অবশেষে ব্যাংকক থেকে দেশে আসছে কিংবদন্তি নির্মাতা আমজাদ হোসেনের মরদেহ। প্রায় ৬৫ লাখ টাকা খরচের কারণে মরদেহ দেশে আনা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ছিল তার পরিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কাটলো সব অনিশ্চয়তা। আগামী ২১ ডিসেম্বর শুক্রবার আমজাদ হোসেনকে নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাবেন তার ছোট ছেলে সোহেল আরমান।
এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন তার বড় ছেলে সাজ্জাদ হোসেন দোদুল। বুধবার রাতে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর বাবা ব্যাংককের হাসপাতালে মারা যান। সেখানে তার চিকিৎসার ব্যয় প্রায় ৬৫ লাখ টাকার মতো ছিল। যা আমাদের পক্ষে দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না। প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনা ব্যাপারটি জানতে পেরেছেন। তিনি সব দায়িত্ব নিয়েছেন। আগামী শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ বিমানে বাবাকে নিয়ে আসা হবে।’
দোদুল আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একজন শিল্পীর প্রতি যে মমতা দেখালেন তার বিপরীতে বলার মতো কোনো ভাষা আমার জানা নেই। তিনি প্রমাণ করেছেন ১৬ কোটি মানুষের নেত্রী তিনি। দল, আদর্শের চেয়ে মানুষের সেবা, শিল্পীর সম্মান তার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমার পরিবার তার কাছে চিরদিন ঋণী।’
উল্লেখ্য, গত ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টায় ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসাপতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আমজাদ হোসেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট জামালপুরে জন্ম করেন আমজাদ হোসেন। এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, গল্পকার, অভিনেতা, গীতিকার ও সাহিত্যিক হিসেবে সফলতা পেয়েছেন।
আমজাদ হোসেন ১৯৬১ সালে ‘হারানো দিন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় দিয়ে চলচ্চিত্র শুরু করেন তিনি। তার প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘আগুন নিয়ে খেলা’ ১৯৬৭ সালে মুক্তি পায়। পরিচালক হিসেবে ‘নয়নমনি’ (১৯৭৬), গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮), ভাত দে (১৯৮৪) তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র।
‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ও ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করেন। ১৯৭৬ সালে ‘নয়নমনি’ চলচ্চিত্রের জন্য পেয়েছেন তিনটি জাতীয় পুরস্কার। তার হাতে ওঠে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার, শ্রেষ্ঠ প্রযোজক আর শ্রেষ্ঠ পরিচালকের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেছে। আমজাদ হোসেনের দুই পুত্র নাট্যনির্মাতা সাজ্জাদ হোসেন দোদুল ও অভিনেতা-নির্মাতা সোহেল আরমান।