তৃতীয় নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাকের মনোনয়ন এবং কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত বছরের জানুয়ারিতে। তাই তার মেয়াদ এখনও বাকি আছে; কিন্তু প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু এবং অন্য সিনিয়র নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে আসলে তারা দু’জন অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য কাজ করেছেন। এদিকে মুমিনুল বাহিনীর নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৩ জানুয়ারি; কিন্তু ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট দুদিন আগেই শেষ হয়েছে।
এখন সামনে বিপিএল। যেখানে জাতীয় দলের কোনো কার্যক্রম নেই। সব জাতীয় ক্রিকেটার বিভিন্ন দলের হয়ে অংশ নেবেন এই ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরে; কিন্তু আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি বিপিএল শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে চলে আসবে আফগানিস্তান ক্রিকেট দল।
মোহাম্মদ নবি, রশিদ খান ও মুজিবুর রহমানদের সঙ্গে ঘরের মাঠে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ টাইগারদের। সেখানে কারা বাংলাদেশ দল তৈরি করবেন, মিনহাজুল আবেদিন নান্নু-হাবিবুল বাশার সুমনরা কী এবারের নিউজিল্যান্ড সফরের মতো অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য দল সাজানোর দায়িত্বে থাকবেন? নাকি তাদের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করবে বিসিবি? কিংবা নতুন কাউকে প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব দেয়া হবে?
ক্রিকেট অনুরাগীদের মনে এসব প্রশ্ন আগে থেকেই ঘুরপাক খাচ্ছিল। তবে বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড মিশন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা আরও প্রবল হয়েছে। মোটকথা এ মুহূর্তে টিম বাংলাদেশ ও ক্রিকেটারদের নিয়ে আগ্রহ ও কৌতূহলের চেয়ে নির্বাচক কমিটি নিয়েই যত কথা, নানা গুঞ্জন। রাজ্যের জল্পনা-কল্পনা।
তবে ভেতরের খবর, বিসিবি নীতিনির্ধারকরাও নির্বাচক কমিটি নিয়েই চিন্তা-ভাবনা করছেন। ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির নতুন প্রধান জালাল ইউনুসও স্বীকার করেছেন, তারাও নির্বাচক কমিটি নিয়ে ভাবছেন এবং বেশ জোরেসোরেই এ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
জালালের পরিষ্কার স্বীকারোক্তি, ‘নির্বাচক কমিটি নিয়ে না ভেবে উপায়ও নেই। কারণ মিনহাজুল আবেদিন নান্নু আর হাবিবুল বাশারের সঙ্গে আমাদের (বিসিবি) চুক্তি শেষ হয়েছে। কাজেই আমাদের একটা কিছু করতে হবে।’
তারা কী ভাবছেন? চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া নান্নু আর বাশারের সঙ্গে কী নতুন করে আবার চুক্তি করবে বিসিবি? নাকি দু’জনকে একসঙ্গে বাদ দিয়ে দুজন নতুন নির্বাচককে দায়িত্ব দেয়া হবে? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে ক্রিকেট অপস চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেন, ‘এটা আমাদেরও মাথায় আছে। তবে চেঞ্জ বলবো কি বলবো না জানি না। নির্বাচকদের নিয়ে তো কিছু একটা করতে হবে। কন্ট্রাক্ট শেষ হয়েছে যখন, তখন তো কিছু একটা করতেই হবে। নতুন কন্ট্রাক্ট দেবো নাকি চেঞ্জ করে দিতে হবে সে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।’
নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজ শেষ হয়েছে এখন তারা নড়েচড়ে বসেছেন, একথা জানিয়ে জালাল বলেন, ‘সিরিজ যেহেতু শেষ হয়েছে, তাই এখন আমরা নির্বাচক কমিটি নিয়ে বসবো। ব্যাস, এতটুকুই শুধু বলতে পারি। কিন্তু চেঞ্জ হবে কি হবে না? নাকি নান্নু-সুমন নিজ নিজ পদে বহাল থাকবে- এ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারি না। করবোও না।’
তবে নির্বাচক কমিটি নিয়ে কিছুটা কনসার্ন বিসিবি, সেটা জানিয়েছেন জালাল। তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে চেঞ্জ করবো কি না- সেটা বলা সম্ভব হবে না। তবে সিলেকশন কমিটি নিয়ে আমাদের কনসার্ন আছে, এটা বলা যেতেই পারে। আমরা খোঁজার মধ্যে যে নেই, তাও বলছি না। দেখা যাক, কি করা যায়?’
