পুলিশের কবজি বিচ্ছিন্নকারী আসামি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেফতার

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় আসামি ধরতে গিয়ে সম্প্রতি পুলিশ সদস্য জনি খানের কবজি বিচ্ছিন্নের মর্মান্তিক ঘটনায় মূল আসামি কবির আহমদকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) দিনগত রাতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লোহাগাড়ার পাহাড়ি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

রাতে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ১৫ মে সকাল ১০টার দিকে লোহাগাড়া থানার পদুয়া ইউনিয়নের লালারখিল এলাকায় আসামির ধারালো দায়ের কোপে পুলিশ সদস্য জনি খানের হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনায় মূল আসামি সন্ত্রাসী কবিরকে অভিযান চালিয়ে লোহাগাড়ার পাহাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার একজন সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

রাতেই র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে লোহাগাড়া থানাধীন বড়হাতিয়া ইউনিয়নের গহীন পাহাড়ে পুলিশ কনস্টেবল জনি খানের ওপর হামলাকারী কবির আহমদকে গ্রেফতারে অভিযান চালায় র‌্যাব। এসময় র‌্যাব সদস্যদের ওপর গুলি ছোঁড়া হয়। দুর্বৃত্তদের সঙ্গে র‌্যাবের ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়েছে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কবিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানাবো।

গত ১৬ মে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আল মানার হাসপাতালে পুলিশ সদস্য জনি খানের হাতের কবজি টানা ১০ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় জোড়া লাগানো হয়।

অপারেশরের পর আল মানার হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শহিদুল্লাহ বলেন, একজন মানুষের সম্পূর্ণ দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়ে যাওয়া হাতে অনেকগুলো অংশ থাকে। সেগুলোকে আলাদা করে সিরিয়ালি বের করতে হয়। এরপর টানা প্রায় ১০ ঘণ্টার অপারেশনটি করতে হয়েছে। অপারেশনটি ছিল খুবই জটিল।

তিনি বলেন, রোগী এখন পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত। আমি দেখেছি তার হাতের স্বাভাবিক রঙ চলে এসেছে। নার্ভ যেগুলো জোড়া দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও ফাংশন চলে আসতে শুরু করেছে। হাতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় হাতেও উষ্ণতা চলে এসেছে।

রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা কতটুকু রয়েছে। এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. মো. শহিদুল্লাহ বলেন, আমাদের হাসপাতালে এখন পর্যন্ত এমন যেসব রোগীর চিকিৎসা দিয়েছি তারা প্রত্যেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। আশা করছি তিনিও (জনি) শিগগির সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবেন।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. কামরুজ্জামান বলেন, আসামি ধরতে গিয়ে আসামির দায়ের কোপে কব্জি বিচ্ছিন্ন হওয়া পুলিশ সদস্য জনি খানের চিকিৎসার সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছে পুলিশ সদর দপ্তর। তার সুচিকিৎসার জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্দেশনা দিয়েছেন। পুলিশের কল্যাণ ট্রাস্টসহ জেলা পুলিশ থেকেও তার চিকিৎসায় সহায়তা করা হবে। নিজের জীবনকে বাজি রেখে সাহসী কাজের জন্য ভূমিকা রাখায় আর্থিক অনুদানও তাকে দেওয়া হবে। এছাড়া পুলিশ সদর দপ্তর সর্বোচ্চ সহায়তা করবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আসামি কবির আহমদ (৩৫) পদুয়া ইউনিয়নের লালারখিল এলাকার মৃত আলী হোসেনের পুত্র। তিনি এলাকায় বেপরোয়া ও দুর্ধর্ষ হিসেবে পরিচিত। নানা অপরাধে জড়িত তিনি।

লোহাগাড়া থানার এসআই ভক্ত চন্দ্র দত্ত, এএসআই মজিবুর রহমান, কনস্টেবল জনি খান ও শাহাদাত হোসেন অভিযানে অংশ নেন। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কবির আহমদ ধারালো দা দিয়ে কনস্টেবল জনি খানের হাতে কোপ দিয়ে পালিয়ে যান। দায়ের কোপে জনির কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় কবিরের স্ত্রী রুবি আকতারকে গত রোববার রাতে বান্দরবান পার্বত্য জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা লামা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।