‘পঞ্চ পান্ডব’ আর ‘ফ্যান্টাস্টিক ফাইভ’- যে নামেই ডাকা হোক না কেন, কঠিন সত্য হলো পাঁচ সিনিয়র মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর হাতেই ৯ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। তাদের ডানায় ভর করেই সাফল্যের মঞ্চে ওঠে টাইগাররা। সিনিয়ররা যতটা স্বপ্রবিভ, সাবলীল। উজ্জ্বল। অপেক্ষাকৃত তরুণরা ততটাই আড়ষ্ঠ, জুবুথুবু ও অনুজ্জ্বল।
প্রশ্ন উঠেছে, টি-টোয়েন্টি সিরিজে নেই ওয়ানডের সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তার অভাব পূরণ করবেন কে? বাকি চার সিনিয়রের সাথে তরুণদের রসায়ন বা ‘কেমিস্ট্রি’ কেমন হবে? টি-টোয়েন্টি সিরিজে কি তরুণরা উঠে আসবেন? সবাই না হোক, অন্তত এক বা দুইজন জ্বলে উঠতে পারবেন তো? সিনিয়রদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, হাতে হাত ধরে দলে অবদান রাখতে পারবেন?
যদি তা রাখতে পারেন, অন্তত দুই তরুণ যদি তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভাল খেলতে পারেন, তাহলে ভাল কিছু হতেও পারে। কারণ, ওয়ানডে সিরিজে ভাল খেলে তামিম, সাকিব পুরোপুরি চার্জড আপ। দুই বন্ধু পাল্লা দিয়ে ভাল খেলেছেন। তাদের ‘বৃহষ্পতি এখন আবার তুঙ্গে’। তিন ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি (১৩০*, ১০৩) আর এক হাফ সেঞ্চুরিতে (৫৪) তামিম করেছেন ২৮৭ রান।
সাকিবও কম যাননি। তিন নম্বরে ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলেছেন। তামিমের সাথে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বড় পার্টনারশিপও তৈরি করেছেন। দুই বিগ ফিফটিতে (৯৭, ৫৬ ও ৩৭) সাকিবের ব্যাট থেকে এসেছে ১৯০ রান। আর একটি করে ফিফটি হাঁকিয়ে দুই ভায়রা ভাই- মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ করেছেন ১১২ রান করে। পরিসংখ্যানই বলে দেয়, এই চার পরিণত ও অভিজ্ঞ উইলোবাজ ফর্মে আছেন। ব্যাট কথা বলছে। আত্মবিশ্বাস এবং আস্থা তুঙ্গে।
কিন্তু ওয়ানডেতে তাদের সাথী হতে পারেননি এনামুল হক বিজয় আর সাব্বির রহমান। তিন ম্যাচে (০+২৩+১০) সর্বোচ্চ ২৩সহ এনামুল হক বিজয় করেছেন মোটে ৩৩। আর সাব্বিরের অবস্থাও তথৈবচ (৩+১২+১১) ২৬। কম বল খেলার সুযোগ পাওয়া মোসাদ্দেক বিশে সুবিধা করতে পারেননি। তার সংগ্রহ (৩+১১) দুই খেলায় ১৪।
ওই তিনজনের মধ্যে বিজয় টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে নেই। সাব্বির ও মোসাদ্দেক দুজনই আছেন। সাথে ওয়ানডেতে এক ম্যাচেও সুযোগ না পাওয়া লিটন দাসও আছেন। আর বাইরে থেকে যুক্ত হয়েছেন সৌম্য সরকার আর আরিফুল হক। এখন প্রশ্ন হলো, বুধবার সকালে সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে কেমন হবে বাংলাদেশের টিম কম্বিনেশন?
