পুলিশের পোশাকে টিকটক, ঝালকাঠি-পিরোজপুরের দুই কনস্টেবলকে নোটিশ

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

ছোট-বড় নানা অপরাধে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ পুলিশের অনেকেই শাস্তি পেয়েছেন। তবে এবার ভিন্নরকম একটি বিষয়কে ‘অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করা শুরু করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। সেটি হলো- ইউনিফর্ম পরে সামাজিক প্লাটফর্ম টিকটক ও লাইকিতে ভিডিও বানানো ও শেয়ার করা। যদিও বিষয়টি নিয়ে বছরখানেক আগেও পুলিশের পক্ষ থেকে নোটিশ দিয়ে সব সদস্যদের সতর্ক করা হয়েছিল। তবে এরপরও যারা মানছেন না তাদের প্রতি এবার কঠোর হতে শুরু করেছে পুলিশ সদর দফতরসহ বিভিন্ন ইউনিট এবং বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে পুলিশের পোশাক ব্যবহার করে টিকটক-লাইকির মতো ইন্টারনেট মাধ্যমে ভিডিও তৈরি ও শেয়ারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরপর সেই নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়ে ডিএমপির সদর দফতর থেকে পুলিশ সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন ইউনিটে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু বিষয়টি জেনেও অনেকে এখনও টিকটক ও লাইকি ভিডিও করে চলেছেন।

এই তালিকায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার চেয়ে কন্সটেবল পদের সদস্যদের সংখ্যাই বেশি। সবমিলিয়ে ইউনিফর্ম পরে টিকটক ও লাইকিতে ভিডিও বানানোয় বাংলাদেশ পুলিশের সমালোচনাও করছেন অনেকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সদ্য চাকরি পাওয়া সদস্যরাই এমন ভুল বা অপরাধে বেশি জড়াচ্ছেন। তাদের বেশিরভাগই নিজের অবস্থান ও সরকারি চাকরি করেন- এটা জানান দিতে এমন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। আবার কেউবা নিজেকে সেলিব্রিটি হিসেবে তৈরি করতে এসব প্লাটফর্মে পুলিশের ইউনিফর্ম পরে ভিডিও বানাচ্ছেন।

এদিকে, সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে কঠোর নজরদারি শুরু করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও পুলিশ সদর দফতর। যেসব পুলিশের সদস্যরা পোশাক পরে টিকটক ও লাইকিতে ভিডিও বানাচ্ছেন তাদের শনাক্ত করার কাজও ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। জানা গেছে, ওইসব আইডি শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এ ধরনের কার্যকলাপ রোধে পোস্টদাতাকে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে গত ৬ অক্টোবর ডিএমপির এক আদেশে ১৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের কাছে চিঠিও দিয়েছে ডিএমপি। তবে তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। ১৩ জনের ওই তালিকায় পুলিশের আট নারী সদস্য রয়েছেন। তাদের সবার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে।

সম্প্রতি জারি করা ওই নোটিশে অভিযুক্ত ১৩ কনস্টেবল হলেন- আইরিন আক্তার (পিরোজপুর), আয়েশা বেগম (টাঙ্গাইল), সমাপ্তি ইসলাম (পিটিসি, রংপুর), আবু হানিফা নিপু (হবিগঞ্জ), রিপন চাকমা (আরআরএফ, চট্টগ্রাম), রিমন বড়ুয়া (আরআরএফ, চট্টগ্রাম), মো. রায়হান উদ্দিন (আরআরএফ, চট্টগ্রাম), কামরুন্নাহার আক্তার (নোয়াখালী), সাকিরা আক্তার (হবিগঞ্জ), শাহানা পারভীন শম্পা (মাগুরা), মোছা. রশনি ইয়ারা (পিটিসি, টাঙ্গাইল), রেজাউল করিম (আরআরএফ, চট্টগ্রাম) ও মো. আশিকুল হক (ঝালকাঠি)।

সেই নোটিশের অনুলিপি ইতোমধ্যেই কমান্ড্যান্ট, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, মহেরা, টাঙ্গাইল/পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার ও রংপুরে পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে কমান্ড্যান্ট আরআরএফ, চট্টগ্রাম, পিরোজপুর, টাঙ্গাইল, হবিগঞ্জ, নোয়াখালী, মাগুরা ও ঝালকাঠি পুলিশ সুপারদের ওই ১৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এর আগে গত বছর এক নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছিল, ডিএমপির কতিপয় পুলিশ সদস্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছেন। তাতে তারা রাষ্ট্রবিরোধী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্যও প্রচার করছেন। এছাড়া পুলিশের ইউনিফর্ম ব্যবহার করে তারা এসব ভিডিও বানাচ্ছেন। এতে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার মতো অঙ্গভঙ্গিও করে ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে। যা পরে টিকটক ও লাইকিতে আপলোড করা হচ্ছে।

ওই সময় নিষেধাজ্ঞায় আরও বলা হয়, এ ধরনের কার্যকলাপ রোধে পোস্টদাতাকে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই নিষেধাজ্ঞায় পুলিশের পোশাক ব্যবহার করে অথবা পুলিশ-বিষয়ক কোনো পোস্ট ফেসবুকে আপলোডের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছিল।

এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশের পোশাক পরে টিকটক ও লাইকিতে ভিডিও না বানাতে বারবার বলা হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই মানছেন না। ফলে পুলিশ এখন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে। বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্যও বলা হচ্ছে। তবে অপরাধী সদস্য কি ধরনের শাস্তি পাবেন সেটি নির্ভর করবে তদন্তকারী কর্মকর্তার ওপর। তদন্তে বিষয়টি হালকাভাবে উঠে আসলে এক ধরনের সাজা আর পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে এমন হলে ওই সদস্যের চাকরিও চলে যেতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন জানান, একজন পুলিশ সদস্য সামাজিক মাধ্যমে কী কী করতে পারবেন এবং কী কী পারবেন না- তা ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে। এই বিধিনিষেধের মধ্যে যারা ইউনিফর্ম পরে টিকটক করবে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

সার্বিক বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া বিভাগের (এআইজি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমাদের নির্দেশনা রয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন সভায় বিষয়টি নিয়ে বলা হয়ে থাকে। এ নিয়ে পুলিশের শৃঙ্খলা বিভাগের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা কাজ করছেন। কেউ এমন অপরাধে জড়ালেই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।