এক ফটো সাংবাদিককে মাস্তানের মতো টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়ার ছবি দেখে মনে হচ্ছিল ঢাকা অ্যাটাকের মতোই কোন ছবির পোস্টার। আমি যখন এই ছবি দেখে হতভম্ব তার কিছুক্ষণ আগেই ২৪ বিসিএসের পুলিশের এক বড় ভাই আমাকে ফোন দিয়েছেন।
দারুণ সৎ ওই পুলিশ কর্মকর্তা আমায় বললেন তোমরা যে পথশিশুদের খাওয়ানোর উদ্যোগ নিয়েছো তাতে হাজার দশেক টাকা দিচ্ছি। আমি নিজেও থাকবো বাচ্চাদের খাওয়ানোর দিন। আমি ওই বড় ভাইকে কখনো মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে দেখিনি।
দুটো ঘটনা মিলিয়ে আমি মনে মনে ভাবছিলাম পুলিশের কত কত অর্জন ম্লান হয়ে যায় কিছু খারাপ সদস্যের কারণে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ পুলিশকে কতোটা ভয় পায় সেটা যদি আমাদের পুলিশ সদস্যরা জানতেন তারা চমকে উঠতেন। চাইলে তারা কোন জরিপ করে দেখতে পারেন। অনেক পুলিশ সদস্যই বিষয়টা অস্বীকার করার চেষ্টা করেন। তাদের বলবো মানুষ কতোভাবে পুলিশের মাধ্যমে হয়রানি নির্যাতনের শিকার হয় সেটা অনুসন্ধানে আপনাদের কোন টীম যদি মাঠে থাকতো আপনারা হাপিয়ে উঠতেন।
আর আচরণের কথা কী বলবো! মানুষের সাথে সুন্দর আচরণ যে করা যায় এটা আমাদের মাঠে দায়িত্ব পালন করা অধিকাংশ পুলিশ সদস্য বোধহয় জানেনই না।
আপনি গাড়ি বা মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছেন কিংবা রিকশায় চড়ে বাড়ি ফিরছেন, তল্লাশির জন্য আপনাকে থামার নির্দেশ দেওয়ার পর এমনভাবে তারা কথা বলে যেন আপনি কোন সন্ত্রাসী। রাস্তাঘাটে যখন ট্রাক বা অন্য কোন পরিবহন থামানোর কাজটি পুলিশরা করে আপনি কিছুক্ষণ তাদের কাজ দেখলেই ভয়ে কুকড়ে যাবেন।
আর এদেশের হাইওয়ে, পথেঘাটে পুলিশ যখন দায়িত্ব পালন করে এমন কোন অন্ধকারে এমনভাবে তারা দাঁড়ায় যেন মনে হয় তারা শিকার খুঁজছে। সাদা পোষাকে থাকা বা গোয়েন্দা পুলিশের বিরুদ্ধে তো অসংখ্য অভিযোগ। এমনকি পুলিশ সদস্য যদি বিপদে পড়েন তিনিও টের পান পুলিশ কতো ভয়ঙ্কর হতে পারে।
জানি আমার কথা শুনে আমার পুলিশ বন্ধুরা ক্ষেপে গিয়ে বলবেন, পুলিশ কী তবে ভালো কাজ করে না? অবশ্যই করে। পুলিশের ভালো কাজের অসংখ্য উদাহরণ আমি দিতে পারবো। কিন্তু এই সব ভালো কাজ হারিয়ে যায় কিছু খারাপ সদস্যের কাজে। আর এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা আচরণ। অনেক পুলিশের আচরণ সন্ত্রাসীদের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তাদের আচার ব্যবহার দেখলে মনে হয় আশপাশে কেউ মানুষ নয়।
আবার আমাদের সিনেমা নাটকে প্রায়ই দেখানো হয় পুলিশ অফিসার কোন অপরাধী বা সন্ত্রাসীকে কলার টেনে ধরে পেটাতে পেটাতে থানায় নিয়ে আসছে। তারা মনে করে এটাই হিরোগিরি। কিন্তু আইন অনুযায়ী তো পুলিশ সেটা করতে পারে না।
আমি বিশ্বাস করি আমাদের যারা সত্যিকারের দায়িত্বশীল ও নিষ্ঠাবান পুলিশ কর্মকর্তা তারা মোটামুটি আইন মেনেই দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু কিছু কিছু খারাপ পুলিশ সদস্য বোধহয় আসলেই নিজেকে মাস্তান মনে করেন।
