১০ দিন পার হলেও সাড়ে চার সহস্রাধিক সিনিয়র নার্স নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অপরাধীরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।
গত ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) এর অধীনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়াধীন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরে চার হাজার ছয়শ’ সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ওই পরীক্ষায় প্রায় ১৭ হাজার নার্স অংশ নেন। পরীক্ষার আগের রাতেই পিএসসির তৈরি শিউলি, হাসনাহেনা, রজনীগন্ধা, কামিনী নামে চার সেট প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়।
কথিত নার্স নেতাদের মাধ্যমে রাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র ৩০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকায় পরীক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি হয়। পরীক্ষার দিন প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর ছড়িয়ে পড়লেও পিএসির শীর্ষ কর্মকর্তারা নিছক গুজব বলে এটি উড়িয়ে দেন। তবে পরদিন ‘অনিবার্য কারণবশত’ পরীক্ষা বাতিল করা হয়।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা তদন্তে পিএসসির দুই সদস্য আবদুল জব্বার ও আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে ছয় সদস্য বিশিষ্ট পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।
আবদুল জব্বার ও পিএসসি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণ, প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িতদের শনাক্ত এবং ভবিষ্যতে প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণের দায়িত্ব দেয়া হয়।
আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বাধীন কমিটিকে প্রশ্নপত্র মুদ্রণের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে এবং বাতিল হওয়া পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণের দায়িত্ব দেয়া হয়।
পিএসসি দুটি কমিটি গঠন করলেও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা পরীক্ষা সংক্রান্ত সার্বিক কার্যক্রম পিএসসির এখতিয়ারভুক্ত বলে দায় এড়িয়ে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
একাধিক পরীক্ষার্থীর অভিযোগ, ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পাওয়া যায়। পরীক্ষার হলে গিয়ে তারা দেখেন, ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
অনুসন্ধান ও নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইল জেলার বাসিন্দা পিএসসির এক কর্মকর্তার (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদমর্যাদার) সহযোগিতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাঁচ নার্স নেতার মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র নার্স নেতাদের মাধ্যমে বিক্রি হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, একজন শীর্ষ নার্স নেতার নেতৃত্বে রাজধানীর বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্স নেতাদের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পরীক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি হয়।
ঢাকা, সিলেট, বৃহত্তর ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে একজন বিতর্কিত নার্স নেতার ( যার বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের খোলস পাল্টে বর্তমানে সরকার দলের কর্মী পরিচয় প্রদানের অভিযোগ রয়েছে) নেতৃত্বে প্রশ্নপত্র বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া খুলনা ও বরিশাল বিভাগে অন্য এক নার্স নেতার মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পাঠান হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সাবেক সিনিয়র নার্স নেতা জানান, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালের নার্স নেতাদের মোবাইল ফোনের কললিস্ট ধরে তদন্ত করলেই প্রমাণ পেয়ে যাবেন। যে সকল নার্স টাকা দিয়েছে তারা এখন নার্স নেতাদের কাছে টাকা ফেরত চাইছেন। একাধিক নার্স নেতা তাদের টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। টাকা ফেরত না দিলে অনেকেই নেতাদের নাম প্রকাশ করবেন বলে জানিয়েছেন।
সার্বিক তদন্ত কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিপিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক রোববার সন্ধ্যায় আর্থ টাইমস্ কে বলেন এ মাসের মধ্যেই দুটি তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কবে নাগাদ আবার পরীক্ষা হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই পরবর্তীতে বাতিলকৃত পরীক্ষার দিনক্ষণ ঠিক করা হবে।