প্রথমার্ধে ৩ গোলে পিছিয়ে থেকেও ভারতকে হারাল বাংলাদেশ

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

ফুটবলে এমন স্মরণীয় দিন গত এক দশকেও এসেছিল কি না সন্দেহ। বরং তলানীতে নামতে নামতে বাংলাদেশের ফুটবল নিয়েই যেন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে এ দেশের মানুষ। এমনই এক পরিস্থিতিতে দেশের ফুটবলের প্রতি আবারও নজর ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হলেন অনুর্ধ্ব-১৮ দলের ফুটবলাররা।

ভুটানের থিম্পুতে চলমান সাফ অনুর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপে আজ বাংলাদেশ মুখোমুখি হয়েছিল ভারতের। প্রথমার্ধেই ৩ গোল হজম করে বসে বাংলাদেশের যুবারা। সবাই ধরে নিয়েছিল শোচনীয় পরাজয় নিয়েই মাঠ ত্যাগ করতে হবে বাংলাদেশের ফুটবলারদের।

কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে অসাধারণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় যুবারা। গুনে গুনে ভারতের জালে ৪বার বল প্রবেশ করায় বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৮ দল। শেষ পর্যন্ত ৪-৩ গোলের ব্যবধানে অবিস্মরণীয় এক জয় নিয়ে মাঠ ত্যাগ করে বাংলাদেশের যুব ফুটবল দল।

দেশের ফুটবলের ইতিহাসে যে কোনো পর্যায়ে প্রথমার্ধে ৩ গোল হজম করে দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৪ গোল দিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ত্যাগ করার ঘটনা এর আগে আর কখনও ঘটেনি। এই প্রথম এমন ইতিহাসের জন্ম দিল অনুর্ধ্ব-১৮ দলের ফুটবলাররা।

ভারতের প্রথম গোলটি হয়েছে বাংলাদেশের দুই ডিফেন্ডার টুটুল হোসেন বাদশা ও মাহমুদুল হাসান কিরণের ভুলে। নিজেদের বক্সের মাথা থেকে ভারতের পানওয়ার শিলের লম্বা শট পড়ে বাংলাদেশের বক্সের মাথায়; কিন্তু ওই দুই ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে বাংলাদেশের জালে বল ঠেলে দেন লালাওয়ামপুইয়া। ১৮ মিনিটে এগিয়ে যাওয়া ভারত ব্যবধান দ্বিগুণ করে ৩২ মিনিটে রেফারির উপহার দেয়া এডমুন্ড লালরিন্ডিকার পেনাল্টি গোলে। প্রথমার্ধের বাড়িয়ে দেয়া সময়ের তৃতীয় মিনিটে ভারতের তৃতীয় গোল করেন রেবেলে আরনল্ড।

সবাই ভেবেছিলেন ম্যাচটি ওখানেই শেষ। দ্বিতীয়ার্ধে বরং গোলের বোঝা বাড়ার শঙ্কাতেই ছিলেন সবাই। গ্যালারিতে ছিল অনেক ভারতীয় সমর্থক। স্থানীয়রাও চিল্লিয়েছে ভারত-ভারত বলে। এমন এক প্রতিকূলতার মাঝে বাংলাদেশ যেন নতুন এক দল হয়ে শুরু করে দ্বিতীয়ার্ধ। জাফর ইকবাল-রহমত মিয়ারা হয়ে গেলেন মেসি-রোনালদো। শুরু থেকেই চেপে ধরলো ভারতীয়দের। ফল আসলো ১০ মিনিটেই- বিপলু আহমেদের কর্নার থেকে জাফর ইকবালে দুর্দান্ত হেডে স্কোর ৩-১।

কী করবে বাংলাদেশ? বড়জোর ব্যবধান কমানো। বেশি ভালো করলে ড্র; কিন্তু জাফর ইকবালরা ঝুলিতে যে যাদুর কাঠি লুকিয়ে রেখেছিলেন তা কেন জানতো। ৫৫ মিনিটে ব্যবধান ৩-১, ৬০ মিনিটে ৩-২। আক্রমণ ঠেকাতে গোলরক্ষককে ব্যাকপাস দিয়েছিলেন ভারতীয় এক ডিফেন্ডার।

গোলরক্ষক ব্যাকপাস ধরেলও রেফারি এড়িয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করলেও বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের আবেদনে বক্সের মধ্যে ইনডাইরেক্ট ফ্রি-কিক দেন রেফারি। রহমত মিয়া কাঁপিয়ে দেন ভারতের জাল। থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামের গ্যালারি তখন স্তব্ধ। ভারতীয়দের আপ্রাণ চেষ্টা বাংলাদেশকে আর গোল করতে না দেয়ার। দাঁতে দাঁত চেপে তারা ঠেকাতে লাগলো লাল-সবুজ জার্সিধারীর আক্রমনণ বৃষ্টি। শেষ পর্যন্ত পারলো কই?

বাংলাদেশ ম্যাচে সমতা আনে ৭৪ মিনিটে সুফিলের দেয়া গোলে। ভারতীয় ডিফেন্ডারের ভুলপাস ধরে বাম দিক থেকে ক্রস করেছিলেন জাফর ইকবাল। ফাঁকায় দঁড়ানো সুফিলের হেডে ৩-৩। দুর্দান্তভাবে ম্যাচে ফেরা বাংলাদেশ তখন আরো চেপে ধরে ভারতীয়দের। নির্ধারিত সময় শেষে মনে হয়েছিল দুর্দান্ত এক ড্র নিয়েই হোটেল ফিরছে বাংলাদেশ; কিন্তু অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটেই জাফর ইকবাল আরেকটি হেডে থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে লিখলেন ফুটবলের নতুন এক রূপকথা। সাবাশ বাংলাদেশ।