জীবনের এ বেলায় এসেও নিজেকে বৃদ্ধ মনে হয় না। জীবন তৃষ্ণার আবেগে এখনও নিজেকে তরুণ মনে হয়। যা পেলাম, তাতে তৃপ্ত। প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তিই বেশি। নইলে কী আর এত ভালোবাসা!
সংবর্ধিত হয়ে নিজের অর্জন এবং অন্যের ভালোবাসা নিয়ে অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে এভাবেই বলছিলেন বাঙালি মনীষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে লেখক, গবেষক অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের অশীতিবর্ষপূতি উদযাপন উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আনিসুজ্জামান সম্মাননা গ্রন্হের মোড়ক উন্মেচন করা হয়।
চন্দ্রাবতী একাডেমির আয়োজনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের অশীতিবর্ষপূতি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন এবি ব্যাংক লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মসিউর রহমান চৌধুরী।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের জীবন এবং সৃষ্টিকর্মের ওপর আলোচনা করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, নারীনেত্রী মালেকা বেগম, মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, প্রাবান্ধিক মফিদুল হক, কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ‘সুরের ধারা’ শিশুবৃন্দ মাঙ্গলিক সংগীত পরিবেশন করে। আলোচনার শুরুতেই শংসাপত্র পাঠ করেন জাহীদ রেজা নূর।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, দীর্ঘ জীবনের কোনো বিশেষত্ব নেই, যদি না জীবনে সৃষ্টি থাকে। বাবার নিকট থেকে সময়নুবর্তিতা শিখেছিলাম আর সত্যানুবর্তিতা শিখিয়েছিলেন মা।
মা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ১৯৫২ সালে শহীদ মিনার নির্মাণের পরপরই মা আমাকে আর বাবাকে নিয়ে শহীদ মিনারে যান। সেখানে সবাই ফুল দিচ্ছিল শহীদের স্মরণে। মায়ের কাছে ফুল ছিল না। মা হাতের বালা খুলে দিয়েছিল শহীদ মিনারের বেদিতে।
জীবনের অতৃপ্তি প্রসঙ্গে বলেন, ‘জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক একদিন আমাকে বলেছিলেন, আপনি তো আর পড়ালেখা করলেন না।’ এটিই আমার কষ্ট এবং হতাশার।
প্রধান অতিথি আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বয়সে ছোট হলেও অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আমার বুক রেফারেন্স। তার কাছ থেকে এখনও শিখি।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে সমাজের বাতিঘর উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বাতিঘরের আলো দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্ব দরবারেও আলোকিত হচ্ছে। তার মতো গুণীজনের সান্নিধ্য পেয়ে আমরা গর্বিত।