ক’জন ব্যাটসম্যান খেলবেন এই ম্যাচে? পেসার খেলানো হবে কত জন? ক’জন স্পিনারই বা থাকবেন? প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু একাদশ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। কারণ টিম মিটিং বাংলাদেশ সময় রাত দশটায়। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত আটটার দিকেও কোচ স্টিভ রোডসের সঙ্গে সেন্ট কিটসে মুঠোফোনে কথা হয়েছে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর। কিন্তু তখনো দল চূড়ান্ত হয়নি। কোচ স্টিভ রোডসের উদ্বৃতি দিয়ে প্রধান নির্বাচক জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সময় রাত দশটায় টিম মিটিং। সেখানেই চূড়ান্ত হবে দল।’
তবে একাদশের সম্ভাব্য রূপরেখা প্রায় চূড়ান্ত বলে জানা গেছে। লেট মিডল অর্ডার আরিফুল হককে ধরে একাদশে আট ব্যাটসম্যান খেলানোর চিন্তা ভাবনা একরকম চূড়ান্ত। কারা সেই আটজন? ওপেনার তামিম ইকবাল, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোমাদ্দেক হোসেন সৈকত এবং আরিফুলই সেই সম্ভাব্য আট ব্যাটসম্যান।
তার মানে ব্যাটসম্যান কোটায় দলে জায়গা হচ্ছে না সাব্বির রহমান রুম্মনের। মেধা, সামর্থ্য যথেষ্ঠ; কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই নিজের মেধা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে পারছেন না সাব্বির। ওয়ানডে সিরিজে দলের প্রয়োজন মেটাতে পারেননি। প্রায় তিন ম্যাচেই শেষ দিকে তার কাছে প্রত্যাশা ছিল কিছু বিগ হিটের; কিন্তু সাব্বির হাত খুলে তা খেলতে পারেননি।
সেই না পারায় বুধবার সকালে প্রথম ম্যাচে সম্ভবত তার জায়গা হচ্ছে না। তার জায়গায় আরিফুলকে বিবেচনায় আনা হচ্ছে। এই তরুণ এখন পর্যন্ত বেশি সময় উইকেটে থাকার তেমন সুযোগ পাননি। হাতে গোনা অল্প কিছু বল খেলেছেন মাত্র; কিন্তু তার যে সাহস আছে, বিগ হিট নেবার সামর্থ্যও আছে- তা জানান দিয়েছেন।
দেরাদুনে আফগানদের সাথে শেষ বলে প্রায় বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জিতিয়েই দিয়েছিলেন আরিফুল। এছাড়া স্লো মিডিয়াম বোলিংটাও তার একটা প্লাস পয়েণ্ট। অন্তত দুই ওভার অনায়াসে বোলিং করতে পারেন রংপুরের এ ২৫ বছর বয়সী সাহসী যুবা। জানা গেছে, তাই তাকে বিশেষ বিবেচনায় রাখতে ইচ্ছুক অধিনায়ক সাকিব।
অন্যদিকে অফ স্পিন বোলিংটা আছে। সেই সাথে মিডল অর্ডারে ব্যাটিং। তাই মোসাদ্দেককেও নাকি খেলানোর কথা ভাবা হচ্ছে। মেহেদি হাসান মিরাজ ওয়ানডেতে ভাল বল করেছেন। তার অফ স্পিন বোলিংটা কার্যকর হয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশে ক’জন বাঁ-হাতি আছেন। তাই অফ স্পিনার মিরাজের খেলার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এখন বাকি থাকলো দুটি মাত্র পজিশন।
ওই জায়গাটি দুই পেস বোলার দিয়েই পূর্ণ করা হবে। একজন তো মোস্তাফিজ। কাটার মাস্টার অটোমেটিক চয়েজ। আর একজন কে হবেন? আবু হায়দার রনি, না আবু জায়েদ রাহী? নাকি টি টোয়েন্টির শেষ ম্যাচে ডেথ ওভারে দারুণ বল করা রুবেল? এই তিনজনের মধ্যে বাঁ-হাতি রনির সুযোগ কম। ক্রিকেটীয় যুক্তিতে মোস্তাফিজের সাথে আরেকজন বাঁ-হাতি পেসার খেলানোর সম্ভাবনা খুব কম। সে ক্ষেত্রে আবু জায়েদ রাহি কিংবা রুরেবল হোসেনের যে কোন একজনের সম্ভাবনাই বেশি।
ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৪৯ নম্বর ওভারে ২২ রান দেয়ার পরও সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচে রুবেলকে নিয়ে বাজি খেলেছিলেন মাশরাফি। ওয়ানডে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়েছিলেন রুবেল। দেখা যাক, টি-টোয়েন্টিতেও কি তাকে নিয়ে বাজি ধরবেন সাকিব? না ৭ জুন দেরাদুনে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৪ ওভারে ২৭ রানে ২ উইকেট পাওয়া রাহীতেই আস্থা রাখবেন তিনি? সেটাই দেখার।
ওই ম্যাচে আরও এক বোলার কিন্তু দুই উইকেট দখল করেছিলেন। বল হাতে উদ্বোধন করে ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়েছিলেন বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল অপু। তার সম্ভাবনাও কিন্তু উড়িয়ে দেয়া যায় না। কে জানে, মিরাজের জায়গায় শেষ মুহূর্তে নাজমুল অপুকেও বেছে নেয়া হতে পারে।
সম্ভাব্য একাদশ : তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহীম, সাকিব-আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, আরিফুল হক, মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ/নাজমুল অপু, রুবেল হোসেন/ আবু জায়েদ রাহী।