#

বিশ্বে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী প্রায় ৭০০ কিশোর-কিশোরী নতুন করে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়। অর্থাৎ প্রায় প্রতি দুই মিনিটে আক্রান্ত হয় একজন।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, এইডস-সম্পর্কিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৮ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার কিশোর-কিশোরীর মৃত্যু হতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে এইচআইভি প্রতিরোধ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রকল্পে বাড়তি বিনিয়োগ করা না হলে প্রতিদিন ৭৬ জন কিশোর-কিশোরীর মৃত্যু হবে।

‘শিশু, এইচআইভি ও এইডস: ২০৩০ সালের বিশ্ব’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান ধারা বজায় থাকলে এইচআইভিতে আক্রান্ত ০-১৯ বছর বয়সীদের সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে আনুমানিক ২ লাখ ৭০ হাজারে পৌঁছাবে, যা বর্তমানের অনুমানের চেয়ে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কম।

এইডস-সম্পর্কিত কারণে মারা যাওয়া শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সংখ্যা ভবিষ্যতে কমবে একথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সংখ্যা বর্তমানের ১ লাখ ১৯ হাজার থেকে কমে ২০৩০ সালে ৫৬ হাজারে নেমে আসবে।

তবে বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে এই কমার হার খুবই মন্থর— একথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে জীবনের প্রথম দশকে নতুন করে এইচআইভিতে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা কমে অর্ধেকে নেমে আসবে। তবে নতুন করে এইচআইভিতে আক্রান্ত ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা কমবে মাত্র ২৯ শতাংশ। এছাড়া এইডস-সম্পর্কিত কারণে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার ৫৭ শতাংশ কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যেখানে ১৫-১৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর হার কমবে ৩৫ শতাংশ।

নতুন এই প্রতিবেদন প্রসঙ্গে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েত্তা ফোর বলেন, ‘কোনো সন্দেহ ছাড়াই এই প্রতিবেদন এটা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে এইডসে আক্রান্ত হওয়া শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে বিশ্ব সঠিক পথে নেই। মায়েদের শরীর থেকে সন্তানের শরীরে এইচআইভির সংক্রমণ ঠেকাতে পরিচালিত প্রকল্প কাজে দিচ্ছে, তবে তা বেশিদূর এগোয়নি। অন্যদিকে এই ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা এবং বেশি বয়সী শিশুদের মাঝে এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পরিচালিত প্রকল্পগুলো যে অবস্থানে থাকা উচিৎ ছিল সে অবস্থানে নেই।’

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০৩০ সালেও আনুমানিক ১৯ লাখ শিশু ও কিশোর-কিশোরী এইচআইভিতে আক্রান্ত অবস্থায় বেঁচে থাকবে, যাদের বেশির ভাগই হবে পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকার অধিবাসী (১১ লাখ)। এর পরেই হবে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকা (৫ লাখ ৭১ হাজার) এবং লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চল (৮৪ হাজার)।

এতে বলা হয়েছে, •বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩০ লাখ শিশু ও কিশোর-কিশোরী এইচআইভিতে আক্রান্ত অবস্থায় বেঁচে আছে, যাদের অর্ধেকের বেশির বসবাস পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকায়। ২০১৮ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে বেঁচে থাকা ০-১৯ বছর বয়সীর সংখ্যা কমার ক্ষেত্রে অঞ্চলভেদে ভিন্নতা থাকবে। সবচেয়ে বেশি কমবে দক্ষিণ এশিয়া (৫০ শতাংশের কাছাকাছি) এবং পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকায় (৪০ শতাংশ)। অন্যদিকে মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলীয় আফ্রিকায় কমবে মাত্র ২৪ শতাংশ, যদিও এ অঞ্চলটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এইচআইভি আক্রান্তের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে।

শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য এইচআইভি মোকাবেলার ক্ষেত্রে প্রধান দু’টি বিষয়ে ঘাটতির তথ্যও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ঘাটতি দু’টি হলো, শিশুদের মাঝে এইচআইভির সংক্রমণ ঠেকানোর কার্যক্রমে মন্থর অগ্রগতি এবং এই মহামারীর কাঠামোগত ও আচরণগত চালিকাশক্তি চিহ্নিতকরণে ব্যর্থতা। অনেক শিশু ও কিশোর-কিশোরীই জানে না তারা এইচআইভিতে আক্রান্ত নাকি আক্রান্ত নয় এবং এইচআইভি-পজেটিভ বা এইচআইভি আক্রান্ত হিসেবে যাদের পাওয়া গেছে ও চিকিৎসা প্রদান শুরু করা হয়েছে, তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে গেছে।

এই অবিরাম ঘাটতি মোকাবেলায় প্রতিবেদনে ইউনিসেফ সমর্থিত বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বনের সুপারিশ করা হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে— যেসব শিশু এইচআইভির সংক্রমণ নিয়েই বেঁচে আছে কিন্তু এখনও তা ধরা পড়েনি, তাদের চিহ্নিত করতে ও চিকিৎসা দিতে পরিবার-কেন্দ্রিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা; আগেভাগেই এইচআইভি সংক্রমিত শিশু চিহ্নিত করার ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে সেবাকেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার আরও প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানো; কিশোর-কিশোরীদের মাঝে এইচআইভি সংক্রান্ত জ্ঞানের প্রসারে অধিক মাত্রায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করা; কিশোর-কিশোরীবান্ধব সেবা প্রদান এবং কমিউনিটিগুলোতে কিশোর-কিশোরদের জন্য কর্মসূচি পরিচালনা করা।

হেনরিয়েত্তা ফোর বলেন, ‘আমরা যদি পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে সংক্রমণ ঠেকাতে অগ্রগতি করতে না পারি, তাহলে এইচআইভির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা জয়ী হতে পারবো না। ছেলে ও মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই গত দশকের অর্জনগুলোকে টেকসই করতে হলে আমাদের অবশ্যই এই অত্যাবশ্যকীয় বোধটি বজায় রাখতে হবে। আর এটা করতে হলে সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত ও ঝুঁকির মুখে থাকা তরুণ জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর উদ্ভাবনী ও প্রতিরোধমূলক উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে বাংলাদেশে জনসাধারণের মাঝে এইচআইভির প্রাদুর্ভাব কম (<০.১%)। ২০১৭ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৮৬৫টি নতুন সংক্রমণের ঘটনা তুলে ধরে যার মধ্যে ৫ শতাংশের বেশি শিশু ও কিশোর-কিশোরী, যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে এবং ২৫ শতাংশ নারী। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন