প্রতারণার আশঙ্কায় অনলাইনে পশু বিক্রি কম, সতর্কতায় গুরুত্ব

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

করোনার কারণে প্রযুক্তির প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতা বেড়েছে বহুগুণ। কেনাকাটায় আগের তুলনায় অনলাইনে বেশি ঝুঁকছে মানুষ। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও ‘ডিজিটাল হাট’র মাধ্যমে অনলাইনে পশু কেনা যাচ্ছে। পছন্দ না হলে অনলাইনে কেনা পশু ফেরত দেওয়া যাবে। বিগত বছরের তুলনায় এবার বেচাকেনা কিছুটা কম। তবে অনলাইনে পশু কেনাবেচায় প্রতারণা রোধ বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অনলাইনে কোরবানির গরু কেনার প্ল্যাটফর্ম ডিজিটালহাটডটনেট digitalhatt.gov.bd। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করে এবারের হাট বাস্তবায়ন করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)। এতে কারিগরি সহযোগিতা করছে এটুআইর অনলাইন প্ল্যাটফর্ম একশপ। গত ৩ জুলাই (রোববার) এ ডিজিটাল হাটের কার্যক্রম শুরু হয়।

জানা যায়, ঈদুল আজহায় ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা মেটানোর জন্য এক কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি গবাদিপশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সে হিসাবে এ বছর চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩৮৯টি গবাদিপশু বেশি রয়েছে। গত বছর এক কোটি ১৯ লাখ গবাদিপশু প্রস্তুত ছিল, তার মধ্যে প্রায় ৯১ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। গত বছর অনলাইনে ৩ লাখ ৭৫ হাজার গবাদিপশু বিক্রয় হয়েছে। অনলাইনে কত সংখ্যক পশু কেনাবেচা হয়েছে সেটির সঠিক পরিসংখ্যান এখনো নির্ধারণ করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। তবে বিগত বছরের তুলনায় অনলাইনে এবার পশু কম বিক্রি হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জিনাত সুলতানা বলেন, গতবার অনলাইনে অনেক পশু বেচাকেনা হয়েছে। এবার তো আর ততোটা ভালো হবে না। গতবারের মতো এবার অনলাইনে অতোটা বিক্রি হবে না। কারণ এখন মানুষ সরাসরি হাটে গিয়ে পশু কিনতে পারছেন। আগামীকাল অনলাইনে কত সংখ্যক পশু বিক্রি হয়েছে সেই তথ্য দেওয়া সম্ভব হবে।

একটি অনলাইন হাট থেকে ৭২ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছেন খিলগাঁওয়ের হালিম শাহ। তিনি বলেন, আমার ছেলে অনলাইনে গরুটি পছন্দ করেছে। পরে আমি নিজেও দেখলাম ভালো, তাই অর্ডার করলাম। অর্ডার করা গরু ডেলিভারি পেয়ে আমি সন্তুষ্ট। কারণ আগে শুনেছি অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারণা হয়, যেটি দেখানো হয় সেটি দেওয়া হয়নি। কিন্তু আমি যেমন দেখেছি তেমনই পেয়েছি এবং যথাসময়ে পেয়েছি।

এদিকে, হালিম শাহ প্রতারিত না হলেও তার মতো অনলাইনে পশু কেনায় সাহস পাচ্ছেন না অনেকে। ইভ্যালির মতো কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের প্রতারণার কারণে মানুষের মধ্যে ই-কমার্সের প্রতি আস্থা কিছুটা কমে গেছে। অনলাইনে পশু কেনা কমে যাওয়ার এটাও একটা কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা বলেন, গত ২৩ জুন আমরা প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর নেতৃত্ব বৈঠক করেছি। সেখানে আইসিটি বিভাগের প্রতিনিধি সংযুক্ত ছিলেন। তিনি আমাদের কাছে একটি বিষয় পরিষ্কার করেছেন যে এবার অনলাইনে পশু কেনাবেচায় প্রতারণার সুযোগ নেই। কারণ অনলাইনে যে পশু ক্রেতা কিনবেন তার পশু বুঝে পাওয়ার পর টাকা পরিশোধ করা হবে। এটা তারা আমাদের নিশ্চিত করেছেন। প্রযুক্তি এগিয়ে যাওয়ায় স্মার্ট বাংলাদেশ হয়েছে। শুরুতে অনেক কিছু না জানার কারণে আমাদের বিভ্রান্তি তৈরি হয়, কিন্তু সময় যতো যাবে এগুলো শুধরাবে। আমরা আশা করছি আইসিটি মন্ত্রণালয় যেহেতু কাজ করছে, সেহেতু কোনো ধরনের জটিলতা থাকবে না।

