প্রথম সেঞ্চুরিতে কুমিল্লার নায়ক ‘কোটি টাকার’ তাওহীদ

:
: ৫ মাস আগে

সাইফ হাসানকে স্লগসুইপে জোড়া ছক্কার পর দুই বল ডট। একই শট খেলতে গিয়ে সাইফের কুইকার ডেলিভারি দুবারই লাগে তাওহীদ হৃদয়ের পায়ে লাগে। বিধ্বস্ত সাইফ এলবিডব্লিউর আবেদন না করতেই রিভিউ চেয়ে বসেন! আম্পায়ার অধিনায়কের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় ছিলেন। মিড অফে দাঁড়ানো তাসকিন আহমেদ রিভিউ বাতিল করেন।

 

পরপর দুই চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়া তাওহীদ তৃতীয়বারের চেষ্টায় এবার আছড়ে ফেললেন বাউন্ডারির বাইরে। শুধু সাইফ নন, তাসকিন-শরিফুলদের বিধ্বস্ত করে তাওহীদ তুলে নেন স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে প্রথম সেঞ্চুরি। সঙ্গে দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স পায় চার উইকেটের রোমাঞ্চকর এক জয়।

দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের এই তরুণ তুর্কি মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ঝরিয়েছেন ছক্কা বৃষ্টি। ডাউন দ্য উইকেটে এসে তাসকিনকে যেভাবে লং অফে আছড়ে ফেললেন সেটি ক্রিকেট ভক্তদের মনে গেঁথে থাকবে অনেক দিন। ৫৩ বলে সেঞ্চুরির পর এই তাসকিনকেই ফ্লিক করে দারুণ ছয়টি ছড়িয়ে যায় আগের শটকেই! স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে তাওহীদের প্রথম সেঞ্চুরিটি চলমান বিপিএলে কোনো ব্যাটারের প্রথম।

 

তার এমন সাহসী ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত ঢাকার ১৭৬ রানের লক্ষ্য সহজে পৌঁছে যায় ভিক্টোরিয়ান্স শিবির। টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ঢাকা ১৭৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে। তাওহীদ ৫৭ বলে ১০৮ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন। ৭ টি ছক্কা ও ৮টি চারে সাজিয়েছেন চোখ ধাঁধানো ইনিংসটি।

এই তাওহীদ গতবার খেলেছেন রানার্সআপ সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪০৩ রান করে নজর কেড়েছিলেন। জায়গা করে নেন জাতীয় দলে। কথায় আছে রতন চিনতে ভুল করেন না মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। কোটি টাকার বেশি খরচ করে ড্রাফটের আগেই নিজেদের শিবিরে নিয়ে নেন ফ্র্যাঞ্চাইজিটির প্রধান কোচ।

 

ঢাকার তাসকিন-শরিফুলদের এক প্রকার একাই নাচিয়েছেন তাওহীদ। মাঝে তাকে দারুণ সঙ্গ দেন ব্রুক গেস্ট। দুজনের জুটি থেকে আসে ৬৯ বলে ৮৪ রান। ৩৫ বলে ৩৪ রান করে গেস্ট সাজঘরে ফিরলে ভাঙে এই জুটি। গেস্ট ফিরলে রেইফার এসে ফেরেন দ্রুত (৬)। এরপর জাকের আলী অনিককে নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান কোটি টাকার তাওহীদ।

লক্ষ্য তাড়ায় দলীয় ৯ রানে লিটন কুমার দাসকে হারায় কুমিল্লা। এরপর ১৪ রানের ব্যবধানে আরেক ওপেনার উইল জ্যাকস এবং চোট কাটিয়ে ফেরা ইমরুল কায়েসও ফিরলে চাপে পড়ে তারা। কিন্তু তাওহীদ সেই চাপকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন। ঢাকার হয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন শরিফুল। খরুচে ছিলেন তাসকিন। ৪৫ রান দিয়ে কোনো উইকেটের দেখা পাননি।

এর আগে পিঞ্চ হিটার হিসেবে চতুরঙ্গ ডি সিলভাকে ওপেনিংয়ে পাঠিয়েছিল ঢাকা। খুব একটা ভালো করতে পারেননি তিনি। ১৩ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ১৪ রানে থামে তার ইনিংস। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন সাইফ হাসান ও নাঈম শেখ। শুরুতে একটু সময় নিচ্ছিলেন দুজনে। তবে থিতু হওয়ার পর প্রতি আক্রমণে গিয়ে দ্রুত রান তোলেন। ৩৪ বলে তাদের জুটি রান পঞ্চাশে পৌঁছায়। ৬৮ বলে পৌঁছায় সেঞ্চুরিতে।

 

১৭তম ওভারে বোলিংয়ে ছক্কা হজম করে ওভারের শুরু করলেও সাইফ ও নাঈমকে একই ওভারে ফেরান কুমিল্লার ক্যারিবিয়ান বোলার ফোর্ড। সাইফ শর্ট বল উড়াতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন। নাঈম হিট আউট হন। সাইফ হাসান ৪২ বলে ৫৭ রান করেছেন ৪ চার ও ৩ ছক্কায়। সর্বোচ্চ ৬৪ রান করা নাঈম শেখ ইনিংসটি সাজান ৪৫ বলে। ৯ চার ও ১ ছক্কা হাঁকিয়েছেন বাঁহাতি ওপেনার।এরপর রানের গতি কমে যায়। তবুও চেষ্টা চালান রস ও মেহরাব। ১১ বলে ২১ রান করেন রস। মেহরাব ৮ বলে করেন ১১ রান।

কুমিল্লার সেরা বোলার ফর্ডে ৩৫ রানে নেন ৩ উইকেট। ১ উইকেট পেয়েছেন আলিস ইসলাম। মোস্তাফিজ ছিলেন বিবর্ণ। ২ ওভারে দিয়েছেন ৩৩ রান।