প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সাবেক এমপি ইউসূফকে ঢাকায় আনা হচ্ছে

:
: ৬ years ago

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও রাঙ্গুনিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ ইউসূফকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে।

মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সড়ক পথে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়।

চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এ অসুস্থ সাবেক সংসদ সদস্যকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে চমেকে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ প্রশাসক এম এ সালাম, চমেক কলেজ অধ্যক্ষ ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, পরিচালক ব্রি. জেনারেল জালাল উদ্দিন ভূঁইয়া, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ছিদ্দিকুর রহমান, বিএমএ সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান, সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সল ইকবাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মুইজ্জুল আকবর চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, চমেক ছাত্র সংসদ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

দেশের অন্যান্য গণমাধ্যমে সাবেক এমপির চিকিৎসাবিহীন মানবেতর জীবন-যাপন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। যা প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। পরে তার নির্দেশে রোববার দুপুরেই মোহাম্মদ ইউসূফকে চমেকে নিয়ে আসা হয়।

২০০৭ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অবশ হয়ে পড়ে শরীরের একাংশ। এরপরই বাসা বাঁধে নানা রোগব্যাধি। পায়েও ধরেছে পচন। নিদারুণ কষ্টে ধুঁকে ধুঁকে মরছেন প্রায় ১০টি বছর। অর্থ ও চিকিৎসার অভাবে বর্তমানে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাঙ্গুনিয়া-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইউসূফ।

জীবন বাজি রেখে একাত্তরে যুদ্ধে করেছিলেন, জনগণের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন নিজেকে। নীতি ও আদর্শেও সদা অবিচল তিনি। ১৯৯১ সালে ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে ৮ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন যুদ্ধাপরাধী মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সাকা চৌধুরীর ভাই এনডিপি প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে। একসময়ে কমিউনিস্ট পার্টি ও পরে আওয়ামী লীগের নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য অকৃতদার ইউসূফের এ করুণ কাহিনী যে কারো হৃদয়কে নাড়া দেবে।

নির্লোভ নির্মোহ মোহাম্মদ ইউসূফের নিজের বলে কিছু নেই। দলের নেতা ও সংসদ সদস্য হয়েও গড়েননি কোনো বাড়ি-গাড়ি। দেশের কোথাও নেই একখণ্ড জমি। এমনকি নেই কোনো ব্যাংক-ব্যালেন্স। পৈতৃক সূত্রে যেটুকু পেয়েছিলেন তাও দান করে দিয়েছেন। বর্তমানে এক জরাজীর্ণ কুড়ে ঘরেই তার বসবাস।

জানা গেছে, ১৯৫১ সালে রাঙ্গুনিয়ার মরিয়মনগর ইউনিয়নের সওদাগরপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এ মহান ব্যক্তি। বাবা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ছিলেন কৃষক ও মা মাসুমা বেগম গৃহিণী। মাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হন রাঙ্গুনিয়া কলেজে। ঘরের মায়া ছেড়ে ওঠেন কলেজ ছাত্রাবাসে। আর সেখানেই শুরু রাজনীতির হাতেখড়ি। যুক্ত হন ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে। অল্প দিনেই কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ও সম্পাদকও নির্বাচিত হন।

এরপর ১৯৭৩ সালে স্নাতক শেষ করে কর্ণফুলী পাটকলে নেন কেরানির চাকরি। আর তখন থেকেই শুরু কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে পথচলা। এর হাল ধরে ১৯৯১ সালে আট দলীয় জোটের হয়ে রাঙ্গুনিয়া-৭ আসনে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একাত্তর পরবর্তী তিনিই প্রথমবার প্রভাবশালী ফজলুল কাদের চৌধুরীর পরিবারকে পরাজিত করেন।

ব্যক্তিজীবনে অন্যায় ও লোভের কাছে কখনো নীতিচ্যুত হননি সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইউসূফ। বিএনপিতে যোগ দেয়ার কোটি টাকার লোভও তাকে তার আদর্শ থেকে টলাতে পারেনি। দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে ছুটে বেড়িয়েছেন রাঙ্গুনিয়ার পথে প্রান্তরে। দল ও জনগণের জন্য নিজেকে নিবেদিত করলেও সংসার ধর্ম করা হয়ে উঠেনি তার।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউসূফের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ বাদশার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাবার প্রথম পরিবারের সন্তান তিনি। সেখানে আপন বলতে কেউ নেই তার। তবে অসুস্থতার পর থেকে সৎ ভাইদের কাছেই রয়েছেন। তাদের অবস্থাও যাচ্ছেতাই। তবুও সাধ্যমতো সেবা করছেন তারা।

তবে নানা সময়ে অনেকেই বর্ষীয়ান এ আওয়ামী নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্যের খোঁজ-খবর নিলেও, উন্নত চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসেনি কেউ। নিজ দলের সরকারের কোনো উদ্যোগও চোখে পড়েনি। বরং বিনা চিকিৎসায় ক্রমশ মৃত্যুর পথেই প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ।