গোটা দল যখন বিপর্যয়ে তখন নির্দিষ্ট একজনের দিকে আঙুল তোলা কতোটা যুক্তিসঙ্গত সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে? আর সেই একজন যদি হয় গোটা দলের বিজ্ঞাপন তাহলে সেই প্রশ্ন তোলা আদৌ সমীচীন? প্রশ্ন তোলাই যায় তবে যাকে নিয়ে এতো আলোচনা তিনিই কিন্তু বারবারই ঢাল হয়ে আসেন। লিখে ফেলেন প্রত্যাবর্তনের গল্প। যে গল্প আনন্দ দেয়, উচ্ছ্বাসে ভাসায়, গৌরব ফিরিয়ে আনে।
ইয়ান বিশপ তাকে যেভাবে দেখেন, ‘হি ইজ দ্য সুপারস্টার অব বাংলাদেশ ক্রিকেট।’অথচ বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ধ্রুবতারা সাকিব আল হাসান এখন ‘কাঠগড়ায়’। আসলে ‘কাঠগড়ায়’ কারা তুলছে সেটাও বিরাট প্রশ্ন?
প্রত্যাশা মতো পারফরম্যান্স নেই। নেই পুরোনো তেজ। সময়টাও বিরুদ্ধ। ভক্ত সমর্থকদের যতটা আকাশ সমান চাওয়া, যেভাবে নিজেকে উচুঁতে নিয়ে গেছেন, সেখানে পৌঁছাতে পারছেন না বলেই সাকিবের নামের পাশে ফুলস্টপ বসিয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ। অথচ চলতি বিশ্বকাপে মাঠে নামার আগে সাকিব নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন আরো একটি বিশ্বকাপ খেলতে চান তিনি। সেই সুযোগটি সাকিব পাবেন কিনা তা সময় বলে দেবে।
তবে এখন ২২ গজে তারে চেনারূপে ফেরাটাই সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং। চোখের সমস্যার কারণে ব্যাটিংটা ঠিকঠাক হচ্ছে না তা স্পষ্ট বোঝাই যাচ্ছে। স্টান্সে পরিবর্তন, মাথার পজিশন, হ্যান্ড-আই কোঅর্ডিনেশন সব পাল্টে তাকে ব্যাটিং করতে হচ্ছে। তাতে ঝামেলা হচ্ছে বলতে দ্বিধা নেই। সঙ্গে বোলিংটাও আঁটসাঁট। ৪৭ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা সাকিব এখনও হাত ঘুরিয়ে কোনো সাফল্য পাননি।
শেষ ১৯ ইনিংসে তার ব্যাট থেকে কোনো ফিফটি আসেনি। সর্বোচ্চ রান ৩৮ অপরাজিত। সেটাও গত বছরের জুলাইয়ে। বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারের খেতাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিজের সেকেন্ড হোমে মাঠে নামলেও পারফরম্যান্স একেবারেই তলানিতে। এ কারণেই সাকিবকে নিয়ে সমালোচনা যেন থামছে না।
সর্বশেষ দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সাকিবের ব্যাটিং পারফরম্যান্স ছিল খুবই বাজে। ২০২১ বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচ খেলে রান করেছিলেন ১৩১। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৫ ইনিংসে করেছেন মাত্র ৪৪। এবার এক ম্যাচে ৮, আরেক ম্যাচে ৩। দুই ম্যাচেই শর্ট বলে শেষ তার ইনিংস।
৩৭ পেরুনো সাকিবের সময় ফুরিয়ে গেছে বলে দাবি করলেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার বীরন্দ্রর শেবাগ। সাকিবের অবসরের সময় হয়ে গেছে কি না, এমন প্রশ্নে শেবাগ বলেছেন, ‘গত বিশ্বকাপেই আমার এমন মনে হয়েছে, ওকে আর টি-টোয়েন্টিতে খেলানো উচিত নয়। অনেক আগেই ওর অবসর নেওয়ার সময় হয়েছে। তুমি এত সিনিয়র ক্রিকেটার, নিজে অধিনায়ক ছিলে, তোমার পরিসংখ্যানের অবস্থা এমন, সাকিবের নিজেরই তো লজ্জা পাওয়া উচিত। নিজেরই বলা উচিত, আমি এই সংস্করণ থেকে অবসর নিচ্ছি।’
শেবাগের এই মন্তব্যে যখন দেশের ক্রিকেট উত্তাল তখন সাকিব পাশে পেয়েছেন পুরোনো ‘বন্ধু’ তামিমকে। ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে সাকিবকে শর্ট বলে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন তামিম, ‘সাম্প্রতিককালে সাকিব শর্ট বলে ভুগছে, ওর চোখের সমস্যার পর আমার মনে হয়। এটা এমন এক জিনিস, যেটা নিয়ে তার সত্যিই কাজ করা দরকার।’
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে বাঁচার জন্য সেরা কাজটাই করতে হয়। সাকিবের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। বিবর্ণ পারফরম্যান্সে তার দেয়ালেও পিঠ ঠেকে গেছে। যেখান থেকে তাকে উদ্ধারের কাজটা নিজেরই সারতে হবে। পূর্বে সাকিব পেরেছেন। যখনই বাজে সময় গেছে তার, মনে রাখার মতো কিছু করেই ফিরে এসেছেন। যখনই তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছেন, তখনই সব প্রতিকূলতা দূর করে এগিয়ে গেছেন মাথা উচুঁ করে।
নিজের নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে নেমে বাঁহাতি স্পিন অলরাউন্ডার এবারও একই চাপে, একই পরিস্থিতির মুখোমুখি। এবার সাকিব প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখতে পারলে নিশ্চিতভাবেই অনন্য এক অর্জনে নিজেকে জড়িয়ে নেবেন। বয়সের সীমানা পেরিয়ে সাকিবও যে তেজদীপ্ত হয়ে উঠতে পারেন সেই বার্তাটাও দিতে পারবেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটে বহু প্রচলিত স্লোগানটা মনে আছে তো, ‘সাকিব হাসলেই হাসে বাংলাদেশ।’