ঝালকাঠিতে গভীর রাতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে পুড়ে যাওয়া লঞ্চটি পরিদর্শনে গেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
ঝালকাঠিতে ‘অভিযান-১০’ নামের লঞ্চে আগুন ক্যানটিন থেকে নয়, ইঞ্জিনের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হয়েছে বলে মনে করছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শাজাহান খান। শনিবার সকালে আগুনে পোড়া লঞ্চ পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে সংবাদগুলো আমরা দেখেছি, সেগুলো আমলে নিয়ে পর্যালোচনা করে এবং লঞ্চটি পরিদর্শন করে কাজ করছে তদন্ত কমিটি। ওই সময় নৌ মন্ত্রণালয়ের ৭ সদস্য, ফায়ার সার্ভিসের ৫ সদস্য এবং জেলা প্রশাসনের ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরা লঞ্চটি পরিদর্শন করে।
ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান উপ-পরিচালক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, লঞ্চের ছয়টি সিলিন্ডারের মধ্যে একটিতে বিস্ফোরণ হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। নৌ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক যুগ্ম সচিব তোফায়েল হাসান বলেন, যা কিছু দেখছি, সবই প্রাথমিক তদন্ত। চূড়ান্তভাবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
তদন্ত কমিটির সদস্য ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নাজমুল আলম জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমরা পরিদর্শনে এসেছি। এখন পর্যন্ত পরিদর্শনে আছি। ইঞ্জিনরুমসহ পুরো লঞ্চটি দেখা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলছি। প্রায় ৪০০ যাত্রী নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এমভি অভিযান-১০ সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়। চাঁদপুর ও বরিশাল টার্মিনালে লঞ্চটি থামে এবং যাত্রী ওঠানামা করেন। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে পৌঁছলে রাত ৩টার দিকে এতে আগুন ধরে যায়।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তদন্তে শুক্রবার তদন্ত কমিটি করে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। এতে আহ্বায়ক করা হয়েছে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বন্দর) মো. তোফায়েল ইসলামকে।
নাজমুল আলম ছাড়াও কমিটির অন্য সদস্য বরিশাল অঞ্চলের পুলিশ সুপার (নৌ পুলিশ) মো. কফিল উদ্দিন, নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার তাইফুর আহম্মেদ ভূইয়া, ফয়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মো. কামাল উদ্দিন ভুইয়া, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার পরিচালক মামুন-অর-রশিদ ও বিআইডব্লিউটিয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম। এ কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তিন তলা লঞ্চটি এখন ঝালকাঠির দিয়াকুল এলাকায় সুগন্ধা নদীর তীরে ভেড়ানো রয়েছে। ইঞ্জিনরুমের পাশের ক্যানটিনের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে পুরো লঞ্চে আগুন লেগেছে বলে জানিয়েছিলেন কেবিন বয় ইয়াসিন। তিনি পুরো ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে ইয়াসিন বলেন, লঞ্চের নিচ তলার পেছনে ইঞ্জিন রুমের পাশেই ক্যানটিন।
সেখানে বিকট শব্দে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ইঞ্জিনরুমে। সেখানে ১৩ ব্যারেল ডিজেল রাখা ছিল। ডিজেল আগুন আরো বাড়িয়ে দেয়। ইঞ্জিন রুমের পর আগুন চলে যায় ডেকের দিকে। ডেকের জানালার পর্দা থেকে দোতলায়। সেখানে প্রথমে পারটেক্স বোর্ডের সিলিংয়ে আগুন লাগে। দোতলায় একটি চায়ের দোকান ছিল। ওই চায়ের দোকানের সিলিন্ডারও বিস্ফোরিত হয়ে আগুন আরো বড় হয়ে যায়। এরপর আগুন যায় তিন তলায়।
লঞ্চের কেবিন বয় জানান, আগুন লাগার পর ডেকের যাত্রীরা নেভানোর চেষ্টা করেন। অনেকে ছাদে চলে যান। কেউ কেউ নদীতে লাফ দেন। ঝালকাঠির পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চে আগুন লাগে।
এতে এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ আছে অনেকে। আর আহত অনেককে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে লঞ্চটিতে কতজন যাত্রী ছিল তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, লঞ্চটিতে প্রায় ৪০০ যাত্রী ছিল।