Mojammel Haque Opu
এসি মোজাম্মেল হক অপু
#

সোহেল আহমেদ.

ভয় নয়! কাজ মানেই নিরব অলসতার দাঁতভাঙা জবাব! যে কোনো কাজের সফলতা অর্জনের পেছনে থাকে থাকে হাঁরভাঙা পরিশ্রম। প্রবল ইচ্ছা শক্তি ও কর্মময় জীবনের উপরে ওঠার বাসোনা থেকেই শুরু হয় নিজের প্রতি আত্ববিশ্বাস। এই আত্ববিশ্বাসই এক সময় নিয়ে যায় একজন কর্মঠ মানুষকে তার শির্ষ্য অবস্থানে। একের পর এক বাধা পেরিয়ে এমনই একজন সফল ব্যক্তি হলেন বরিশাল জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার(এসি) মোজাম্মেল হক অপু।

অত্যন্ত বিচক্ষনতার সাথে তিনি ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করে এখানকার সচেতন নাগরীকদের নিকট জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডেরর সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে দারুন সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একজন প্রকৌশলী থেকে যেভাবে মেজিস্ট্রেট হলেন চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান মোজাম্মেল হক অপু তা সিটিজেন জার্নালিজমের এক অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়,২০১০ সালে চট্টগ্রাম প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তরিৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগ থেকে পাশ করেন মোজাম্মেল হক অপু। পাশ করার পরই Tradesworth নামক একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মময় জীবনের পথ চলা শুরু হয়। কিন্তু বুকবাঁধা স্বপ্ন প্রত্যাশী অপুর সফলতার উপরে ওঠার বাসোনা!

জসিম উদ্দিন নামের তার এক শিক্ষকের আন্তরিক সহযোগীতায় Max গ্রুপে চাকুরি পেয়ে যান অপু। একই সময় ক্যানাডিয়ান ভিত্তিক বৃহৎ গ্রুপেও চাকুরি হয়ে যায়। ফলে Max গ্রুপে যোগদানের তিন দিনের মাথায় অব্যহতি দিয়ে যোগদান করেন এই প্রতিষ্টানে। দিন রাত অফিসের কাজ করে খুব অল্প সময়ের ব্যাবধানে কতৃপক্ষেরর নিকট থেকে দারুন সুনাম কুড়াতে সক্ষম হন। প্রতিষ্টানের সকলের সহয়োগিতা আর কঠর পরিশ্রমের মধ্যে ভালোই চলছিলো অপুর চাকুরি। হঠাৎ সেই স্বপ্ন প্রত্যাশা উকি দিলো অপুর মনের জানালায়।

অনেক দিন আগে আবেদন করা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে ডাক পড়ল তার। প্রত্যাশা প্রাপ্তির মেলবন্ধনে এখানেও চাকুরি হয়ে গেলো। বিদ্যুৎ বিতরন বিভাগের সহকরি প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পেলেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর একের পর এক চাকরি সবই মাত্র এক বছরে।

এই চাকরি প্রাপ্তিই তার মনোবলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সহয়তা করে। দির্ঘ প্রশিক্ষনলাভ করে প্রথমেই ফেনি জেলায় পোস্টিং পান। তারপরে নোয়াখালীতে। সবশেষ চট্টগ্রামের বিদ্যুত অফিসে বদলি হয়ে আসেন।

কাজের গতি আর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে এখানেও সহকর্মিদের মন পেতে সময় লাগেনি তার। কিন্তু সহকর্মিদের ভালোবাসা পেয়েও মনের প্রাপ্তিকে সামলাতে পারলেন না।

এরশাদ আলি,মাসুম আমির সহ বেশ কয়েকজন বন্ধুদের বিসিএস পরীক্ষা দেয়া নিয়ে তার মধ্যেও উৎসাহ চলে আসে। কিন্তু চাকুরির এতো পরিশ্রমের পর বিসিএস পড়া কি সম্ভব! বন্ধুরাও ছাড়ল না। তাদের সাথে পড়ার জন্য নানা ধরনের উৎসাহ অনুপ্রেরনা দিলো।

বন্ধুদের এই অাগ্রহকে কাজে লাগিয়ে বিসিএস পড়ায় মোজাম্মেল হক অপু এখন ৩৫ তম ব্যাজে পাশ করার মিশনে মরিয়া। বিদ্যুত বিতরন অফিসের কঠিন পরিশ্রমে ক্লান্ত অপু বিসিএস এর নেশায় অবসরে পড়াশুনায় সময় দিচ্ছেন। আর এতে বন্ধুরা গাইড,বই,তথ্য সহ বিভিন্ন সহয়তা দিয়ে তাকে দারুন ভাবে সাহায্য করছে। বন্ধুদের এসব সহযোগীতায় অপু আরো বেশি আত্ববিশ্বাসী হয়ে উঠলেন।

সেই পরীক্ষাটি যথেস্ট কঠিন ছিলো। ফলাফলে সব আশায় হঠাৎ আচমকা কালো মেঘের আভাস! যে বন্ধুরা তার জন্য এতো সহযোগীতা করল,তাদের রেজাল্ট খারাপ। বন্ধুদের কথা শুনে হতাশার চাদরে ঢেকে পড়া অপু তার রেজাল্টই দেখলেন না। ভেবে নিলেন তিনিও ওই কাতারে পরে গেছেন।

এক সপ্তাহ পর অপুর বড় ভাই মনিরুল হক রেজাল্ট মিলিয়ে জানতে পারেন অভিমান করা অপুর অপরাজেয়’ র কথা। তার মানে অপু বিসিএস পাশ! এর পরের ধাপ গুলো শুধুই সুখময়।

কিন্তু বিদ্যুত উন্নয়নের চাকরি বলে কথা। পরীক্ষা ছুটি দিতে কার্পন্য করল কতৃপক্ষ। কি করার! লিখিত পরীক্ষা শেষে অফিসে এসে সারা দিনের জমে থাকা কাজ সম্পন্ন করে বাসায় ফেরা। এভাবে চাকুরি ও বিসিএস পরীক্ষায় দুটিতে ক্লান্ত অপু হার মানলেন না। অতপর মোজাম্মেল হক অপু বিসিএস পাশ।

চুড়ান্ত ধাপের অপেক্ষার প্রহর শেষ। কঠর পরিশ্রম,প্রবল ইচ্ছা শক্তি আর স্বপন বিলাসীতাকে লালনের সুসংবাদ মোজাম্মেল হক অপু বিসিএস ক্যাডার।

শুরুতেই তার নিয়োগ হয়নি। চলতি বছরের ৩ রা আগস্ট সরকারের এক প্রজ্ঞাপনে তিনি এখন প্রশান ক্যাডার। বর্তমানে বরিশাল জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদলতের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করে সচেতন নাগরিকদের আস্থা অর্জনে দারুন সক্ষম হয়েছেন। l

জেলা প্রশাসনের কাজের বাহিরেও অবসর সময় দিয়ে জেলা প্রশাসন কতৃক দেশের সর্বপ্রথম চালুকৃত ফেইসবুক গ্রুপ বরিশাল সমস্যা ও সম্ভাবনা গ্রুপের উন্নয়ন কাজে সেচ্ছায় পরিশ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। নাগরীক সেবার এ মাধ্যমটি সচল রাখায় এসি মোজাম্মেল হক অপুর ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং আন্তরিক।

লেখক: সোহেল আহমেদ।

প্রকৌশলী থেকে যেভাবে ম্যাজিস্ট্রেট (ভিডিও)


https://youtu.be/abQX-yo77ro

 

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন