পুলিশের হামলায় পণ্ড বিএনপির কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি, আলাল-বাবুলসহ আটক ৫৭

:
: ৬ years ago

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এবং কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিএনপির কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জ ও জলকামানের রঙিন পানি নিক্ষেপে মিছিলটি পণ্ড হয়েছে। এসময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং ঢাকা বিভাগীয় সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলসহ ৫৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। পল্টন থানার ডিউটি অফিসার রেজভী আক্তার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি আরও জানান, আটকদের মধ্যে কমপক্ষে ৩০ জন নারী ও ২৭ জন পুরুষ নেতাকর্মী রয়েছেন।

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়া পল্টনে জনসভার অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু পুলিশ অনুমতি দেয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।

শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা মিছিলটি শুরু হওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কয়েকশ কর্মী কার্যালয়ের সামনের সড়কে কালো পতাকা নিয়ে বসে পড়েন। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে স্লোগান শুরু করেন তারা। এসময় লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ, জলকামান থেকে রঙিন পানিও ছুড়তে থাকে। কার্যালয়ের বাইরে যে প্যান্ডেল করা হয়েছিল, তাও পুলিশ ভেঙে দেয়। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় অবস্থান নেয়া নেতাকর্মীরা। তাদের কালো পতাকাগুলো ছড়িয়ে পড়ে আছে সড়কের বিভিন্ন স্থানে। পুলিশের বাধার মুখে নয়াপল্টন কার্যালয়ের ভেতরে এবং আশপাশের গলিতে আশ্রয় নেয় বিএনপি নেতাকর্মীরা।

এদিকে লাঠিপেটায় ও জনকামানে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী মনি, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায় চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

 

ধরপাকড়ের সময় ঘটনাস্থলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, মওদুদ আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সাবেক সংসদ সদস্য নীলুফার চৌধুরী মনি উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে পুলিশের লাঠিচার্জ ও জলকামানের পানি নিক্ষেপে কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি পণ্ড হওয়ার পর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির শীর্ষ নেতারা। সেখানে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার সংঘাতের উস্কানি দিচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারই চাইছে আমরা সংঘাত করি। সেজন্য পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে অব্যাহতভাবে উস্কানি দিচ্ছে।

এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সিবলী নোমান বলেন, কর্মসূচি পালনে অনুমতি নেয়নি বিএনপি। তিনি আরও বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে সকাল থেকে অবস্থান নিয়ে তারা জনসাধারণের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত করছিল। এজন্য জলকামান ব্যবহার করে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

 

এ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এই কর্মসূচি পালন করতে অনুমতি লাগবে কেন? সব কর্মসূচিতে আমাদের অনুমতি নিতে হবে কেন? একটা গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করতে কেন অনুমতি নিতে হবে? আমরা তো রাস্তা বন্ধ করিনি। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করিনি। আমরা কোনও মিছিল করিনি। পুলিশের নিয়মের মধ্যে আছে অনুমতি না নিয়ে সভা সমাবেশ করা যাবে না। কিন্তু আমার তো সেই রকম কিছু করিনি।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আমি একটা প্রতিবাদ করতে পারবো না, কালো পতাকা দেখাতে পারবো না? এটা তো মৌলিক অধিকারের ব্যাপার। এটা তো আমার ফান্ডামেন্টাল অধিকার। তাহলে কি আমাদের সংবাদ সম্মেলন করতে অনুমতি লাগবে? আমার বাড়িতে ৫ জন নেতার সঙ্গে কথা বলতে অনুমতি লাগবে?’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আইনের শাসন ও আওয়ামী লীগ একসঙ্গে চলতে পারে না। তাই গণতন্ত্রের দাবিতে বিরোধী দলের আওয়াজ শুনলেই বাতিকগ্রস্তদের মতো আদিম উল্লাসে সরকারি বাহিনী গণতান্ত্রিক শক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সংবিধানে বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ। কিন্তু এখন বাস্তবতা হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের ক্ষমতার মালিক আওয়ামী লীগ ও তাদের সাজানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’

ওই সংবাদ সম্মেলন শেষে বের হওয়ার পথেই আটক হন বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।

 

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অপর একটি মামলা করে দুদক। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।  গত বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ এবং দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

রায়ের পর পরই খালেদা জিয়াকে আদালতের পাশে নাজিমউদ্দিন রোডের ২২৮ বছরের পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। নির্জন এই কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে গত ১৭দিন ধরে কারাভোগ করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।