ঢাকাই সিনেমায় জুটি প্রথা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমগ্র উপমহাদেশেই জুটিকে প্রাধান্য দেয়া হয় সিনেমাতে। বলিউডে যখন একের পর জুটি গড়ে উঠেছে, ছড়িয়েছে সেইসব জুটির নানা রসাত্মক গল্প তখন পিছিয়ে ছিলো না ঢালিউডও।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে তুমুল জনপ্রিয় কিছু জুটি গড়ে উঠেছিলো। রাজ্জাক-কবরী, আলমগীর-শাবানা, ফারুক-ববিতা, ইলিয়াস কাঞ্চন-অঞ্জু, ইলিয়াস কাঞ্চন-দিতি, নাঈম-শাবনাজ, সালমান-মৌসুমী, ওমর সানি-মৌসুমী, সালমান-শাবনূর, রিয়াজ-শাবনূর, ফেরদৌস-শাবনূর, মান্না-মৌসুমী, রিয়াজ-পূর্ণিমা, অনন্ত-বর্ষা, শাকিব-অপু তাদের মধ্যে অন্যতম।
সিনেমায় সাফল্য, দুই তারকার ভক্তদের আগ্রহ, দুই তারকার ব্যক্তিগত রসায়ন, দুই তারকার হৃদয়ঘটিত সম্পর্ক নিয়ে নানা গুজব ইত্যাদিসহ নানা কারণে এইসব জুটি পেয়েছিলো দর্শকপ্রিয়তা। তবে অদ্ভূত এক কারণে সিনেমার সফল জুটি হওয়া সত্বেও জুটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি ইলিয়াস কাঞ্চন ও মৌসুমীর নাম।
অথচ, মৌসুমীর জীবনের সেরা ব্যবসা সফল ছবিগুলোর বেশ কয়টির নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। আবার নায়ক হিসেবে কাঞ্চনও নিজের চেয়ে অনেক জুনিয়র মৌসুমীকে নিয়ে জুটি বেঁধে ক্যারিয়ারের শেষদিকেও ইন্ডাস্ট্রি মাতিয়েছেন।
এই জুটির ছবির মধ্যে আদরের সন্তান, শেষ রক্ষা, ভাংচুর, আত্মত্যাগ, স্বজন, রাজার ভাই বাদশা, অন্ধ ভালবাসা, সুখের ঘরে দুঃখের আগুন ও গোলাগুলি অন্যতম। মাঝপথে মৌসুমীর বিয়ের পর কাঞ্চন-মৌসুমী জুটিটি ভেঙ্গে যায়। জুটি ভেঙ্গে যাওয়ার একাধিক কারণ ছিলো বলে দাবি করেন চলচ্চিত্র পরিচালকেরা। তবে তারা অনেকেই মনে করেন, ইলিয়াস কাঞ্চন-মৌসুমী জুটির প্রতিটি ছবি যেভাবে ব্যবসা সফল ও দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছিল যদি নিয়মিত এই জুটি নিয়ে ছবি নির্মাণ হতো তাহলে নব্বইয়ের দশকের সেরা জুটি হতো এটি।
জুটি নিয়ে কাঞ্চন-মৌসুমীও একে অপরের প্রতি আগ্রহী ছিলেন বলে জানা যায়। সালমানের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ার পর মৌসুমী কাঞ্চনের সঙ্গে জুটি হয়ে দারুণ সাফল্য পাচ্ছিলেন। যা তার ক্যারিয়ারকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছিলো।
অন্যদিকে অঞ্জু ঘোষ, চম্পা ও দিতিরা যখন বয়সের প্রতিকূলতায় ইন্ডাস্ট্রিতে অনিয়মিত হয়ে পড়ছিলেন তখন মৌসুমীর সঙ্গে জুটি হয়ে সাফল্য পান কাঞ্চনও। তিনিও চেয়েছিলেন মৌসুমীর সঙ্গে জুটি প্রতিষ্ঠিত হোক। কিন্তু একজন প্রবীন চলচ্চিত্র পরিচালক জানান, দুই তারকার ইচ্ছে থাকা সত্বেও ইন্ডাস্ট্রির কিছু পলিটিক্স তাদের জুটিটিকে নিয়মিত হতে দেয়নি।
এর বাইরেও কিছু কারণ ছিলো বলে মনে করেন অনেকেই। তাদের মতে, কাঞ্চন-মৌসুমী দুজনের বোঝাপড়াটা ভালো ছিলো। তবে জেনারেশনের গ্যাপটা তাদের মধ্যে আন্তরিকতা নিয়ে বন্ধুত্বের দেয়াল হয়ে ছিলো। দুই তারকার মধ্যে দেড় দশকের ব্যবধান ছিলো।
কাঞ্চন তার চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু করেছিলেন ববিতার নায়ক হয়ে। তিনি শাবানার বিপরীতেও কাজ করেছেন ‘শেষ উত্তর’ নামের একটি সিনেমায়। সেই কাঞ্চনকে সিনেমায় মৌসুমীর নায়ক হিসেবে নব্বই দশকের দর্শক বেশ ভালোবাসা দিয়ে গ্রহণ করলেও সত্তর-আশি দশকের দর্শক খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না। সেই প্রতিবন্ধকতা জয় করেও সফল ছিলেন কাঞ্চন-মৌসুমী।
সিনেমার পাশাপাশি বেশ কিছু জনুপ্রিয় গানের জন্যও আলোচিত ছিলেন এই জুটি। তার মধ্যে ‘এ জীবন তোমাকে দিলাম বন্ধু ( আত্মত্যাগ)’, ‘সবার জীবনে প্রেম আসে ( ভাংচুর)’, ‘সময় হয়েছে ফিরে যাবার ( আদরের সন্তান)’, ‘অনেক ভালোবেসে হয়েছি তোমার ( স্বজন)’, ‘আমার মন এত পাগল যে ( স্বজন)’, ‘যে জীবনে তুমি ছিলে না ( সুখের ঘরে দুখের আগুন)’, ‘আমার জীবন তুমি ( অন্ধ ভালোবাসা)’, ‘আমার হবে সেই বউ ( শেষ রক্ষা)’ উল্লেখযোগ্য।
ইলিয়াস কাঞ্চন ছাড়াও মৌসুমী নায়ক হয়েছেন ওমর সানী, সালমান শাহ, রুবেল, বাপ্পারাজ, রিয়াজ, মান্না, ফেরদৌস, আমিন খান, শাকিল খান, শাকিব খান প্রমুখ নায়কদের।