অনলাইন ডেস্ক : ভৈরব শহরের কালীপুর গ্রামের একই পরিবারের জন্ম থেকেই অন্ধ ৪ ভাই-বোন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অন্ধ হওয়ায় তিন বোনের আজও বিয়ে হয়নি। পুরো পরিবার চলছে প্রতিবন্ধী আরেক ভাইয়ের সামান্য আয়ে। অভাবে আজ পর্যন্ত চোখের চিকিৎসা করাতে পারেননি তারা।
অন্ধ চার ভাই-বোন হলেন, ভৈরব পৌর শহরের কালিপুর গ্রামের মৃত ওসমান গনির বড় ছেলে মো. গোলাম হোসেন (৪৮), মেয়ে রহিমা বেগম (৪২), জায়েদা বেগম (৩৫) ও সাজেদা বেগম (৩০)। অন্ধ হওয়ার কারণে তিন বোনের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কেউ কোনোদিন আসেনি। তবে ভাই গোলাম হোসেন বিয়ে করেছেন। তার দুটি ছেলেও রয়েছে বলে জানান তিনি।
গোলাম হোসেন জানান, আমরা চার ভাইবোন জন্ম থেকেই অন্ধ। পৃথিবীর কোনো কিছুই আমরা দেখতে পাইনা। জন্মের পর শিশুকাল থেকে আমার বয়স ৩০ বছর পর্যন্ত বাবা আমার চোখের চিকিৎসা করেছেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামে চোখের অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি কিন্ত কাজ হয়নি।
আমার জন্মের পর একে একে জন্ম নেয়া তিনটি বোনও জন্মান্ধ। আমার চোখ চিকিৎসায় ভালো হয়নি, তাই বাবা বোনদেরকে আর চোখের ডাক্তার দেখাননি।
তিনি বলেন, ভৈরব উপজেলা সমাজ কল্যাণ অফিস থেকে প্রতিবন্ধী অন্ধ হিসেবে তিন বোন তিন মাস পর পর ২১০০ টাকা করে সরকারি ভাতা পায়, কিন্ত আমি পাই না। এ টাকা ছাড়া আমাদের আর কোনো আয় নেই। কিন্তু বোনদের সামান্য এ টাকায় সংসার চলে না।
জন্মান্ধ জায়েদা বেগম বলেন, আমরা মনে হয় পাপী। তা না হলে আল্লাহ আমাদের ৪ ভাই-বোনকেই অন্ধ করে জন্ম দিলেন কেন? চলতে পারি না, খেতে পারি না, পরার মতো কাপড়ও নেই আমাদের। সরকার তিন মাস পর পর ২১০০ টাকা ভাতা দেয়, কিন্ত এ টাকায় চলতে পারি না।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী এক ভাই শ্রমিকের কাজ করে কিছুটা সহযোগিতা করে। সরকার যদি আমাদেরকে চলার মতো অর্থ দিয়ে সহযোগিতাসহ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতো তাহলে হয়তো আমরা পৃথিবীর আলো দেখতে পেতাম।
অন্ধ আরেক বোন রহিমা বেগম বলেন, জীবনে বিয়ের সাধ পেলাম না। যদি বিয়ে হতো তাহলে দুটি সন্তান থাকলে আমাদের সেবা যত্নসহ খাবার জোগাড় করতো। এলাকার এমপি বা নেতারাও কোনোদিন আমাদের খবর নেননি। মাঝে মধ্যে মনে হয় বেঁচে থাকাটাই আমাদের বৃথা। সবসময় ভাই-ভাবিসসহ অন্যের সহযোগিতায় চলাফেরা করতে হয়। বছরে দুটি পুরান কাপড় পরেই কোনোরকম বেঁচে আছি।
অন্ধ সাজেদা বলেন, এ জীবন বড় কষ্টের। মাঝে মধ্যেই মনে হয় মরে যাব। কিন্ত মরার কোনো পথ পাইনা। জীবনে বড় সাধ ছিল পৃথিবী দেখার। কিন্ত এ সাধ হয়তো কোনো দিন আমাদের পূরণ হবে বলে মনে হয় না।
অন্ধ গোলাম হোসেন বলেন, শুনেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব দয়ালু। তিনি আমাদের চোখের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিলে তাকে প্রথমে দেখতাম।