আগেই বলেছি আমার অসংখ্য বন্ধু বান্ধব ছোট বড় ভাই পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের অনেকের সততার গল্প মুগ্ধকর। তাদের কাজ, দক্ষতা, দেশপ্রেম, মানবিকতা সবকিছুই দারুণ। এর মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের মতো মানবিক মানুষ আমি দেখিনি।
এই যে সর্বশেষ বন্যা গেলো আমরা বেশ কিছু মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। ওই সময় আমার এক ছোট ভাই উত্তরাঞ্চলের অতিরিক্ত এক পুলিশ সুপার যেভাবে আমাদের পাঠানো সহায়তা অসহায় মানুষের কাছে পোঁছে দিয়েছে আমি কখনো তা ভুলবো না। কোটি টাকার ঘুষের অফার ছেড়ে সাহসকিতার সাথে তদন্ত করছে এমন ঘটনাও জানি। ঢাকার এক পুলিশ কর্মকর্তাকে আমি চিনি যিনি সুযোগ পেলেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। একবার এক ঘটনায় পুলিশের সে সময়ের ভারপ্রাপ্ত এক আইজিপি মহোদয়ের সাথে ঘন্টাখানক আলাপ হয়েছিল। আমি মুগ্ধ হয়ে ছিলাম তার কাজে। মনির ভাইয়ের মতো পুলিশ কর্মকর্তা তো আমাদের গর্ব।
পুলিশের ভালো কাজের এমন অসংখ্য গল্প আমি বলতে পারবো। কিন্তু ওই যে কিছু লোকের খারাপ আচরণ, মাস্তানি ভাব সব অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
আমি জানি সব পেশায় ভালো খারাপ আছে। কিন্তু একজন পুলিশ খারাপ হলে মানুষের ভয়ঙ্কর বিপদ নেমে আসে। অনেকেই ট্রমাটাইজড হয়ে যায়। আর সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশ হয়ে যায় আতঙ্কের নাম।
আমি জানি এসব কিছুর জন্য রাজনীতি একটা বড় ফ্যাক্টর। আমাদের পুলিশ বাহিনীর ওপর যদি রাজনৈতিক চাপ না থাকতো তারা যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারতো এই বাহিনীর পেশাদারিত্ব আরও অনেক বাড়তো। এলাকার সাংসদের সুপারিশে যদি সংশ্লিষ্ট থানার ওসি নিয়োগ হয় তাহলে সেই পুলিশের পক্ষে প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করা কঠিন।
তবে আমি এখনো বিশ্বাস করি আমাদের পুলিশে অসংখ্য মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তা আছেন। তাই পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ আপনারা প্লিজ আমাদের পুলিশকে মানবিক পুলিশ হিসেবে গড়ে তুলুন। সত্যিকারের সেবক হিসেবে গড়ে তুলুন। পুলিশের একজন সদস্যও যেন নিজেদের মাস্তান না ভাবে। আর কোন মুস্তান যদি মাস্তানি করে শত শত পুলিশের ভাবমুর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তবে শুধু প্রত্যাহার না করে এমন শাস্তি দিন যেন আর কেউ এমনটা করার সাহস না করে। মনে রাখবেন এক বালতি দুধ নষ্ট করার জন্য এক ফোটা চনাই যথেষ্ট।
আমি বিশ্বাস করি সবাই মিলে চেষ্টা করলে আমাদের পুলিশ হবে পৃথিবীর সেরা পুলিশ বাহিনীর একটা। সেজন্য সবার আগে প্রয়োজন মানবিক মূল্যবোধ। দোয়া করি সবার মধ্যে সেই বোধ জাগ্রত হোক। আমাদের পুলিশ হোক জনগনের সত্যিকারের বন্ধু।
লেখক : হেড অব প্রোগ্রাম, মাইগ্রেশন ব্র্যাক।
(শরীফুল হাসানের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com