পেট্রলে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে ১০ দিন পাঞ্জা লড়ে শেষ পর্যন্ত চলে গেলেন পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের দর্শন বিষয়ের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মুক্তি খাতুন।
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মুক্তি মারা যান।
মুক্তি খাতুনের বড় ভাই নাসির উদ্দিন বলেন, গতকাল রাতে তাঁর বোন মারা গেছেন। এখন লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেলে আছে। পরে সেখান থেকে লাশ গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হবে।
মুক্তির বাড়ি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার নাগডেমরা গ্রামে। তিনি পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের দর্শন বিষয়ের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হকের মেয়ে। ঈদ উপলক্ষে কলেজ ছুটি হলে তিনি বাড়ি এসেছিলেন। এরপর ওই হামলার শিকার হন।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও ছাত্রীর পরিবারের সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, নাগডেমরা গ্রামের একটি উন্মুক্ত জলাশয়ের দখলকে কেন্দ্র করে মুক্তির বাবার সঙ্গে একই গ্রামের আবদুস সালাম ও তাঁর লোকজনের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। ২ আগস্ট সালামের লোকজন মুক্তিদের বাড়িতে হানা দেয়। এ সময় ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এরপর থেকে মুক্তিদের বাড়ির লোকজন এলাকাছাড়া। পরে পুলিশ ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে মোজাম্মেল হক পরিবারের লোকজন নিয়ে বাড়ি ফেরেন। কথা ছিল ঈদের পরে প্রশাসনের উদ্যোগে দুই পক্ষকে নিয়ে বিরোধটির মীমাংসা করা হবে।
১৮ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে আবদুস সালামের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি সশস্ত্র দল মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা করে। এ সময় বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য ছিলেন না। প্রতিপক্ষের লোকজন মুক্তিকে উঠানে ধরে এনে গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তিনি মারাত্মক দগ্ধ হন। পরে এলাকার লোকজন ও স্বজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ১৯ আগস্ট মুক্তির বাবা মোজ্জাম্মেল হক বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় আবদুস সালামসহ ৩২ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে জানতে চাইলে মুক্তির বড় ভাই নাসির উদ্দিন বার্ন ইউনিট থেকে বলেন, তাঁর বোনকে যারা এমন নৃশংসভাবে পুড়িয়েছে, তাদের কঠিন সাজা চাই। কিন্তু এখনো প্রধান আসামিদের পুলিশ ধরতে পারেনি।
সাঁথিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল মজিদ বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। এর মধ্যে জেলে রয়েছেন খাতুন (৪৫) ও মিনি খাতুন (৪৫) নামের দুই নারী। তাঁরা কলেজছাত্রীটির শরীরে পেট্রল ঢালা ও আগুন ধরানোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। প্রধান আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়া এলাকায় আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশি প্রহরার ব্যবস্থা করেছি।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেড়া সার্কেল) মিয়া মোহাম্মদ আশীষ বিন হাসান বলেন, ছাত্রীটির শরীরের ৬৫ শতাংশ পুড়ে যায়। এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক একটি ঘটনা। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের পুলিশ জোর তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। প্রধান আসামি পলাতক। তবে যেকোনো মূল্যে তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com