বরিশালে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর পর আইনের এক ছাত্রকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ করছে পরিবার।
আটকের চার দিন পর ওই তরুণের মৃত্যুর কথা পরিবারকে জানায় মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
পুলিশের ভাষ্য, টয়লেটে পড়ে গিয়ে পায়ে রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে তরুণের। তবে স্বজনরা বলছেন, তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
প্রাণ হারানো রেজাউল করিম বরিশাল নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ খান সড়কের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি বরিশাল আইন মহাবিদ্যালয় থেকে এলএলবি পরীক্ষা দিয়ে ফলের অপেক্ষা করছিলেন।
শনিবার রাত ১২টার দিকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান রেজাউল।
তার ফুপা তারেক মিয়া জানান, গত ২৯ ডিসেম্বর রাত নয়টার দিকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় তার ভাতিজাকে।
তারেক জানান, রেজার কাছে দুই জন মাদক বিক্রেতার নাম জানতে চান ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন মাহি। সেখানে স্থানীয় লোকজন ও কয়েক স্বজনও উপস্থিত ছিলেন।
‘রেজা কিছু জানেন না জানালে মহিউদ্দিন নিজের গাড়ির কাছে ফিরে যান। সেখান থেকে আবার এসে রেজার পকেটে হাত দেন। এরপর তার কাছে নেশাজাতীয় ইনজেকশন পাওয়া গেছে বলে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়’, বলেন তারেক।
রেজাউলকে ধরে নিয়ে প্রথমে দেয়া হয় বরিশাল কোতয়ালি থানায়। পরের দিন তাকে আদালতে তোলা হলে পাঠানো হয় বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পাঠানো হয় হাসপাতালে।
বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, ‘৩০ তারিখ এই আসামিকে রিসিভ করি। কারাগারে আসা কাগজে রেজার অসুস্থতার কথা উল্লেখ ছিল। তবে তার দুই পায়ের বাহুর ফাঁক থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এ কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
হাসপাতালে রেজাউলকে দেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দা সুজন। তিনি বলেন, ‘সারা শরীরে জখমের চিহ্ন ছিল। রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল। বিশেষ করে দুই পায়ে স্পষ্ট জমাট রক্তের চিহ্নও দেখেছি। এগুলো নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে, নির্যাতনেই রেজাউলের মুত্যু হয়েছে।’
রেজার বাবা ইউনুস মুন্সী বলেন, ‘এসআই মহিউদ্দিন আমার ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে নিয়ে যায়। তখন রেজা দিব্যি সুস্থ ছিল। পরে জানতে পারি তাকে নাকি গাঁজাসহ আটক করা হয়েছে।
‘এরপর রাত নয়টার দিকে পুলিশ ফোনে জানায়, রেজা বাথরুমে পড়ে গিয়ে তার ব্লিডিং হচ্ছে, হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। কিন্তু ওর সঙ্গে আমাকে দেখা করতে দেয়নি।’
রেজাউলের ভাই আজিজুল করিম বলেন, ‘কোনো অপরাধ ছাড়াই আমার ভাইকে ধরে নেয়া হয়েছে। তাকে নিয়ে আরও দুই ব্যক্তিকে ফাঁসানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ায় তার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর ডিবির এসআই মহিউদ্দিন মাহি নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এই অভিযোগ মিথ্যা। তার বিরুদ্ধে আগেও মাদক মামলা ছিল।’
তিনি বলেন, ২৯ তারিখ রাত সাড়ে ১০টায় রেজাউলকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৩৬ গ্রাম গাজা ও চার অ্যাম্পুল নেশাজাতীয় ইনজেকশনসহ। রাত পৌনে ১২টার দিকে তাকে কোতোয়ালি মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। রাতেই মামলা করা হয় এবং পরের দিন আদালত তাকে কারাগারে পাঠায় থানা।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ হরে কৃষ্ণ সিকদার জানান, রেজাউলকে হাসপাতালে আনার সময় তার রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।
বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে কিছু বলতে রাজি হননি হাসপাতাল পরিচালক বাকির হোসেন।
হাসপাতালের লাশ ঘরে উপস্থিত থাকা বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হবে। এরপর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা নিয়ম অনুযায়ী সুস্থভাবে আদালতে প্রেরণ করেছি। সেখান থেকে তাকে হাজতে পাঠানো হয়েছে। যেহেতু স্বজনরা অভিযোগ করেছে, সেহেতু বিষয়টা খতিয়ে দেখা হবে।’