প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস : চাকরি পাচ্ছেন সংগ্রামী চাঁদের কণা

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

চার দিন ধরে সরকারি চাকরির দাবি নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন করে আসছিলেন ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে মাস্টার্স পাস করা শারীরিক প্রতিবন্ধী চাঁদের কণা। অনশনে বসার পর রোদে পুড়েছেন, বৃষ্টিতেও ভিজেছেন। তবে দাবি আদায়ে অনশন ভাঙেননি তিনি।

অনশনের চতুর্থ দিন শনিবারেও প্রেস ক্লাবের সামনে হুইল চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায় চাঁদের কণাকে। তার আবদার, প্রধানমন্ত্রী সহায় হলে তার একটা চাকরি হবে।

অবশেষে অনশন ভেঙেছেন চাঁদের কণা। কারণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে চাকরির আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে চাকরির আশ্বাস পাওয়ার পর তিনি শনিবার বিকেলে অনশন ভাঙেন। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার মাধ্যমে যোগ্যতা অনুযায়ী সমাজসেবা অধিদফতরে চাকরির ব্যাপারে আশ্বাস পান তিনি।

এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, চাঁদের কণার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে এসেছে। তিনি মেয়েটির চাকরির ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। হয়তো একটু সময় লাগবে। তবে তার চাকরি হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশের অনগ্রসর জনগোষ্ঠী বিশেষ করে প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, অতীতে কোনো সরকার তা করেনি।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চাঁদের কণা বলেন, আমার মা নেই। মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই আমি মা ডেকেছি। তার কাছে চাকরির আবদার করেছি। তিনি আমার প্রতি মমতার হাত বাড়িয়েছেন। চাকরির আশ্বাস দিয়েছেন। আজ বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্যারের মাধ্যমে আমি চাকরির আশ্বাস পেয়েছি। আমি অনেক খুশি। আমি কৃতজ্ঞ মায়ের (প্রধানমন্ত্রী) প্রতি। আমি কৃতজ্ঞ গণমাধ্যমের প্রতি। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার মতো প্রতিবন্ধীর আবদার পৌঁছে দিয়েছে যে গণমাধ্যমই। যখন আমি প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে চাকরির নিয়োগপত্রটি নেব, তখনও গণমাধ্যমকে পাশে চাই।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাসও দিয়েছেন চাঁদের কণা। তিনি লিখেছেন-

‘অবশেষে আমার কষ্ট ও সবার ভালোবাসার হলো জয়…

আমি কৃতজ্ঞ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার মমতাময়ী মা শেখ হাসিনার কাছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আশ্বস্ত করেছেন, যোগ্যতা অনুযায়ী সমাজসেবা অধিদফতরে আমার চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। আজ শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার রফিকুল ইসলাম রনির মাধ্যমে আমাকে বিষয়টি অবগত করেন।

এরপর বিকেল পাঁচটার দিকে মোবাইলে আমার সাথে (প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া) কথা বলে তিনি এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। আমি আরো কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, সব প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের প্রতি। যারা আমাকে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আজ আমি অনশন ভেঙে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।

তবে একটা কথা আবারো বলছি, আমি শুধু চাকরির জন্য অনশনে বসিনি। একই সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার মমতাময়ী মা শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করা আর তার একটু ভালবাসা পাবার জন্য এসেছিলাম। আশা করছি আমার চাকরির নিয়োগপত্র সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মা তার নিজ হাতে আমাকে তুলে দেবেন। আর আমার মাথায় হাত রেখে আমার মা আমার জন্য দোয়া করবেন। এটাই এখন আমার একমাত্র প্রত্যাশা। সবাই ভালো থাকবেন, আমার জন্য দোয়া করবেন। আমিন।’

উল্লেখ্য, মাত্র ৯ মাস বয়সে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে পায়ের কর্মক্ষমতা হারান চাঁদের কণা। তবে ভেঙে পড়েননি। সামলে নিয়েছেন নিজেকে। লড়াই করেছেন। দুই হাতের ওপর ভাগ্যের চাকা সচল রেখেছেন। দুই হাতে ভর দিয়েই চলাচল করেছেন। ওই দুই হাতের লেখনীতেই ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে ২০১৩ সালে প্রথম শ্রেণিতে মাস্টার্স শেষ করেন চাঁদের কণা।

টিভি-রেডিওতে সংবাদপত্র পাঠ, টিভি প্রোগ্রাম গ্রন্থনা, উপস্থাপনা ও পরিচালনা, নাটক লেখা, নাটকে অভিনয়, কম্পিউটারের সকল কাজ, স্ক্রিপ্ট তৈরি, ছবি আঁকা, ভিডিও সম্পাদনাসহ হাতের কাজে নানা ধরনের পারদর্শী তিনি।

মা হাসনা হেনা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর থেকে পেনশনের সামান্য টাকায় কোনো রকমে টিকে আছে চাঁদের পরিবার। মা যখন মারা যায় তখন তিনি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। মায়ের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর কারণে আর্থিক চাপে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। তবে হাল ছাড়েননি। একটি বেসরকারি চ্যানেলে সামান্য বেতনে চাকরি করে চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। পড়াশোনা শেষে সরকারি একটি চাকরির জন্য চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু কিছুতেই মিলছিল না সে চাকরি।

চাকরি দাবি নিয়ে গত ৪ দিন আগে থেকে প্রেসক্লাবে অনশনে বসেন তিনি। অবশেষে শনিবার বিকেলে চাকরির আশ্বাসের বার্তা পাঠিয়ে চাঁদের কণার অপেক্ষার অবসান ঘটালেন প্রধানমন্ত্রী।