজনরাও এই প্রেমের সম্পর্কে বাধা দেন
কলাবাগান থানার পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ মাহফুজুল কবির চার্জশিটে উল্লেখ করেন, ‘আসামি রেজাউল করিম রেজার সঙ্গে পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে ডা. জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকার (২৭) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জান্নাতুল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের গাইনি অ্যান্ড অপস’র ওপর প্রশিক্ষণরত ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি ওই প্রেমের সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করেন। এ নিয়ে রেজা ও জান্নাতুলের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। জান্নাতুলের আত্মীয়স্বজনও তাদের প্রেমের সম্পর্কে বাধা দেন।’
‘জান্নাতুল নাঈম ঢাকায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন। ২০২২ সালের ১০ আগস্ট বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে প্রতিদিনের মতো ঢামেক হাসপাতালে ক্লাসের কথা বলে বাসা থেকে বের হন। পরে বাসায় ফিরে না আসায় বাবা তার মোবাইলে করেন। কিন্তু তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর জান্নাতুলের বাবা ও পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে খবর পেয়ে কলাবাগান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ক্রাইমসিনের সহযোগিতায় জান্নাতুলের পরিচয় শনাক্ত করে। পুলিশ পরিবারকে ফোন করে জানায়, কলাবাগান থানার পশ্চিম পান্থপথের ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট আবাসিক হোটেলের চতুর্থ তলার একটি কক্ষে খুন হয়েছেন জান্নাতুল’ বলা হয় চার্জশিটে।
হত্যা করে হোটেলরুমে তালা মেরে চলে যান রেজাউল
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, ‘আসামি রেজাউল অন্যদের সহযোগিতায় ডা. জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকাকে হত্যা করে বাইরে থেকে রুমে তালা মেরে চলে যান। হোটেলের ম্যানেজার একাধিকবার ওই রুম তালাবদ্ধ দেখে আসামিকে ফোন করেন। আসামি রেজা আসি আসছি বলে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। পরে আসামির মোবাইল বন্ধ পেয়ে রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে কলাবাগান থানা পুলিশকে অবহিত করেন ম্যানেজার। এরপর পুলিশ হোটেলকক্ষ থেকে রক্তমাখা ছুরি ও গেঞ্জিসহ জান্নাতুলের মরদেহ উদ্ধার করে।’
রেজাউলের ব্যাগে আগে থেকেই ছুরি ছিল
চার্জশিটে পুলিশ কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ‘রক্তমাখা গেঞ্জিটি খুন করার সময় আসামি রেজাউলের পরনে ছিল। জান্নাতুল নাঈম ও আসামি রেজাউল হোটেলে অবস্থানকালে তাদের মধ্যে বারবার কথাকাটাকাটি হয়। উভয়ের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরুর একপর্যায়ে রেজাউলের গালে চড় মারেন জান্নাতুল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রেজাউল ব্যাগে রাখা ছুরি দিয়ে জান্নাতুলের পেটে ও গলায় উপর্যুপরি আঘাত করে নৃশংসভাবে খুন করেন।’
মামলা সূত্রে জানা যায়, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রেজাউল করিম রেজার সঙ্গে পান্থপথের ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নামের আবাসিক হোটেলে ওঠেন জান্নাতুল নাঈম। এরপর সুযোগ বুঝে রেজাউল তাকে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যান। ২০২২ সালের ১০ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে জান্নাতুলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জান্নাতুলের বাবা শফিকুল আলম বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি মামলা করেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ মাহফুজুল কবির বলেন, ‘নারী চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকাকে গলা কেটে হত্যার ঘটনার সত্যতা পেয়ে রেজাউল করিম রেজাকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছি।’
জান্নাতুল নাঈমের বাবা শফিকুল আলম বলেন, ‘আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। আমি ঘাতক রেজাউলের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছি।’
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com