তিনি বলেন, মানুষ যদি অনলাইনে না গিয়ে হাটেও যায় সেই হাটের লেনদেনটাও যেন সুন্দরভাবে পরিচালিত হয় সেজন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ছয়টি হাট, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও রাজশাহীর তিনটি হাটে আমরা ডিজিটাল মানি ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করেছি। সেখানে এটিএম বুথ রয়েছে, গ্রাহক সেখান থেকে টাকা তুলতে পারবেন, বিক্রেতাকেও টাকা দিতে পারবেন। আবার বিক্রেতাও তার টাকা জমা দিয়ে একটি স্লিপ পাবেন, যার মাধ্যমে তিনি সারাদেশের যে কোনো জায়গা থেকে তার টাকা তুলতে পারবেন। পুরো ব্যাপারটি বাংলাদেশ ব্যাংক মনিটরিং করছে।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) অর্থ সম্পাদক আসিফ আহনাফ বলেন, ই-কমার্স কোনো আলাদা সেক্টর না। এটা সব রকম ব্যবসার ডিজিটালাইজেশন। অটোমেটিক প্রত্যেকটি ব্যবসা ও ব্যবসার ট্রানজেকশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিজিটাল হচ্ছে। যেহেতু ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সরাসরি না হয়ে অনলাইনে ট্রানজেকশনটা হয়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই গ্রাহক অগ্রিমই টাকা পরিশোধ করবেন। এটাই গ্লোবাল ই-কমার্সের মডেল। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশের অবস্থা বিবেচনায় প্রতারণার উপায় থাকেই। সেক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে গ্রাহকের সচেতনতা জরুরি।

তিনি বলেন, কোনো প্ল্যাটফর্মে লোভনীয় অফার পেয়ে যাচাই-বাছাই ছাড়া হুট করে পেমেন্ট করে দিলে ঝুঁকি থেকে যায়। এটিকে প্রতিরোধ করার জন্য যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা হলো ডিজিটাল বিজনেস আইডি। সেক্ষেত্রে কেনাকাটার ক্ষেত্রে সেই প্ল্যাটফর্মের ডিজিটাল বিজনেস আইডি আছে কি না সেটি দেখতে হবে। তাহলে কোনো সমস্যা হলেও জবাবদিহিতার জায়গা থাকবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, গত বছর অনলাইনে তিন লাখ ৭৫ হাজার গবাদিপশু বিক্রয় হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি কারণে অনেকেই কোরবানির জন্য আগ্রহী হয়নি। এ বছর আশা করা হচ্ছে আরও বেশি গবাদিপশু বিক্রয় হবে। অনলাইনে ক্রয়কৃত গবাদিপশু পছন্দ না হলে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। যেন এটা সবার কল্যাণে কাজে লাগে ও কেউ যেন কোনোভাবে প্রতারণার শিকার না হন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এবছর ভার্চুয়াল ক্যালকুলেটর নতুন সংযোজন করা হয়েছে। এটি ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে অনাহুত সমস্যা থেকে মুক্ত করবে এবং তাদের দুশ্চিন্তা দূর করবে।

তিনি বলেন, অনলাইনে আপলোড করা গবাদিপশুর মালিকানা, ঠিকানা, মালিকের মোবাইল নম্বর, পশুর বয়স, ওজন ও ছবি সম্বলিত তথ্য দেওয়া নিশ্চিত করা জরুরি। আপলোডের ক্ষেত্রে গবাদিপশুর স্বাস্থ্য সনদ নিতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের ভেটেরিনারি সার্জন সেবা দেবেন। তাতে রোগাক্রান্ত ও কোরবানির অনুপযুক্ত পশু নির্ণয় করা যাবে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর খামারিদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সংযুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে। এক্ষেত্রে ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে উদ্যোগ নিতে হবে।