জালাল ইউনুসের কথার সূত্র ধরে কোনো ক্লু পাওয়া কঠিন। তবে একদম ভেতরের খবর, বিসিবির শীর্ষ পর্যায়ে নির্বাচক কমিটি নিয়ে অনেক কথাই হয়েছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চরম ব্যর্থতার পর প্রধান নির্বাচক পদে পরিবর্তন আনার একটু চিন্তা ভাবনাও চলছিল।
দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সফল নির্বাচক ফারুক আহমেদকে আবারো প্রধান নির্বাচক পদে ফিরিয়ে আনার কথাবার্তাও শোনা গিয়েছিল। তবে জানা গেছে, ফারুক আগের মতো মাঠে আসেন না। ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ততাও কমে গেছে। এসব বিবেচনায় এনে ফারুক উপাখ্যান একরকম শেষ হয়েছে। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ফারুক ব্যবসায়িক কারণে ব্যস্ত। তাই তার প্রতি আগ্রহ কমার এটাও একটা কারণ।
ওপরের কথা শুনে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ তার সমবয়সী ও সাবেক সহযোগী মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর চেয়ারে বসছেন না। তাই বলে ভাববেন না যে, অন্য কারও প্রধান নির্বাচক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বিসিবির উচ্চপর্যায়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, প্রধান নির্বাচক নান্নু বেশ কয়েক মাস ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার পাত্র হয়ে গেছেন। তাকে নিয়ে রাজ্যের লেখালেখি চলছেই। ট্রলও হচ্ছে প্রচুর। যাতে বিবিসিও খানিক বিব্রত। নান্নুর সঙ্গে চুক্তি নতুন করে নবায়ন করলে তার ধাক্কাটা বোর্ডের ঘাড়ে আসতে পারে- এমন চিন্তা এবং শঙ্কাও আছে।
ঠিক গা বাঁচানোর জন্য বলা হয়তো ঠিক হবে না, তবে এটা জোর দিয়েই বলা যায়, প্রধান নির্বাচক পদ নিয়ে সাধারণ ক্রিকেট অনুরাগী মহলের একটা উল্লেখযোগ্য অংশের তীব্র সমালোচনা, কটূক্তি ও তীর্যক কথাবার্তা বোর্ডেও একটা অন্যরকম প্রভাব ফেলেছে। নান্নুকে নিয়ে বোর্ড রীতিমতো দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে। রাখলে সব সমালোচনার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে বিসিবি- এ চিন্তাও কুরে কুরে খাচ্ছে তাদের।
আবার নির্জলা সত্য হলো, নান্নুর জায়গায় প্রধান নির্বাচক পদে ওজনদার কাউকে সেভাবে পাওয়াও যাচ্ছে না। জানা গেছে, ক্রিকেট অপারেশরন্সের প্রধান পদে পরিবর্তন আসার পর জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর কথা ভাবা হয়েছিল এবং লিপুকে নাকি প্রস্তাবও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু উত্তর এসেছে নেতিবাচক।
সেটা অস্বাভাবিক নয়। গাজী আশরাফ হোসেন লিপু শুধু জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, ম্যানেজার ও সহকারী কোচই নন, তিনি এর আগে একাধিকবার বিসিবি পরিচালকও ছিলেন। ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজ করেছেন বেশ কয়েক বছর।
ওই পদের প্রধান হিসেবে এর আগেই নিজে জাতীয় দল পরিচর্যা, তত্ত্বাবধান ও নির্বাচক কমিটির ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন লিপু। এখন তার পক্ষে প্রধান নির্বাচকের পদ মানেই অবনমন। লিপু তা মানবেন কেন? নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, প্রধান নির্বাচকের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন লিপু।
তাহলে কী দাঁড়ালো? কে হবেন প্রধান নির্বাচক? নান্নুই থাকবেন? একদম ভেতরের খবর, শেষ পর্যন্ত সব হিসাব-নিকেশ করে বিসিবি সম্ভবত প্রধান নির্বাচক পদে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। নান্নুকে বাইরে নিয়ে হাবিবুল বাশারকে প্রধান নির্বাচকের পদে বসিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের দিকেই হয়তো এগোচ্ছে বিসিবি।
যেহেতু আব্দুর রাজ্জাক আছেন সঙ্গে। তাই হাবিবুল বাশার প্রধান হলে আরেকজনকে নিয়োগ দিতে হবে। জানা গেছে, হান্নান সরকার হচ্ছেন তৃতীয় নির্বাচক। জাতীয় দলের সাবেক এই ওপেনারের নির্বাচক হওয়ার খবরও এমুখ ওমুখ করে ক্রিকেট পাড়ায় উচ্চারিত হচ্ছে এখন।