শিয়রে শমন। ঝুলছে মৃত্যুর খাঁড়া।
তাই প্রাণ বাঁচাতে সৌদি রাজপরিবারের কয়েকজন যুবরাজ পালিয়ে ইরান চলে যেতে চেয়েছিলেন। সুন্নি আরবের চরম বিপক্ষে অবস্থানকারী শিয়া ইরান কি তাদের আশ্রয় দিতে চেয়েছিল? এমনই প্রশ্ন ওঠেছে বিভিন্ন মহলে।
অসমর্থিত সূত্র থেকে একাধিক অন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই রাজপুত্রের রহস্যজনক মৃত্যুর মাঝেই আরও রাজপুত্রের অন্তর্ধান ঘিরে জটিল হয়েছে পরিস্থিতি। ইরানে পালিয়ে গিয়েছেন সিংহাসনের আরও এক দাবিদার তুর্কি বিন মহম্মদ বিন ফাহাদ। তিনি প্রয়াত সৌদি বাদশা ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের বড় ছেলে।
এমনিতেই ইরান বনাম সৌদি আরব দ্বন্দ্বে আড়াআড়ি বিভক্ত হয়ে আছে। সৌদি রাজপরিবারের অন্তর্দন্দ্ব সেই ফাটল আরও চওড়া করবে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষ ক্ষমতাবলে আরব রাজপরিবারের অভ্যন্তরেই দুর্নীতি দমন অভিযান মধ্যেই নির্দেশ দেন বর্তমান যুবরাজ তথা দেশের ভবিষ্যৎ বাদশা মহম্মদ বিন সালমান। সেই নির্দেশের বলে ১১ জন যুবরাজ, একাধিক প্রাক্তন ও বর্তমান মন্ত্রী, নৌসেনা প্রধানকে বন্দি করা হয়েছে।
এরপরেই আরব ছাড়তে হুড়োহুড়ি শুরু হয়েছে। সিংহাসনের পথ মসৃণ করতেই কি বর্তমান সৌদি যুবরাজ মহম্মদ সালমান বিন আব্দুল্লাহ কঠোর পথ নিয়েছেন? এমনই প্রশ্নে আলোড়িত আরব দুনিয়া।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের দাবি, ইরানে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে থাকা রাজপুত্র মানসুর বিন মাকরিন ও তার ঘনিষ্ঠরা। হেলিকপ্টার যোগে রিয়াদ থেকে তেহরান চলে যাওয়াই তাদের লক্ষ্য ছিল। প্রাণ বাঁচাতে ইরানের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন তারা। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়। এটি কি নিছক দুর্ঘটনা নাকি অন্তর্ঘাত তা নিয়ে চলছে আলোচনা। আরও এক রাজপুত্র আবদুল আজিজ বিন ফাহাদের মৃত্যু নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। ধারণ করা হচ্ছে, তিনিও ইরান চলে যেতে চেয়েছিলেন।
সুন্নি সৌদি আরবের ঘরছাড়া যুবরাজদের আশ্রয় দিতে চেয়ে শিয়াপন্থী ইরানের অবস্থান ঘিরে চলছে বিশ্লেষণ। আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেল ভাণ্ডারের দুই প্রধান দেশের দ্বন্দ্ব সুবিদিত।
সৌদি রাজপরিবারের ভিতরে শুদ্ধিকরণ অভিযানের মধ্যেই ইরানের সমালোচনায় সরব বর্তমান আরব যুবরাজ সালমান বিন আবদুল্লাহ। তার অভিযোগ, ইরানের নির্দেশে ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠী সরাসরি সৌদি আরবে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে। হুতিদের মদতকারী হিসেবে চিহ্নিত ইরান। এই দাবি নাকোচ করে দিয়েছে ইরান সরকার।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, সৌদি আরবের অবস্থান , পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য হুমকি।
ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ ঘিরে ইরান ও সৌদি আরব পরস্পর বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। গৃহযুদ্ধে ইয়েমেনের নির্বাচিত সরকারকে অপসারিত করে রাজধানী সানা দখল করেছে হুতি গোষ্ঠী। তারা ইরানের সমর্থন পায়। আর অপসারিত সরকারকে সাহায্য করছে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আরব জোট সেনা। গত তিন বছর ধরে এই সংঘর্ষে রক্তাক্ত ইয়েমেন।