অপুষ্টির শিকার জনগোষ্ঠী দিয়ে দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। এজন্য সরকারও জনগণের পুষ্টির দিকে নজর দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এবারই প্রথম দেশের প্রতিটি জেলায় একজন করে পুষ্টিবিদ নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আগমীকাল (সোমবার) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিতব্য প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল হক খান স্বাক্ষরিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘পুষ্টি প্রতিটি মানুষের প্রয়োজনীয় শারীরিক বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ ও সুস্বাস্থ্যে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। পুষ্টির অভাবে মাতৃগর্ভে শিশুর কাঙ্ক্ষিত বৃদ্ধি ঘটে না। শিশুর জন্ম-ওজন কম হয়। খর্বতা, কৃশতা, কম ওজন এসব অপুষ্টিরই পরিণতি। একটি খর্বকায় শিশুর ঘনঘন সংক্রমণের প্রবণতা দেখা যায় এবং তার মস্তিষ্কে বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।’
এতে আরো বলা হয়- ‘বাংলাদেশে অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী প্রতি ৫ জন শিশুর মধ্যে ২ জন খর্বকায়। এ হার ধনী জনগোষ্ঠী অপেক্ষা দরিদ্রের মধ্যে দ্বিগুণ। ২ বছরের নিচে অপুষ্টিতে ভুগছে প্রায় ৬৬ লাখ শিশু। শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ অপুষ্টি। পুষ্টিহীনতা শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত করে। পুষ্টিহীন শিশু বহুবিধ সীমাবদ্ধতা নিয়ে বেড়ে উঠে।
পরিণত বয়সে তার পক্ষে সমাজ ও জাতির উন্নতিতে যথাযথ অবদান রাখা সম্ভব হয় না। পুষ্টি মানুষের মৌলিক অধিকার। দেশে শৈশবকালীন অপুষ্টির হার হ্রাস পাচ্ছে। তবে হ্রাস পাওয়ার গতি মন্থর। পুষ্টি পরিস্থিতির পরিবর্তন ও উন্নতির লক্ষ্যে সরকার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের মূলধারয় পুষ্টি কার্যক্রমকে সম্পৃক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পদ সৃষ্টির মাধ্যমে পুষ্টিবিদ নিয়োগ দেয়া। পুষ্টিবিদের মাধ্যমে জনগণের পুষ্টির মানোন্নয়ন দ্রুততর হবে ও পুষ্টি কার্যক্রম বাস্তবায়ন সহজ হবে।’
জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান বলছে, ‘প্রতিটি জেলায় একজন করে পুষ্টিবিদ নিয়োগ দেয়া হলে জনগণ নানা ধরনের সুবিধা পাবে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- হাসপাতালে আউটডোরে মা ও শিশুদের পুষ্টিগত অবস্থা নির্ণয় করা, পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাদ্যতালিকা নির্দেশনা ও প্রচার করবে। আউটডোর সার্ভিসে অনুপুষ্টি ঘাটতিজনিত নিরাময় ও প্রতিরোধে খাদ্য নির্দেশনা প্রদান করবে।
অপুষ্টির রোগীদের উপযুক্ত টেকসই খাবারের উপদেশ প্রদানসহ কাউন্সিলিং প্রদান করবে। অপুষ্টিতে আক্রান্ত মায়েদের পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান ও কাউন্সিলিং প্রদান করবে। শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়ানোতে সার্বিক সহায়তা ও পরামর্শ এবং পরিপূরক খাবার খাওয়ার নির্দেশনা প্রদান করবে।
অপুষ্টির কারণ নির্ণয়পূর্বক খাদ্য নিরাপত্তা, রোগ প্রতিরোধ ও যত্ন পরিচর্যা বিষয়ে নির্দেশনা ও শিক্ষা দেবে। গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকা প্রদান করাসহ পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ার নির্দেশনা প্রদান করবে, যা সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিক রাখবে।’
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি জেলা সদর/জেনারেল হাসপাতাল, উপজেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য রাজস্বখাতে ৪৪৭টি পুষ্টিবিদের পদ সৃষ্টির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কিছু শর্ত সাপেক্ষে প্রতিটি জেলায় সিভিল সার্জনের কার্যলয়ে ১টি করে মোট ৬৪টি পুষ্টিবিদের পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনে সম্মতি জ্ঞাপন করে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শর্ত মোতাবেক এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগের সম্মতির জন্য পাঠানো হয়। নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগ হতে পদগুলো অস্থায়ীভাবে সৃজনে সম্মতি জ্ঞাপন করে। প্রস্তাবিত পদের বেতন গ্রেড অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ কর্তৃক যাচাই করা হয়েছে। সৃজনযোগ্য পদসমূহ সাংগঠনিক কাঠামোতে প্রদর্শন করা হয়েছে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, ‘৬৪টি পদ হবে নন ক্যাডার পদ। নবম গ্রেডে এ পদের জন্য বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ হাজার থেকে ৫৩ হাজার ৬০ টাকা। এর আগে পুষ্টিবিদের কোনো পদ সৃজন করা হয়নি। পদগুলো সৃজনে প্রশাসনিক উন্নয় সংক্রান্ত সচিব কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন।
এ অবস্থায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে প্রতিটি জেলায় সিভিল সার্জন এর কার্যালয়ে ১টি করে মোট ৬৪টি পুষ্টিবিদের পদ রাজস্বখাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হলো।’