তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে বরিশাল সিটি করপোরেশনসহ আশেপাশের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নগরীর উল্লেখযোগ্য অধিকাংশ সড়ক এখন পানির নিচে। ফলে কমেছে যানবাহন চলাচল। আর এতে করে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
সোম ও রবিবারের দিনভরের প্রবল বর্ষণে নগরীর নবগ্রাম রোড, বটতলা, অক্সফোর্ড মিশন রোড, মুন্সির গ্যারেজ, গোরস্থান রোড, হালিমা খাতুন স্কুল সংলগ্ন গলি, সাগরদী হাউজিং, বিএম স্কুল রোড, কালিবাড়ী রোড, ব্রাউন্ড কম্পাউন্ডসহ নগরীর অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। বছরের প্রথম সাত মাস অনাবৃষ্টির পর শ্রাবনের মধ্যভাগ পেরিয়ে বরিশাল অঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে।
গত তিনদিনের লাগাতর বর্ষণে এ অঞ্চলের প্রায় সব নদ-নদীর পানিই বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে মাঠে থাকা প্রায় পৌনে দুই লাখ হেক্টরের উঠতি আউশ ধান ছাড়াও অর্ধ লক্ষাধিক হেক্টরের আমন বীজ তলার বেশীরভাগই মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত খরিপ-১ ও চলতি খরিপ-২ মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে আউশ ও আমন থেকে প্রায় ২৩ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য নির্ধারন করেছে কৃষি বিভাগ। গত কয়েকদিনের মাঝারী বর্ষণে খোঁদ বরিশাল মহানগরীর অনেক এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সমূহ পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।
রবিবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকেই প্রবল বর্ষণে বরিশাল অঞ্চলে পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটে। ওইদিন সকাল ছয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত বরিশালে প্রায় ৯০ মিলিমিটার এবং সাগরপাড়ের খেপুপাড়ায় ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া বিভাগ।
মাঝারি ও ভারি বর্ষণে জলাবদ্ধতায় নাকাল বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। নগরীর মধ্যদিয়ে প্রবাহমান খালগুলো প্রায় ভরাট এবং যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ড্রেন দিয়ে পানি প্রবাহে বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগরবাসী।
সচেতন নগরবাসীর মতে, যেহেতু একটানা ভারি বর্ষণ হয়ছে, তাই নগরীতে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে মশার উপদ্রব বাড়ার পাশাপাশি চরম ভোগান্তিতে পড়বে সাধারণ জনগন। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর একটি বটতলা চৌরাস্তা থেকে সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কে দেখা গেছে, সড়কটির দক্ষিণ পাশ পুরোটাই পানির নিচে।
ওই এলাকার বাসিন্দা আফসার উদ্দিন মৃধা জানান, গত তিনদিন ধরে সড়কটির এমন অবস্থা। সড়ক সংলগ্ন ১৫ নম্বর ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় সব অলিগলি ও বাসাবাড়িতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
নগরীর গোরস্থান রোড, মানু মিয়া লেন, গফুর মিয়া লেন, দেব কুমার লেনের প্রায় প্রতিটি বাসার নিচতলায় ভারী বর্ষণের ফলে পানি উঠে গেছে। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাফিজ মিয়া বলেন, বসতবাড়ির চারদিকে পানি। এই এলাকার পানি নেমে যাওয়ার একমাত্র উৎস চৌমাথা খালটি ভরাট হয়ে গেছে। ড্রেন নির্মিত হয়েছে অপরিকল্পিভাবে। একারণে জলাবদ্ধতার কারণে এলাকাবাসীর জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রবিউল ইসলাম বলেন, নগরীর সব বড় ড্রেনের সংযোগ খালগুলোর সাথে। ড্রেনের মুখ ময়লায় আটকে যাওয়ায় নগরীর কিছু এলাকায় বৃষ্টির পানি নামছে না। পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের সংযোগ মুখ ও খালগুলো পরিস্কার করার কার্যক্রম চলছে।